ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

অবহেলা-অপমানের শিকার যুদ্ধশিশুরা (ভিডিও)

শাকেরা আরজু, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২৭ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ শনিবার

স্বাধীন দেশে যুদ্ধশিশুরা পারিবারিক, সামাজিক, এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবেও অবহেলার শিকার হয়েছে। যুদ্ধ-সন্তানদের অনেকেই মায়ের আশ্রয়টুকুও পায়নি। অনেকে দেশান্তরিত হয়েছে দত্তক হিসেবে। আর যারা দেশে থেকে গেছেন পরিচয়ের কারণে প্রতিনিয়ত জুটেছে অবহেলা, অপমান ও নিগ্রহ। 

হবিগঞ্জের মাজেদা বেগম, হানাদারদের ভয়ে একটি গর্তে লুকিয়ে পড়েন। সেই গর্ত থেকে বের করে কায়সার বাহিনী পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দেয় তাকে। ৮ থেকে ১০ দিন চলে তার উপর বর্বরতা।  এক পর্যায়ে কায়সার বাহিনী তাকে গ্রামে ফেলে রেখে চলে যায়। 

স্বাধীনতার পর জন্ম নেয় কন্যা সন্তান শামসুন্নাহার। যুদ্ধশিশু শামসুন্নাহারকে নিয়ে মাজেদার নতুন লড়াই। মা-মেয়ের সমাজে জায়গা হয় না। যুদ্ধশিশু বলে বিয়ের একমাসের মধ্যেই তালাক দেয় স্বামী। ফিরে আসেন মায়ের কাছে। 

মানবতাবিরোধী অপরাধে কায়সারের মামলায় তদন্তে উঠে আসে সাক্ষী মাজেদা বেগমের জীবন যুদ্ধের কথা। সরকার থেকে ভাতা পাচ্ছেন তা দিয়েই চলছে মা-মেয়ের জীবন। 

ফোনো মাজেদা বেগম বলেন, “শামসুন্নাহার আমার কাছে ১৯ বছর ধরে। একটি বাড়ি করে দিলে ভালো হতো।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম বলেন, “কাগজে যে সমস্ত কথাগুলো তাদের পক্ষে আসে, সেগুলো বাস্তবে রূপ পেতো তাহলে তাদের এতো মানবেতর জীবন যাপন করতে হতোনা।”

ট্রাইব্যুনাল কায়সারের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, একাত্তরে যেসব নারী ধর্ষিত হয়েছেন এবং যুদ্ধশিশু হিসেবে যাদের জন্ম হয়েছে তারা জাতীয় বীর। সমাজ ও রাষ্ট্র কেউই তাদের প্রতি মনোযোগ দেয়নি। 

তদন্ত কর্মকর্তা মনোয়ারা বেগম বলেন, “ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণে সাক্ষী মাজেদা বেগম ও যুদ্ধ শিশু শামছুন্নাহারের ব্যাপারে কিছু দায়বদ্ধতা ট্রাইব্যুনাল সুন্দরভাবে তুলে ধরেছে।”

বাঙালি জাতির হাজার বছরের স্বাধীনতা সংগ্রাম পূর্ণতা পেয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। ৪ লক্ষাধিক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। এদের মধ্যে অনেকেই গর্ভধারণ করেন। সেসময় বিদেশী ডাক্তাররা চিকিৎসা দিয়েছিলেন নির্যাতিত নারীদের। অস্ট্রেলিয় চিকিৎসক ডা. জিওফে ডেভিস  ১ লাখ ৭০ হাজার নারীর অ্যাবশন করেছিলেন।

কিশোর মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ড. সাজিদ হোসেন বলেন, “ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে যে গণধর্ষণ পরিচালিত হয়েছিল তার বিচার করা। এখানে প্রয়োজন, আমাদের নতুন প্রজন্মকে এই অতি বাস্তব নির্মম চিত্রটি সম্পর্কে সচেতন করা রাখা।”
    
১৯৭২ সালে রেডক্রসের মাধ্যমে প্রথম ১৫ জন যুদ্ধশিশুকে দত্তক নেয় কানাডার দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। 

ড. সাজিদ হোসেন বলেন, “রায়ান বাধন দ্বিতীয়বার যখন বাংলাদেশে আসেন তখন বলেছিলেন- আমি বার বার বাংলাদেশী আসি আমার মাকে খোঁজার জন্য। খুব ভালো করেই জানি, আমি আমার মাকে কখনই খুঁজে পাবো না। কিন্তু মাকে খোঁজার জন্য যে বাংলাদেশে আসি এটুকুই আমার সম্বল।”

স্বাধীনতার ৫১ বছরেও কাগজে কলমে ছাড়া যুদ্ধশিশুদের বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষপই নেয়া হয়নি। 

এএইচ