ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১০ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২৪ ১৪৩১

আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক পদটি গুরুত্বপূর্ণ কেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:২৫ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ শুক্রবার

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এবারের এই সম্মেলনে প্রায় সাত হাজার কাউন্সিলর ছাড়াও ডেলিগেট ও অতিথি মিলিয়ে এক লাখেরও বেশি নেতা, কর্মী ও সমর্থক যোগ দিবেন বলে আশা করছেন দলটির নেতারা।

তবে সম্মেলনের মাধ্যমে দলটির যে নতুন কমিটি গঠিত হওয়ার কথা রয়েছে সেখানে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের থাকছেন কি-না কিংবা তাকে না রাখা হলে কে হতে পারেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সেটিই এখন দলটির কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বড় কৌতূহলের বিষয়।

কিন্তু কেন শেখ হাসিনার প্রায় একক নেতৃত্বে পরিচালিত এই দলটির সাধারণ সম্পাদক পদ এতো গুরুত্বপূর্ণ এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলছেন দলের সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা অনেকটা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মতো।

“দলীয় সভানেত্রী পারিষদদের সাথে আলোচনা করে যে পলিসি নির্ধারণ করেন সেটি বাস্তবায়নের পাশাপাশি নেতা কর্মী ও সভানেত্রীর মধ্যে সমন্বয়ের কাজটি তাকে করতে হয়। মাঠে থেকে কর্মকাণ্ড তদারকি করতে হয়। আবার সাধারণ সম্পাদক দলেরও মুখপাত্র। অন্যদিকে রাজনৈতিক কারণে নেত্রী অনুপস্থিত থাকলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সাধারণ সম্পাদককেই নেতৃত্ব দিতে হয়,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মিস্টার মাহমুদ।

১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ গঠিত হলেও এটি শক্ত ভিত্তি পেতে শুরু করেছিলো ১৯৫৩ সাল থেকে পরবর্তী তের বছরে শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক থাকার সময়টিতে। মূলত এ সময়েই মিস্টার রহমান ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করেছিলো।

 এরপর দলটির সাধারন  সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে তাজউদ্দিন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন।

 স্বাধীনতার পর প্রয়াত জিল্লুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও আব্দুল জলিল বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০৬ সালে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে তখনকার সরকারি দল বিএনপির সাথে আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মিস্টার জলিল। 

 পরে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে মিস্টার জলিল আটক হওয়ার পর সামনে উঠে এসেছিলেন প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

 ওই সেময় শেখ হাসিনাকে আটকের বিরুদ্ধে ও দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে জনমত তৈরিতে মিস্টার ইসলামের ভূমিকা দলে প্রশংসিত হয়েছিলো ও পরে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ২০১৬ সালের সম্মেলনে প্রথমবার সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের।

 এখন নতুন নির্বাচন হবে এক বছরের মধ্যেই এবং এ অবস্থায় তাকেই রাখা হবে নাকি অন্য কেউ এ দায়িত্ব পাবেন সেটি মূলত নির্ভর করছে দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন বলছেন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কাঠামোতে সাধারণ সম্পাদক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলেই বরাবরই রাজনৈতিক সংকটের সময়ে সাধারণ সম্পাদককেই আওয়ামী লীগের হয়ে প্রকাশ্যে মূল দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

“একটা সময় সাধারন সম্পাদক হিসেবেই শেখ মুজিবুর রহমান তার দল আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমেই জাতিকে প্রস্তুত করেছিলেন স্বাধীনতার জন্য। আবার দেখুন স্বাধীনতার পর যখনই দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বিপর্যয়ে পড়েছে তখনি দলটির সাধারণ সম্পাদকে কৌশলী ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হয়েছে”।

সবশেষ ওয়ান ইলেভেনের পরেও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কর্মতৎপরতার উদাহরণ দিয়ে জোবাইদা নাসরীন বলছেন যে আওয়ামী লীগে শীর্ষ নেতার উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদকই হয়ে দাড়ান দলটির কাণ্ডারি।

অর্থাৎ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে উপদেষ্টা পরিষদ ও সভাপতি মন্ডলীতে অনেক অভিজ্ঞ নেতা থাকলেও বিশ্লেষকদের মতে দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম আসলে পরিচালিত হয় সাধারণ সম্পাদককে ঘিরেই।

এবারের সম্মেলনেও যিনি সাধারণ সম্পাদক পাবেন তাকেই আগামী নির্বাচনের জন্য যেমন সারাদেশে তার দলকে প্রস্তুত করতে হবে এবং আবার একই সাথে তিনিই বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবেলাতেও নেতৃত্ব দিবেন।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকাসহ নানা কারণে দলটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে বলে অনেকে যে দাবি করেন তা থেকে দলকে বের করে আনাও হবে নতুন সাধারণ সম্পাদকের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

এসব কারণেই এ পদটি আওয়ামী লীগের জন্য বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসবি/