১৭ বছর পর ঘরের মাঠে প্রোটিয়াবধের স্বাদ নিলো অজিরা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৩৬ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:৪২ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার
চোটের কারণে বোলিং করতে পারেননি ক্যামেরন গ্রিন। আঙুলে চোট নিয়েই বল করতে হয় মিচেল স্টার্ককে। অজিদের বোলিং আক্রমণে তাই ঘাটতি ছিলোই। তবুও তাড়নায় কমতি ছিলো না। সব সীমাবদ্ধতাকে সঙ্গী করেই গুঁড়িয়ে দিলো দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটিং। বিশাল জয়ে প্যাট কামিন্সের দল নিশ্চিত করে ফেলল সিরিজও।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) মেলবোর্ন টেস্টের চতুর্থ দিনে ইনিংস ও ১৮২ রানের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়লো অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দেশের মাঠে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়।
মজার ব্যাপার হলো, প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এর চেয়েও বড় ব্যবধানের জয় তাদের আছে চারটি। তার সবকটিই অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেই! আর এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ২-০তে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। সেইসঙ্গে ১৭ বছর পর প্রোটিয়াদের বিপক্ষে নিজ মাঠে সিরিজ জিতলো স্বাগতিকরা।
দেশের মাঠে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তাদের সর্বশেষ সিরিজ জয় ছিল সেই ২০০৫-০৬ মৌসুমে। তখন ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয় রিকি পন্টিংয়ের দল। এরপর তিন দফার অস্ট্রেলিয়া সফরে সিরিজ জিতেই ফিরছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এবার সেই জয়ের ধারায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ালেন কামিন্সরা।
ম্যাচের ভাগ্য মূলত নিশ্চিত হয়ে যায় অজিদের প্রথম ইনিংসেই। চতুর্থ দিনে দেখার ছিল, কতটা লড়াই করতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও তারা লড়াই করতে পারেনি সেভাবে। অজিদের সীমিত বোলিং আক্রমণের সামনেও এক টেম্বা বাভুমা ছাড়া দাঁড়াতে পারেননি কেউই।
আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটার সারেল এরউয়ি ও থিউনিস ডি ব্রুইন অবশ্য দিনের শুরুতে কিছুটা প্রতিরোধের ইঙ্গিত দেন। কয়েক দফায় ব্যাটের কানায় বল লাগলেও কোনোরকমে তারা কাটিয়ে দেন ঘণ্টাখানেক। এরপরই চোটাক্রান্ত আঙুল নিয়েই আঘাত হানেন মিচেল স্টার্ক। তার ইয়র্কারে ২১ রানে এলবিডব্লিউ হয়ে যান এরউয়ি। সিরিজের চার ইনিংসে প্রথমবার ২০ ছুঁতে পারলেন এই ওপেনার।
এরপর ডি ব্রুইন (২৮) আউট হতেও সময় লাগেনি। স্কট বোল্যান্ডের বাড়তি লাফানো বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ নেন স্টিভেন স্মিথ। এতেই টেস্ট ক্রিকটে দেড়শ ক্যাচ পূর্ণ হয় তার। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডারদের (নন-কিপার) মধ্যে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন কেবল রিকি পন্টিং, মার্ক ওয়াহ, অ্যালান বোর্ডার ও মার্ক টেইলর।
লাঞ্চের আগে আরও একটি উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ট্রাভিস হেডের দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে সরাসরি থ্রোতে রান আউট খায়া জোন্ডো (১)। এরপর বাভুমা ও কাইল ভেরেন্নে মিলে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন। ইনিংসের একমাত্র অর্ধশত রানের জুটিও গড়েন তারা।
লাঞ্চের পরপরই ৩৩ রানে ভেরেন্নেকে ফিরিয়ে ৬৩ রানের এই জুটি থামান বোল্যান্ড। এরপর কেবল শেষের অপেক্ষা। প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা মার্কো জানসেনকে এবার ৫ রানে বিদায় করেন লিওন। লড়িয়ে ইনিংস খেলা বাভুমার শেষটা হয় হতাশায়। লিওনকে স্লগ সুইপ খেলে উইকেট উপহার দেন ১৪৪ বলে ৬৫ রান করা এই ব্যাটার।
শেষ দিকে লুঙ্গি এনগিডি ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৯ রান করে দলের স্কোর ২০০ পার করান। যার ফলে টানা সাত ইনিংস পর দুইশ ছুঁতে পারল দক্ষিণ আফ্রিকা!
এনগিডিকে বোল্ড করেই ম্যাচ শেষ করে দেন স্টিভেন স্মিথ। লেগ স্পিন কিংবদন্তি প্রয়াত শেষ ওয়ার্নের স্মরণে নানা আয়োজনের টেস্ট ম্যাচের শেষটা হলো লেগ স্পিন দিয়েই।
ম্যাচ শেষে অজিরা মাঠ ছাড়েন সবার সামনে ওয়ার্নারকে রেখেই। বাজে ফর্মের কারণে শততম টেস্ট ম্যাচটিতে এই ওপেনার মাঠে নেমেছিলেন ক্যারিয়ার শেষের ঝুঁকিকে সঙ্গী করে। কিন্তু প্রবল চাপের মধ্যেও উপলক্ষটা রঙিন করেন দুর্দান্ত ডাবল সেঞ্চুরিতে। নিশ্চিত করেন ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত করারও। ম্যাচের সেরাও তিনিই।
এদিকে, এই ম্যাচ জিতে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল প্রায় নিশ্চিত করেই ফেলল শীর্ষে থাকা অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে হলে জিততেই হবে পরের টেস্টে। সিডনিতে সেই টেস্ট শুরু হবে আগামী ৪ জানুয়ারি।
এনএস//