আইনের তোয়াক্কা না করেই কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে ১১১টি অবৈধ ইটভাটা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:১৬ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০২২ সোমবার
দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামে সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কৃষি জমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ১১১টি ইটভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ইট পোড়ানো লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিসের সার্টিফিকেট এমনকি ভ্যাট-আয়কর প্রদানের কাগজপত্র ছাড়াই ইটভাটার মালিকরা আবাদী জমি ও জনবসতি এলাকাসহ স্কুল-কলেজের পাশে রাত-দিন ২৪ ঘন্টা ইট পোড়ানো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এসব ইটভাটার কারণে জনবসতি, ফসলি জমিসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে ইটভাটা গড়ে উঠায় বিষাক্ত ছাঁই, কালো ধোঁয়ায় ফলন হ্রাসের আশংকায় পড়েছে কৃষকদের শতশত একর আমন ও বোরো আবাদ, রবিশস্য, সুপারি, নারিকেল, আম-জামসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফল। সেই সাথে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে ইটভাটার পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষজন।
গত কয়েকদিনের সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের আজোয়াটারী গ্রামের কৃষি জমিতে মেসার্স ডব্লিউ এ এইস ব্রিকস ফিল্ড, এ বি ব্রিকস, মেসার্স এম এস এইচ ব্রিকস, বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবশ এলাকায় সাইফুর রহমান সরকারি কলেজের পাশে মেসার্স এএমবি, ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের খামারের বাজার এলাকায় মেসার্স কেএমবি এবং শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের জকুরটল এলাকায় মেসার্স জেএমএস নামের ছয়টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এ সকল ইটভাটার একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নাই। পরিবেশ অধিদপ্তরে নামমাত্র আবেদন করে, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। ইটভাটার আয়তন দুই একরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার নিয়ম থাকলেও বিস্তৃত এলাকা দখলে নিয়েছে তারা। ভরাট করেছে পানি নিষ্কাশনের পথ। একই চিত্র জেলার ভুরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারীসহ রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার ইটভাটাগুলোর। ওই সব ইটভাটা সংলগ্ন স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় সরকারি নিময়নীতির তোয়াক্কা করছেন না।
ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষক রফিকুল ইসলাম (৩৮), হজরত আলী (৬২) ও নাগেশ্বরী উপজেলার এগার মাথা এলাকার বিমল চন্দ্র (৪২), জামাল উদ্দিন (৪৫) জানান, ভাটার মালিকরা জমি ভাড়া নিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ করছে। এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় গত ৫ বছর ধরে বোরো এবং আমন আবাদের ফলন বিঘা প্রতি ৬-৭ মন কমে এসেছে। ভাটার কালো ধোয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে সুপারী বাগানের। ধোঁয়ার বিষক্রিয়ায় কয়েক বছর থেকে এই এলাকায় সুপারীর ফলন কমে এসেছে। তাছাড়া আম, কাঁঠাল, নারিকেলসহ বিভিন্ন ফলের ফলনও কমে গেছে। ভাটার মালিকরা ইট পরিবহনের জন্য উঁচু রাস্তা তৈরি ও সেতুর মুখ বন্ধ করায় বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছর এই এলাকার শতশত বিঘা আমন খেত পানিতে তলিয়ে নষ্ট হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলার মেসার্স ডব্লিউ এ এইচ ব্রিকস ফিল্ডের মালিক মোশারফ হোসেন জানান, শুধু আমার ভাটার না জেলার কোন ইট ভাটারই পরিবেশ অধিদপ্তর সহ আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র নাই। প্রতি বছর মালিক সমিতির লোকজনসহ ডিসি অফিসে কথা বলেছি। তারা ভাটা চালনোর মৌখিক অনুমতি দেওয়ায় ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ চলছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, ইতোমধ্যে গত ৮ ডিসেম্বর তিনটি ভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। ওই তিন ভাটার কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তাই তাদেরকে আগামী ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কাগজ দেখাতে না পারলে অবৈধ ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজকালের মধ্যে বাকি তিন ইট ভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, 'এ জেলায় মোট ১১১টি ইটভাটা অবৈধভাবে কৃষি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে। মাত্র ২১টি ইটভাটার কাগজপত্র হালনাগাদ আছে। এর মধ্যে ২০ থেকে ২৫টি ইট ভাটার মালিক আবেদন করেছেন। তবে ৫১টি ইটভাটার কোন ধরনের বৈধ কাগজ নেই। আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, যে সকল ইটভাটার মালিকদের বৈধ কাগজপত্র নেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
কেআই//