সুন্দরবনের দস্যুরা কি নতুন করে মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:৩৬ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ শুক্রবার
বাগেরহাট অঞ্চলের সুন্দরবন থেকে অপহরণ হওয়া অন্তত পনেরজন জেলে ডাকাতদের হাত থেকে মুক্তির পর এখন পুলিশের হেফাজতে। বেশ কয়েক বছর পর বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় নতুন করে দস্যুদের তৎপরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বাগেরহাটের পুলিশ জানিয়েছে সুন্দরবন থেকে গত সপ্তাহে অপহরণের শিকার হওয়া অন্তত পনের জন জেলেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
যদিও জেলেদের কয়েকজন জানিয়েছেন যে তারা মুক্তিপণ দিয়ে ডাকাতদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
সুন্দরবনে ডাকাতরা জেলেদের যে দলটিকে তুলে নেয় সে দলেই ছিলেন শেখ মোহাম্মদ মারুফ বিল্লাহ। তিনি বলছেন সুন্দরবনের ভেতরে হরিণটানায় ছিলেন তারা। সেখানে রাতের অন্ধকারে ডাকাতরা আসে এবং তাদের হাতে ছিলো পাইপগান।
“পুরো একদিন তারা রাখলো। এরপর বললো একজন থাকো , আরেকজন যাও। একজনের মুক্তিপণ পনের হাজার টাকা এবং আরেকজনের চল্লিশ হাজার। একজনের মাধ্যমে সে টাকা দিতে বললো। ওই টাকা দেয়ার পর হরিণটানা টহল ফাঁড়িতে তুলে দিলো”।
এ ধরণের ঘটনা একটিই নয় বরং গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে সুন্দরবন অঞ্চলের বেশ কিছু জায়গায় এমন ডাকাতির খবর পাওয়া গেছে।
পনেরই ডিসেম্বর রাতে নতুন একটি ডাকাত দল সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের হরমাল খাল ও বেরির খালে কাঁকড়া শিকার করার সময় হামলা চালিয়ে একদল জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং মুক্তিপণ দাবি করে।
তবে ফিরে আসা জেলেরা জানিয়েছেন যে এখনো একটি ট্রলার সহ জেলেরা ডাকাতদের নিয়ন্ত্রণে আছে।
মংলার সাংবাদিক আবু হোসাইন সুমন বলছেন সুন্দরবন অঞ্চলে এখন কাকড়া ধরার মৌসুম চলছে এবং সে কারণেই ওই অঞ্চলে ডাকাতদের তৎপরতা বেড়েছে বলে মনে করছেন তারা। যদিও সুন্দরবন অঞ্চলকে ২০১৮ সালের নভেম্বরে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেছিলো আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
ওই এলাকার ৩২টি দস্যু বাহিনীর তিনশোর বেশি সদস্য আত্নসমর্পণ করার পর ২০১৮ সাল থেকে র্যাব,পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় পহেলা নভেম্বর দিনটিকে 'দস্যুমুক্ত সুন্দরবন' দিবস হিসাবে পালন করে আসছে।
এসব দস্যু বাহিনীর আত্মসমর্পনে ভূমিকা রেখে আলোচনায় আসা ঢাকার সাংবাদিক মোহসীন-উল হাকিম বলছেন পেশাদার ডাকাত গোষ্ঠীগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেলেও গত চার বছর ধরেই এসব কার্যক্রম শুরুর করার জন্য ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও চেষ্টাও করছিলো কিছু গোষ্ঠী।
“এ দফায় আসলে ভেতরে কি হয়েছে তা নিয়ে আমি এখনো নিশ্চিত নই। তবে এ ধরণের চেষ্টা থাকে কারণ সুন্দরবনে দস্যুতার পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে কখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।" তবে সুন্দরবন অঞ্চল সুরক্ষায় কাজ করা কোস্ট গার্ড অবশ্য বলছে এবার যাদের উদ্ধার করা হয়েছে তাদের জন্য কোনো মুক্তিপণ দিতে হয়নি।
আর যারা এর পেছনে আছে তাদের ধরতে অভিযান এখনো চলমান আছে বলেও জানিয়েছেন কোস্ট গার্ডের মুখপাত্র লেঃ কমাণ্ডার মামুনুর রহমান। তবে জেলেসহ সুন্দরবনের ডাকাত গোষ্ঠী গুলো সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তারা বলছেন হঠাৎ করে দু একটি ডাকাত গোষ্ঠীর সক্রিয় হবার পেছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা দরকার।
আবার এবারের তৎপরতায় নতুন কোনো ডাকাত গোষ্ঠী সম্পৃক্ত নাকি পুরনোদের কেউ কেউ আবার সংঘটিত হবার চেষ্টা করছে সেটিও খুজে বেরা এখন জরুরি।
তবে পুলিশ বলছে সে লক্ষ্যেই ডাকাতদের হাত থেকে ফিরে আসা জেলেদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছেন তারা।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসবি/