ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

সরফরাজের বীরোচিত শতকে নাটকীয় ড্র

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৫০ পিএম, ৬ জানুয়ারি ২০২৩ শুক্রবার

ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলার পথে সরফরাজের একটি শট

ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলার পথে সরফরাজের একটি শট

করাচি টেস্টের পঞ্চম দিন। নিউজিল্যান্ডের ছুড়ে দেওয়া বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় নেমে বেশিদূর যেতে পারবে না পাকিস্তান- এমনটাই ভাবা হচ্ছিল। শুরুটাও হয়েছিল তেমনই। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে গেলেন কিছুদিন আগেও 'ব্রাত্য' হয়ে থাকা সরফরাজ আহমেদ। 

বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখিয়ে তুলে নিলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। স্বাগতিকদের জয়ের স্বপ্নও দেখাচ্ছিলেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। কিন্তু তার বিদায়ের পর পরাজয়ের শঙ্কা জাগিয়েও নাটকীয় ড্র-তে শেষ হলো ম্যাচটি।
 
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের শেষ দিনে আজ (৬ জানুয়ারি) চূড়ান্ত নাটকীয়তা দেখালো করাচির ২২ গজ। ২৭৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করার পর পাকিস্তানের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩১৯ রানের। 

কঠিন এই লক্ষ্য তাড়ায় নেমে স্কোর বোর্ডে কোনো রান তোলার আগেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। এরপর ৮০ রান তুলতেই হারায় পঞ্চম উইকেট। স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানের হার দেখছিল সবাই। কিন্তু নাটকের যে তখনও বাকি ছিলো!

পাকিস্তানের ব্যাটিং অর্ডার যখন বিধ্বস্ত, তখনই হাল ধরেন সরফরাজ। অন্যপ্রান্তে তাকে সেভাবে কেউ সঙ্গ দিতে না পারলেও নিজের কাজটা চালিয়ে যান সাবেক এই অধিনায়ক। প্রথমে সউদ শাকিলকে নিয়ে গড়েন ১২৩ রানের জুটি, যেখানে তিনি একাই করেন ৮৩ রান। বাকি ৩২ রান আসে শাকিলের ব্যাট থেকে। 

এরপর আগা সালমানকে নিয়ে গড়া ৭০ রানের জুটিতেও মুখ্য ভূমিকা সরফরাজের। ১৩৫ বলের মোকাবিলায় দারুণ এক সেঞ্চুরিও তুলে নেন এই ডানহাতি ব্যাটার। ২১৩ ওভার কিপিং করার পর সেঞ্চুরি হাঁকানো প্রথম ব্যাটার তিনি। তার এই অনবদ্য শতকে জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করে পাকিস্তানও।

দিনের শেষ ১৮ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ৮৮ রান। হাতে ৪ উইকেট। ওই অবস্তায় সরফরাজ ছিলেন আশা হয়ে। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ৮২তম ওভারে দারুণ খেলতে থাকা সালমানের (৩০) বিদায়ে বড় ধাক্কা খায় স্বাগতিক শিবির। সরফরাজও যেন কিছুটা গুঁটিয়ে যান। ৮৫তম ওভারে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন হাসান আলীও (৫)। 

এরপর আলোকস্বল্পতা দেখা দিলে জ্বলে ওঠে ফ্লাডলাইট। ওই ওভারে নাসিম শাহর এক চার ও ছক্কায় আসে ১০ রান। আলো কমে যাওয়ায় তখন পেসারদের আক্রমণে আনতে পারছিল না কিউয়িরা। ফলে স্পিনারদের দিয়েই কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছিল।

ফ্লাডলাইটের আলোয় যখন পাকিস্তানকে স্বপ্ন পূরণের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন সরফরাজ; ঠিক তখনই আঘাত হানেন কিউয়ি স্পিনার মিচেল ব্রেসওয়েল। তার বলে আউট হওয়ার আগে সরফরাজের ব্যাট থেকে আসে ১১৮ রান, যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসও বটে। 

পাকিস্তানের স্বপ্নও ভেঙে যায় তাতে। অবশ্য ব্রেসওয়েলের পরের ওভারে ফের ছক্কা ও চারে ১০ রান তোলেন নাসিম। তখন জয় থেকে মাত্র ১৭ রান দূরে ছিল পাকিস্তান। ৯০তম ওভারে ২ রান আসায় তা নেমে আসে ১৫ রানে। শেষ উইকেট জুটি সবমিলিয়ে ২১ বল মোকাবিলা করেও অবিচ্ছিন্ন থাকে।

শেষ ইনিংসে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩০৪ রান তুলে ফেলে পাকিস্তান। কিন্তু আলো এতটাই কমে আসে যে, আম্পায়াররা আর খেলা চালিয়ে যেতে দেননি। ফলে ৩ ওভার বাকি থাকতেই জয় থেকে মাত্র ১ উইকেট দূরেই থামতে হয় নিউজিল্যান্ডকে। 

অন্যদিকে জয় থেকে মাত্র ১৫ রান দূরে শেষ হয় পাকিস্তানের লড়াই। ফলে রোমাঞ্চকর এক ড্রয়ের সাক্ষী হয় ক্রিকেটবিশ্ব। পাকিস্তানের ১ উইকেট হাতে রেখে টেস্ট ড্র করার ঘটনা এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ঘটলো। ১৯৮৮ সালে পোর্ট অব স্পেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচটি ১ উইকেট হাতে রেখে ড্র করেছিল দলটি।

এনএস//