ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

ফ্রান্সের বিপক্ষে ইতিহাস রচনা করতে কীভাবে প্রস্তুত মরক্কো

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৪৯ পিএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ বুধবার

কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ফ্রান্স ও মরক্কো। একদিকে দুই বারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, এবারও কিলিয়ান এমবাপের দুর্দান্ত নৈপূণ্যে সকল বাধা অতিক্রম করে এসেছে সেমিফাইনাল পর্যন্ত। অন্যদিকে মরক্কো, এই দলটি যাই করবে এখন সেটাই ইতিহাসের পাতায় বরণীয় ও স্মরণীয় হিসেবে লেখা থাকবে।

প্রথম আরব এবং প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে মরক্কো এখন সেমিফাইনালে।

এর আগে কোনও আরব কিংবা আফ্রিকান দেশ ফিফা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেনি।

মরক্কোর এই দলটির দিকে তাকিয়ে থাকবে বিশ্বের নানা প্রান্তে বসবাসরত আফ্রিকান ফুটবল সমর্থকরা, আরব ফুটবল সমর্থকরা, ফুটবল পিয়াসীরা তাকিয়ে থাকবে নতুন কোনও চমক আসছে কি না তা দেখতে।

ফ্রান্স শক্তিশালী কিন্তু মরক্কো সহজ হবে না, এই দলটি ক্রোয়েশিয়ার সাথে ড্র করেছে, স্পেন, বেলজিয়াম, পর্তুগালকে হারিয়েছে।

তবে দলটার ফুটবলারদের দক্ষতাও নজরকাড়া, প্রতিপক্ষ ফুটবলারদের পা থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও গোল হজম করেনি মরক্কো।

একটি গোল কানাডার বিপক্ষে হজম করেছিল মরক্কো, সেটা ছিল আত্মঘাতী গোল।

মরক্কোর দলটিতে বেশ কজন ক্লাব তারকাও আছেন, হাকিম জিয়েশ চেলসির হয়ে খেলেন এর আগে আয়াক্সের হয়ে তিনি ফুটবল বিশ্বে নজর কেড়েছিলেন। আশরাফ হাকিমি বিশ্বের অন্যতম সেরা উইংব্যাক এখন।

মাদ্রিদে জন্ম নেয়া এই তারকা ফুটবলার এখন ফ্রান্সের প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের হয়ে খেলেন, কিলিয়ান এমবাপের সতীর্থ।

মরক্কো কীভাবে এই পর্যায়ে এল, এমন একটি প্রশ্নের জবাবে কোচ ওয়ালিদ রাগরাগি বলেন, আমরা একটা দলীয় ঐক্য গড়ার চেষ্টা করেছি। ফুটবলারদের অবশ্যই সম্পূর্ণ অবদান আছে একইসাথে এই দলের স্পিরিট দলটাকে এই পর্যায়ে আসতে সাহায্য করেছে।

“আমরা কৌশলগতভাবে সোজাসাপ্টা, আমরা সঙ্ঘবদ্ধ এবং আত্মবিশ্বাসী।”

“আমরা ফাইনালে খেলতে চাই, আমরা এখানে আবেগে ভাসছি না। আমরা প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে সেমিফাইনালে খেলে সন্তুষ্ট নই। আমরা আরও দূরে যেতে চাই।”

সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ ফ্রান্সকে বিশ্বের সেরা দল বলছেন মরক্কোর কোচ।

“আমরা বিশ্বের সেরা দলের মুখোমুখি হচ্ছি। আমরা জানি আমরা কী চাই এই ম্যাচ থেকে। এটা একটা ম্যাচ কেবল।”

“আপনার যদি প্যাশন, আকাঙ্খা ও মনযোগ থাকে এবং আমাদের সাথে প্রবল সমর্থন আছে। আমর বিশ্বাস করি আমরা যে কোনও কিছু অর্জন করতে পারবো।”

মরক্কোর আরেকটা বড় শক্তির জায়গা দলটির প্রবল সমর্থন।

কাতারে বিশ্বকাপ, মুসলিম কোনও দেশে এই প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজিত হচ্ছে এবং মরক্কো সেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলছে, মরক্কোর প্রতি ম্যাচেই প্রচুর সমর্থকরা স্টেডিয়ামে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছেন।

লাল রঙের আধিক্য টেলিভিশনেই লক্ষ্যণীয় থাকে মরক্কোর ম্যাচগুলোতে।

মরক্কোর কোচ নিজের নামের পাশে খুব বেশি কৃতিত্ব রাখতে আগ্রহী নন, তবে মরক্কোর ফুটবলাররা তাকে পিতার মতো মনে করেন।

ইলিয়াস শায়ের বলেন, “আমি মনে করি তিনি এই টুর্নামেন্টের সেরা ম্যানেজার। শুধু কোচ হিসেবে নন, তিনি ভালো মানুষও।”

“যখনই আমাদের কোনও সমস্যা হয়েছে তখনই মনে হয়েছে আমরা যেতে পারবো তার কাছে। সেই মুহূর্তে তিনি আমাদের বাবার মতো, বড় ভাইয়ের মতো, কেবল কোচ নন তিনি। কাল আমরা প্রমাণ করতে চেষ্টা করবো তিনিই সেরা লোক এই চাকরির জন্য।”

মরক্কোর দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস ও শক্তিশালী রক্ষণভাগের সামনে এখন ফ্রান্স।

ফ্রান্স বর্তমান বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন।

আর দুই ম্যাচ জিতলে ফ্রান্স ১৯৬২ সালের ব্রাজিল দলের পর টানা দুই বিশ্বকাপে জয়ী দ্বিতীয় দল হয়ে যাবে।

সম্প্রতি ইতালি, স্পেন, জার্মানি তিনটি দলই বিশ্বকাপ জয়ের পরের বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়েছে, সেখানে ফ্রান্স দাপট দেখিয়ে সেমিফাইনাল খেলছে।

শেষবার ১৯৯৮ সালে ব্রাজিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সেমিফাইনাল, এমনকি ফাইনালে খেলেছিল।

দিদিয়ের দেশম ফ্রান্সের কোচ, তিনি ইতিহাস নিয়ে ভাবতে রাজি নন।

মরক্কোর ব্যাপারে সতর্ক ফ্রান্স।

ফ্রান্সের অধিনায়ক হুগো লরিস সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “মরক্কো এখানে ফাইনালে যাওয়ার জন্যই এই পর্যন্ত এসেছে। এটা অবশ্যই মরক্কোর সফলতা কিন্তু তারা এখানে থামবে না।”

স্টেডিয়ামের কথাও বলেছেন ফ্রান্সের অধিনায়ক, স্টেডিয়ামে মরক্কোর যে সমর্থন থাকবে তাতে বৈরী একটা পরিবেশে খেলতে হবে এটুকু নিশ্চিত তিনি।

“আমরাও এমনভাবে খেলবো যাতে আমাদের কোনও আফসোস না থাকে।”

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসবি/