ফলের মহারাজ কাঁঠাল, জেনে নিন কেনো?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:২৪ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৬:২৮ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার
চলছে শীতকাল, অপেক্ষা গ্রীষ্মের। গ্রীষ্ম মানেই মধুমাস, বিভিন্ন রসালো ফলের আগমণ। তবে এবছর গ্রীষ্ম না আসতেই গ্রীষ্মের লোভনীয় ফল কাঁঠাল আলোচনার কেন্দ্রে। সম্প্রতি কাঁঠালের বার্গার বানানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে হয়তো অনেকেই অবাক হয়েছেন, যে কারণে কাঁঠাল ইস্যু এখনো আলোচ্য। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শের ভীত যে কতটা শক্ত, চলুন সেটিই দেখে নিই।
দেশি ফল বলে নাক সিঁটকাবেন না! এটিই আমাদের জাতীয় ফল, আর জাতীয় ফল হওয়ার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণও রয়েছে। কাঁঠালই দেশের একমাত্র ফল যেটির কোনো অংশই ফেলে দেওয়ার নয়। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বলছেন, এর রোয়া, বীজ, পাতা, খোসা থেকে শুরু করে সবটাই কোনো না কোনো কাজে ব্যবহার হয়। আর মৌসুমি এই ফলের দামও অনেক কম।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলামের উদ্যোগে এই ফলের বাণিজ্যিক চাষের চেষ্টা চলছে। তিনি মূলত ১২ মাসি কাঁঠালের জীবন রহস্য উন্মোচন করেছেন। এরমধ্যদিয়েই কাঁঠালের বাণিজ্যিক চাষ সম্ভব।
অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশে শুধু গ্রীষ্মকালে দুই থেকে তিন মাস কাঁঠাল পাওয়া যায়। ফলে এ সময় বাজারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় আর দামটাও কমে যায়। এছাড়া সুষ্ঠু বিতরণ, বিপণন ও সংরক্ষণের অভাবে অনেক কাঁঠাল নষ্টও হয়। কিন্তু বারোমাসি কাঁঠাল চাষ হলে এবং বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হলে এর বিপণন, বিতরণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে। এতে একদিকে নষ্ট হবে কম এবং চাহিদা থাকবে বারোমাস।“
কাঁঠালের রপ্তানি বাজারও ভালো বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম। বর্তমানে এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড কাঁঠাল ও এই প্রজাতির ডুরিয়ান ফল রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করছে বলেও জানান তিনি। এক্ষেত্রে শুধু ফলই নয়, ফলটি প্রক্রিয়াজাত করেও রপ্তানি করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
সবজি হিসেবে খেতে পারেন কাঁচা কাঁঠাল। কাঁচা কাঁঠাল দেশের অনেক অঞ্চলেই খুব জনপ্রিয় একটি সবজি। ছোট অবস্থায়, অর্থাৎ কোষ ও আঁটি পরিপক্ব হয়নি এমন ধরনের কাঁঠালের ত্বক বা চামড়া ও মজ্জা বাদে বাকিটা দিয়ে এঁচোর রান্না করা হয়। ভালোভাবে মসলা দিয়ে রান্না করলে খেতে মাংসের মতোই লাগে। তাই এই খাবারটি অনেক নিরামিষভোজীর কাছে মাংসের উত্তম বিকল্প হিসেবে গ্রাহ্য।বসন্তকাল থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত কাঁচা কাঁঠালের তরকারি খাওয়া যায়। আবার কেটে ডিপ ফ্রিজে রেখে খাওয়া যায় সারাবছর।
কাঁঠালের বিচিও অত্যন্ত পুষ্টিকর। কাঁঠালের বিচি হাই প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ। অত্যন্ত শক্তিশালী একটি প্রোটিন এতে পাওয়া গেছে, বিশেষজ্ঞরা যাকে এইডসের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন।
কাঁঠালের বিচি খেতেও খুব উপাদেয়। আঁটি রোদে শুকিয়ে নিয়ে ভেজে বা পুড়িয়ে বাদামের মতো খাওয়া যায়। আবার মিক্সড ভেজিটেবল কিংবা ভর্তা করেও খাওয়া যায়।
এছাড়াও, পানি ও তেল শোষণ করার ক্ষমতা থাকায় কাঁঠালের আঁটি থেকে তৈরি আটা গমের আটার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। এছাড়া কাঁচা কাঁঠাল থেকে চিপস এবং পাকা কাঁঠালের জ্যাম ও জেলি তৈরি সম্ভব।
আর প্রধানমন্ত্রী যে কাঁঠালের বার্গারের পরামর্শ দিয়েছে সেটিও সম্ভব অনায়াসে। বার্গারের মাংসের পেটির বদলে কাঁচা কাঁঠালের কাবাব কিংবা পেটি তৈরি করে তা দিয়ে বার্গার তৈরি সম্ভব। এছাড়া কাঁঠাল থেকে স্বাস্থ্যপযোগী প্রোটিন আলাদা করে তা থেকে সসেজ তৈরি করেও তা দিয়ে বার্গার বানানো সম্ভব বলে জানান অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম।
কাঁঠালে এমন কিছু ভিটামিন ও মিনারেল আছে যা আপেল, এপ্রিকট, কলা বা অ্যাভোকেডোর মত পুষ্টিকর ফলেও নেই। কারো কারো বিচারে এটিই বিশ্বের সবচেয়ে পুষ্টিকর ফল। কাঁঠাল বলকারক এবং রোগ প্রতিষেধক। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেল, কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট। আরো আছে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালে খাদ্য-আঁশ (ডায়েটারি ফাইবার) থাকে ২ গ্রাম, শর্করা ২৪ গ্রাম, চর্বি ০.৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ৩৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩০৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-এ ২৯৭ আইইউ ও ভিটামিন-সি ৬.৭০ মিলিগ্রাম।
এসবি/