ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

বহুল আলোচিত ওয়ান-ইলেভেন আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৪১ এএম, ১১ জানুয়ারি ২০২৩ বুধবার

আজ ১১ জানুয়ারি। বাংলাদেশে দিনটি ওয়ান-ইলেভেন নামে পরিচিত। বহুল আলোচিত সেই ওয়ান ইলেভেনের ১৬তম বছর আজ। জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনাস্থা সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষাপটে ২০০৭ সালের এ দিনে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। 

২০০৭ সালের এদিন বিকালে জরুরি অবস্থা জারির পর বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। এর আগে ২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে প্রধান উপদেষ্টা করে তার নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠিত এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড শুরু থেকেই সমালোচিত হতে থাকে। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট আন্দোলন অব্যাহত রাখে। ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ভুয়া ভোটার তালিকা সংশোধন, নির্বাচন কমিশন সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন রূপ নেয় গণ-আন্দোলনে। ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কিছু দিন পর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে উপদেষ্টারা একে একে পদত্যাগ করতে থাকেন। 

এ অবস্থায় ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। একপর্যায়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে অন্তরায় হতে পারে এমন নানা অনিয়মের আশঙ্কা ব্যক্ত করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। এ পরিস্থিতিতে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষিত হয়। রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভেঙে দিয়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন। সেনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমদ সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। তিনিই এক অনুষ্ঠানে ১১ জানুয়ারির জরুরি অবস্থা জারির দিনটিকে ওয়ান-ইলেভেন বা এক এগারো (১/১১) নামে আখ্যায়িত করেন। জরুরি অবস্থা জারির পর রাজনৈতিক দলগুলোর সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। শুরু হয় রাজনৈতিক নেতাদের ধরপাকড়। দুর্নীতির অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা মামলায় প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ছাত্র, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ অনেকেই এ সরকারের সময় গ্রেপ্তার হন। 

২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে বিশেষ কারাগারে রাখা হয়। এ বছরই ৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকেও গ্রেপ্তার করে বিশেষ কারাগারে নেওয়া হয়। এই সময় দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়ার গুঞ্জন ওঠে। মাইনাস-টু ফর্মুলা তখন ছিল একটি বহুল আলোচিত বিষয়। রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করা হলেও বিভিন্নভাবে আন্দোলন গড়ে ওঠে। দ্রম্নত নির্বাচনের দাবিতে অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দিক থেকে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়। একপর্যায়ে আন্দোলন রাজপথে নেমে আসে। পরিস্থিতি অনুধাবন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে ঘরোয়া রাজনীতিরও অনুমতি দেয়। এর পর ধীরে ধীরে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারাও মুক্তি পান। 

প্রায় দুই বছর অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকার পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সংসদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে।
এসএ/