ঢাকা, শুক্রবার   ১১ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২৫ ১৪৩১

ডায়েট শুরুর আগে যে বিষয়গুলো জানতে হবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৫৫ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০২৩ মঙ্গলবার

মেদ বা স্থূলতা এক অস্বস্তির নাম। বাড়তি ওজন মানেই রোগভোগের বাড়তি ঝুঁকি। তাই মেদ ও ওজন কমাতে অনেকেই ঝুঁকছেন ডায়েট কন্ট্রোলের দিকে। 

আপনিও যদি ভেবে থাকেন ডায়েট করবেন তাহলে মাথায় রাখুন এই বিষয়গুলো... 

স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন

অতিরিক্ত ওজন ও মেদের সাথে ডায়বেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ফ্যাটি লিভার, লিভার সিরোসিস, এমনকি ক্যান্সারের যোগ রয়েছে। তাই বাড়তি ওজন কমাতে যদি ডায়েট করতে চান তাহলে একজন ডায়েটেশিয়ান বা স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

তবে তথাকথিত ‘জিরো ফিগারের’ জন্যে ডায়েট প্ল্যান না করাই ভালো। কারণ স্লিম হওয়ার নেশায় যা করা হয় তা শরীরের প্রতি অনাচার ছাড়া কিছু নয়।

শোবিজ অঙ্গনে হাড় জিরজিরে নারী মডেলদের দেখাদেখি অনেকের কাছে সৌন্দর্যের মাপকাঠি স্লিম দেহ। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই ‘স্লিম ম্যানিয়ায়’ আক্রান্তদের অনেকেই ভুগছে চরম অপুষ্টিতে? এমনকি পশ্চিমা কয়েকজন তারকা অতিরিক্ত শুকনো হতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা পর্যন্ত গেছেন।

আসলে এন্ডোমর্ফ, মানে যাদের দেহকাঠামো গোলগাল আর বৃহদাকার তারা শত চেষ্টাতেও স্লিম হতে পারবেন না। বরং জোরাজুরি করতে গিয়ে শরীর ভেঙে পড়তে পারে।

বলিউড অভিনেত্রী সোনম কাপুর তার ব্লগপোস্টে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

তিনি লিখেন, “আর দশটা কিশোরীর মতো আমিও কত রাত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে থেকেছি। ভাবতাম- আমাকে তেমন দেখায় না কেন, যেমনটা দেখানো উচিৎ? যখন আমাকে একটি সিনেমার নায়িকা হিসেবে চূড়ান্ত করা হলো, নিজেকে তারকা জগতের যোগ্য করে তুলতে কিছু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের অনুশীলন শুরু করলাম।

“একের পর এক ডায়েট মেনে চলতে থাকলাম। কোনো কোনো সপ্তাহে ওজন কমানোর জন্যে এতই উন্মত্ত হয়ে যেতাম যে, ভয়ে কিচ্ছু মুখে নিতাম না। টিন-এজ বয়সের সেই ভুলগুলোর কারণে আমাকে এখন জীবনভর এসিডিটিতে ভুগতে হচ্ছে।”

কাজেই তারকা ও মডেলদের বাহ্যিক সৌন্দর্যে বিভ্রান্ত হয়ে তাদের মতো হতে গিয়ে ডায়েট ধরবেন না।

ইউটিউব দেখে কখনো ডায়েট করতে যাবেন না

কারণ ইউটিউবে যারা ভিডিও আপলোড করেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনার উপকারের চেয়ে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়াই তাদের উদ্দেশ্য। তাদের ভিডিও দেখে ডায়েট করে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায়ভার তাদের ওপর চাপাতে পারবেন না। তাছাড়া একই ডায়েট সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। 

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, একই খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেও এমনকি যমজদের ওজন কমার ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকতে পারে।

পুষ্টিবিদ সোফি মেডলিন বলেন, “এই খাবার খেয়ে ওর যদি কাজ হয়, আমার কেন হবে না”- এই তত্ত্ব মেনে অন্য একজনের ডায়েট পরিকল্পনা অনুসরণ করা একেবারেই ভুল একটি সিদ্ধান্ত। প্রতিটি মানুষের জিনগত বৈশিষ্ট্য, জীবনধারা ও শারীরিক গঠন আলাদা। একজনের জন্য যে রীতি কার্যকর হবে, আপনার জন্যও তা ফলপ্রসূ হবে- এটি ভুল ধারণা।

তাড়াহুড়া করবেন না

কারণ যে ওজন তিন বছরে বেড়েছে সেটাকে তিন মাসে কমানোর চিন্তা বাস্তবসম্মত নয়। বরং হঠাৎ করে ওজন কমাতে গেলে শরীরে বিভিন্ন ধরণের ইলেক্ট্রোলাইট পরিবর্তন হতে পারে। এছাড়াও হাড়ের ঘনত্ব কমে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন অস্টিওপোরোসিসে।

অন্যদিকে, কঠোর ডায়েটের সাথে সম্পর্ক রয়েছে ইটিং ডিজ-অর্ডারের। টিনএজ বয়সে যার ঝুঁকি ১৮ গুণ! এই ডিজ-অর্ডার স্বাস্থ্যনাশ, এমনকি মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে। গত বছর ১৭ বছরের কিশোর সামিনের মৃত্যুর কারণ ছিল এই ইটিং ডিজ-অর্ডার।

প্রচলিত ডায়েট পদ্ধতির কিছু ক্ষতিকর দিক

ডায়েট আছে নানান কিসিমের। তবে এগুলোর প্রায় প্রতিটারই কিছু না কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। 
ভেগান ডায়েট প্রযোজ্য হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে। কঠোর ভেগানে অভ্যস্থ হলে একটা সময় শরীরে ভিটামিন বি ১২-এর ঘাটতি সৃষ্টি হয়, যার সাথে সম্পর্ক আছে ব্রেন সেইং বা মাথাঘোরার। এ-ছাড়া হাড় দুর্বল হয়ে যায় বলে বোন ইঞ্জুরির আশঙ্কাও বেড়ে যায়।

অধুনা জনপ্রিয় কিটো ডায়েটেরও আছে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকি। এটি বেশিদিন করলে ইনসুলিনের ঘাটতি সৃষ্টি হয়। কিটো-এসিডোসিস সৃষ্টি হয়ে হতে পারে ব্রেন, লিভার ও কিডনির অপূরণীয় ক্ষতি।

আর অল্প সময়ে অনেক ওজন কমাতে ক্র্যাশ ডায়েট করলে ওজনের বদলে ক্র্যাশ হতে পারে আপনার শরীর!     

কাজেই ডায়েট শুরুর আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কারণ আপনার চেয়ে তিনিই ভালো বুঝবেন আপনার জন্যে কোন ডায়েট প্রযোজ্য। সরাসরি আপনার সাথে কথা বলে, আপনার খাদ্যাভ্যাস, জীবনাচার ও মেডিকেল প্রোফাইল দেখশুনে আপনার উপযোগী ডায়েটটিই তিনি আপনাকে দেবেন।  

আসলে আমাদের শরীরের জন্যে প্রতিটি পুষ্টি উপাদানই কম- বেশি প্রয়োজনীয়। ডায়েট করতে গিয়ে কোনো খাদ্য উপাদান পুরোপুরি বাদ দিলে বা শরীরের চাহিদার চেয়ে কমানো হলে সেটার নেতিপ্রভাব শরীরে পড়বে। 

এমএম/