অবৈধ ইট ভাটার দৌরাত্মে বন্ধ হচ্ছে বৈধ ভাটা
রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা থেকে
প্রকাশিত : ০৩:৪০ পিএম, ৪ জানুয়ারি ২০২৩ বুধবার
পাবানায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে অবৈধ ইট ভাটা। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী পাবনা জেলায় ১৯৩টি ইট ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে অনুমোদন রয়েছে মাত্র ৪০টির। ১৫৩টি ইট ভাটাই অবৈধভাবে চলছে দীর্ঘ বছর ধরে।
ফলে একদিকে যেমন প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অন্যদিকে যত্রতত্র ইট ভাটা গড়ে উঠায় দুষণ হচ্ছে পরিবেশ। সেই সঙ্গে হ্রাস পাচ্ছে বন ও কৃষি জমি।
অভিযোগ রয়েছে জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে এসব অবৈধ ইট ভাটা।
পাবনা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলা ও ১১টি থানা মিলে বৈধ ও অবৈধ মোট ইটভাটার সংখ্যা ১৯৩টি। এর মধ্যে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৪০টি। আর অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ১৫৩টি।
এর মধ্যে পাবনা সদর উপজেলায় ৭১টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ ১৫টি। ঈশ্বরদীতে ৫০টি ভাটার মধ্যে বৈধ ভাটা ৫টি। আটঘরিয়া উপজেলায় বৈধ ১টি, অবৈধ ১টি। চাটমোহরে ৬টি ভাটার মধ্যে ৪টি বৈধ। সুজানগরে ১৭টি ভাটার ৯টি বৈধ। বেড়া উপজেলায় ১৬টি ভাটার বৈধ মাত্র ৪টি ভাটা। ভাঙ্গুড়ায় ৭টির মধ্যে বৈধ ভাটা ২টি।
ফরিদপুর ও সাঁথিয়া উপজেলায় ১১টি করে ইট ভাটা থাকলেও একটিরও অনুমোদন নেই।
এসব অবৈধ ভাটায় স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে মোবাইল কোট পরিচালনা করে জরিমানা করলেও স্থায়ীভাবে বন্ধের কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি।
সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যদিকে কয়লার পরিবর্তে খড়ি পুড়িয়ে ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। ফলে একদিকে কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে বনায়ন ধ্বংস করে কাঠ বানিয়ে তা ইটভাটায় পুড়ানোর জন্য সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে সার্বিকভাবে পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অবৈধ ইটভাটার মালিক জানান, বৈধভাবে ইট প্রস্তুত করতে চাই। কিন্তু বিভিন্ন ধরণের অনুমোদন নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হতে হয়। কাগজ ঠিক করে ভাটার ব্যবসা করতে গেলে সে ব্যবসা কখনো আলোর মুখ দেখবে না। তাই অনৈতিক পথে এই ব্যবসা করতে হচ্ছে।
বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে নিম্নমানের চিমনী ব্যবহার, কাঠ পুড়ানো, অনুমোদন ছাড়া ইটভাটা পরিচালনা করায় জেল-জরিমানার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে উৎকচ দিয়ে তাদের ম্যানেজ করা হয়। প্রতিপক্ষের লোকজন ষড়যন্ত্র করে মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনায় উৎসাহিত করেন। ফলে আমাদের আর্থিকভাবে ক্ষতির সন্মুখিন হতে হয়।
ফসলী জমি কেটে ইট তৈরির জন্য মাটি নেয়া হচ্ছে
কয়েকজন অবৈধ ইট ভাটার ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা ব্যবসা করছি সে তালিকা কিন্তু প্রশাসনের কাছে আছে। কিন্তু আমাদের অনুমোদন দিতে নানা হয়রানি করা হয়। ফলে আমাদের বিপুল পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করে ক্ষতির সন্মুখিন থেকে বাঁচতে ভিন্নপথে এই ব্যবসা পরিচালনা করতে হচ্ছে।”
বৈধ ইটভাটার মালিক রুহুল আমিন বিশ্বাস রানা বলেন, “অবৈধ ইট ভাটার দৌরাত্মে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। এ মৌসুমে ভাটা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছি। আমরা কয়লা দিয়ে পরিবেশবান্ধব চিমনি ব্যবহার করে ইট ভাটা চালাই। তাতে উৎপাদন খরচ অনেক পড়ে যায়। এর চেয়ে কম রেটে অবৈধ ভাটাগুলো ইট বিক্রি করে। ফলে বৈধভাবে কাজ করতে গিয়ে আমরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি।”
পরিবেশ অধিদপ্তর পাবনার সহকারী পরিচালক নাজমুল হোসাইন বলেন, “জনবল সংকটের কারণে কোন অভিযান চালাতে গেলে জেলা প্রশাসনের মুখের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। যে কারণে আমাদের দপ্তর থেকে অভিযান পরিচালনা করাটা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।”
জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাবনা সদর, ঈশ্বরদী, সাঁথিয়া ও বেড়ায় বেশ কিছু ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অর্থদণ্ডসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এএইচ