ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

বিষ্ময়কর কর্ণফুলি টানেলের ভেতর বাহির (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:১৪ এএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ মঙ্গলবার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। যা বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলী টানেল নামেও পরিচিত। আনোয়ারা উপজেলাকে চট্টগ্রামের মূল শহরের সাথে যুক্ত করা এই টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৪৩ কিলোমিটার। 

শুধু বাংলাদেশ নয় দক্ষিণ এশিয়াতেও বিষ্ময় এই বঙ্গবন্ধু টানেল। এই মহাদেশে নদী তলদেশে প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ এটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। আর চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড প্রকল্পটি ঠিকাদারী পেয়েছে। 

টানেলের কাজ ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। আগামী ২০২৩ জানুয়ারী মাসে টানেলটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। চলুন দর্শক উদ্বোধনের আগেই আমরা দেখে নিই টানেলের ভেতরের রুপ। আর দেখতে দেখতেই জানাবো বিষ্ময়কর এই টানেলের অবাক করা সব তথ্য। 

২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং'কে সাথে নিয়ে এই মেগা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু টানেলটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণাধীন এই সুড়ঙ্গ চট্টগ্রাম শহরপ্রান্তের নেভাল একাডেমির পাশ দিয়ে শুরু হয়েছে যা শেষ হয়েছে নদীর দক্ষিণ পাড়ের আনোয়ারা প্রান্তের চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নদীর দক্ষিণ প্রান্তে। ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটারের এই টানেলে দুই পাশের অংশ বাদ দিলে শুধু টিউবের দৈর্ঘ্য ২.৪৫ কিলোমিটার। 

টানেলের দুই প্রান্তেই রয়েছে দুটো ফ্লাড গেট। যা বন্যা জলোচ্ছ্বাসসহ সব ধরণের প্লাবনে টানেলে পানি ঢোকা থেকে রক্ষা করবে। একটু পর পরই রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা, অগ্নি নিরোধক সিস্টেম। কোনো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের জন্য রয়েছে তিনটি ক্রস প্যাসেজ যার মাধ্যমে এক টানেল থেকে অন্য টানেলে যাওয়া যাবে। 

দুই টিউবের এই টানেলে ৪টি লেনে হালকা যান থেকে শুরু করে ট্রাক-লরীসহ সব ধরণের ভারী যানবাহন চলাচল করবে। প্রতিটি টিউবের ব্যাস ১১ মিটার। প্রথম টিউবটি বানাতে ১৭ মাস সময় লাগলেও পরেরটি বানাতে লেগেছে মাত্র ৯মাস। 

সেতু কর্তৃপক্ষ এর আগে পদ্মা সেতুর মতো চ্যালেঞ্জে সফল হলেও টানেল বানানোর প্রযুক্তি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। টানেলের মধ্যখানের অবস্থান নদীতল থেকে ২৫ মিটার নিচে। তবে বহু ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টানেল নির্মাণ প্রায় সম্পূর্ণ হতে চলেছে। 

সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটির মোট নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৯হাজার ৮৮০ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশে সরকারের অর্থ সহায়তা থাকবে তিন হাজার ৯৬৭ কোটি টাকার মতো। আর চীন পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকার বেশি অর্থ সহায়তা দিচ্ছে। যা ২০২৫ সাল থেকে কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। 

কর্ণফুলী টানেলটি মূলত আনোয়ারা উপজেলাকে চট্টগ্রামের মূল শহরের সাথে যুক্ত করবে। কক্সবাজারের সঙ্গে দূরত্ব কমেছে ৪০ কিলোমিটার। টানেলের দুই পাশে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি সংযোগ সড়ক আছে। সঙ্গে আছে ৭শ ২৭ মিটার দীর্ঘ একটি ওভারব্রীজ।

সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, টানেল নির্মাণ শেষ হলে চট্টগ্রাম শহরকে চীনের সাংহাই শহরের আদলে “ওয়ান সিটি টু টাউন” বা “এক নগর দুই শহর” এর মডেলে গড়ে তোলা হবে।  

এই টানেল চালু হলে সেটি দেশের জিডিপিতে বার্ষিক শূণ্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে।

এসবি/