ঢাকা, শুক্রবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ৫ ১৪৩১

এমবিএ করা দুই বন্ধু ফুটপাতে চা বিক্রিতা

জামাল হোসেন, বেনাপোল থেকে

প্রকাশিত : ১১:৩৪ এএম, ৮ জানুয়ারি ২০২৩ রবিবার | আপডেট: ১১:৩৬ এএম, ৮ জানুয়ারি ২০২৩ রবিবার

বেনাপোলের দুই বন্ধুর একজন আশিকুজ্জামান এ্যানি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন, অপর বন্ধু রাশেদুজ্জামান রয়েল যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন দত্ত কলেজ থেকে এমবিএ করা। চাকরির পেছনে না ছুটে ফুটপাতে চায়ের স্টল দিয়ে বেশ সাড়া ফেলেছেন তারা।

বেনাপোলে ‘এমবিএ চা-ওয়ালা’ নামে তন্দুরি চায়ের স্টল দিয়েছেন স্নাতকোত্তর (এমবিএ) করা এই দুই বন্ধু। 

বিশেষ ধরনের এই চায়ের স্টলের পেছনে রয়েছে রোমাঞ্চকর গল্প। ভ্রমণপিপাসু এই দুই উদ্যোক্তা জানান, তারা ইউটিউবে ভারতে তন্দুরি চায়ের একটি ভিডিও দেখেন। কেবল সেই চায়ের স্বাদ নিতে দুই বন্ধু ভারতে চলে যান। সেখানে ক’দিন অবস্থানকালে বেশ কয়েকবার চায়ের স্বাদ নেন। এরপর দু’জন মিলে পরিকল্পনা করেন তন্দুরি চায়ের স্টল দেয়ার।

আশিকুজ্জামান এ্যানি বলেন, চাকরির বাজারে নিজেদের মূল্যবান সময় নষ্ট করার একদমই ইচ্ছে ছিল না। দুই বন্ধুর দীর্ঘদিনের ইচ্ছে পড়াশোনা শেষ করে নিজেরা কিছু করবো। সেই ইচ্ছে থেকেই আজ ছোট পরিসরে ‘এমবিএ চা ওয়ালা’ নামে তন্দুরি চায়ের স্টল দিয়েছি।

নতুন হলেও বেচাবিক্রি ভাল। বিকেল থেকে রাত অবধি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তন্দুরি চায়ের স্বাদ নিতে আসছেন। প্রতি ভাড় বা মটকা (কাপ) চা বিক্রি করছি ৩০ টাকা। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য দামটি কমানো যায় কিনা সেটা ভাবছেন তারা।

তিনি বলেন, মাত্র ক’দিন হলো চায়ের স্টলটি শুরু করেছি, তাতে বেশ সাড়া পাচ্ছি। ভবিষ্যতে এটি আরও বড় পরিসরে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

অপর উদ্যোক্তা রাশেদুজ্জামান রয়েল বলেন, কোন কর্মই ছোট নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নিয়েছি বলে যে কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে হবে এমনটা না। স্বল্প পুঁজি নিয়েও একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় শিক্ষিত বেকারদেরকে চাকরির পেছনে না ছুটে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করার আহবান জানান। 

সে কথা মাথায় রেখেই বন্ধু এ্যানির পরামর্শে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠা তন্দুরী চায়ের এই আইডিয়াটা গ্রহণ করি আমরা। ‘তন্দুরি চা’ এর স্বাদ অত্র এলাকার মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তন্দুরী চা বেনাপোলসহ অত্র এলাকায় জনপ্রিয়তা পাবে বলে আশা করছি।

অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী রিয়াজ মাহমুদ তন্দুরি চায়ের কারিগর হিসেবে কাজ করছেন। রিয়াজ বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি আমি একটা ফাস্টফুডের দোকানে কাজ করতাম। তরুণ উদ্যোক্তা এ্যানি ও রয়েল তাদের স্টলে কাজ করার প্রস্তাব দিয়ে ভারত থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। সেখান থেকে ফিরে ‘এমবিএ চা ওয়ালা’ দোকানে কাজ শুরু করেছি।

চা তৈরির প্রণালী সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তন্দুরি চা’ তৈরি করতে হলে আগে থেকে গরম হওয়া তন্দুরে মাটির ভাড়গুলো রাখা হচ্ছে। এরপর সেই জলন্ত ফাঁকা মাটির ভাড়ে (কাপ) অর্ধেক তৈরি হওয়া চা ঢালা হচ্ছে। ঢালার সময় বুদবুদ উঠার পরই চা তৈরি হয়ে যায়। গরম ভাড়ের এ তন্দুরি চায়ে পাওয়া যাবে ধুম্র স্বাদ, যা আপনাকে বারবার নিয়ে আসবে এই স্টলে।

চা পান করতে আসা আশরাফ, আনিছুর, রাসেল, মানিকসহ কয়েক ব্যক্তি জানান, তারা লোকমুখে জানতে পেরেছেন বেনাপোলের দুই যুবক স্নাতকোত্তর পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে ‘এমবিএ চা ওয়ালা’ নামে একটি তন্দুরি চায়ের স্টল দিয়েছেন। তাই সেই টি স্টলের চা পান করতে আসা।

তারা আরও জানান, এই দুই যুবক ছোট পরিসরে হলেও নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন, তা তাদের খুবই ভালো লেগেছে। এই যুবকদের দেখে এলাকার অন্য যুবকরাও পড়াশোনা শেষ করে নিজেরা কিছু করার চেষ্টা করবে বলে মনে করেন তারা। 

তন্দুরি চায়ের এ আইডিয়া ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভারতের পুনের সেই দুই চা ওয়ালা প্রমোদ বাংকার এবং অমোল রাজদের হাত ধরে এসেছে তন্দুরি চায়ের এ পরিকল্পনা। 

তাদের ঠাকুমা গ্রামের বাড়ির কয়লার ওপর দুধ দিয়ে তন্দুরি চা তৈরি করতেন। সেই একই পদ্ধতিতে চা তৈরি করছেন তারা। এরাই তন্দুরি চায়ের প্রথম কারিগর।

এএইচ