সুলতান মাহমুদ ও ভৃত্য আয়াজের গল্প
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৪৬ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ শুক্রবার
গজনীর সুলতান মাহমুদ। তার একজন দাস ছিলেন, নাম আয়াজ। আয়াজকে সুলতান মাহমুদ খুব পছন্দ করতেন তার বিশ্বস্ততার জন্যে, সুলতানের প্রতি তার আনুগত্যের জন্যে। এতই পছন্দ করতেন যে, এটা আবার সুলতান মাহমুদের দরবারের কোনো কোনো মন্ত্রী-সভাসদের খুব গা-জ্বলুনির কারণ ছিল।
আনুগত্য কীরকম ছিল? একবার আয়াজ সুলতানের সঙ্গে যাচ্ছেন। পথে এক তরমুজ ক্ষেত দেখে সুলতানের তরমুজ খেতে ইচ্ছে হলো। কাফেলা থামিয়ে ক্ষেত থেকে তরমুজ আনা হলো। কাটা হলো। কাটা তরমুজের এক টুকরো সুলতান আয়াজকে তুলে দিলেন। বললেন, খাও। আয়াজ খেলো। সুলতান আয়াজের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন লাগল? আয়াজ বললেন, জাঁহাপনা, এত স্বাদের এত মিষ্টি তরমুজ বহুদিন খাইনি। বলে তরমুজের টুকরোটির সবকিছু চেটেপুটে খেতে লাগলেন।
দেখে সুলতানের খুব মায়া লাগল। বললেন, ঠিক আছে, এতই যখন তৃপ্তি পাচ্ছে, তাহলে ওকে গোটা তরমুজটাই কেটে দাও। তা-ই করা হলো। একের পর এক তরমুজের টুকরো আসছে, আর আয়াজ চেটেপুটে খাচ্ছেন। সুলতানও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন-খাও খাও, আরও খাও।
শেষ পর্যন্ত একটা টুকরা বেঁচে গেল। এই শেষ টুকরাটা সুলতান মুখে তুললেন। আর সাথে সাথে ওয়াক থু করে ফেলে দিলেন! প্রচণ্ড তেতো আর কষ। এই তরমুজ আয়াজ কী করে এত অম্লান বদনে খেয়ে গেলো, তা ভেবে সুলতান বিস্মিত হলেন।
আয়াজকে জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে এ তরমুজ তুমি খেলে? একটু তো বলতে পারতে। আয়াজ তখন বললেন, জাঁহাপনা, যে তরমুজ আপনার হাত থেকে এসেছে, তা যত তেতোই হোক, আমার কাছে তা মিছরির চেয়েও মিষ্টি।
কিন্তু একটা সময় সুলতান মাহমুদের কয়েকজন মন্ত্রীর ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন আয়াজ। সুলতানের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করল তারা। আয়াজকে বন্দি করার নির্দেশ দিলেন সুলতান। আয়াজ ধৈর্য ধরলেন। কারণ সে সময় তার আর কিছুই করার ছিল না।
জেলখানায় বন্দিদশায় কাটতে লাগল তার দিন। কিন্তু আয়াজ তার বিশ্বাসে অটল যে, সুলতান একদিন তার ভুল বুঝতে পারবেন। আজ হোক, কাল হোক তাকে তিনি মুক্তি দেবেনই। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়।
এখন তো কারাবন্দিদের জন্যে কিছু নিয়ম আছে। তখন এসব কিছু ছিল না। এক টুকরো রুটি-এই হয়তো এক সপ্তাহের বরাদ্দ। বন্দিরা একটু একটু করে জমিয়ে রেখে তা-ই খেত। আয়াজও তা-ই করতেন। এরকমই একবার আয়াজ এক টুকরো রুটির খানিকটা খেয়ে বাকিটা তুলে রেখে ঘুমাতে গেলেন। ঘুম থেকে উঠে দেখেন তিনদিনের খাবার সেই রুটির টুকরোটি নিয়ে এক ইঁদুর দৌড়ে পালালো।
দেখে আয়াজ হেসে উঠলেন। যাক! তাহলে আমার এখানকার রিজিক শেষ হয়ে আসছে। আমি এখন মুক্তি পাব। অর্থাৎ বিশ্বাস এবং আশাবাদটা কী রকম!
সেই সময় তার মনে হয়েছে যে, না, এর চেয়ে খারাপ তো আর কিছুই হতে পারে না এবং এরপরে আমার মুক্তি ছাড়া আর কোনো কিছু নাই। এবং সত্যি সত্যিই তার কিছুক্ষণ পরই তিনি খবর পেলেন যে, সুলতান মাহমুদ তার মুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন এবং তাকে দরবারে ডেকে পাঠিয়েছেন।
এই যে বিশ্বাস, অর্থাৎ সর্বাবস্থায় ধৈর্য ধারণ এবং সর্বাবস্থায় আশাবাদী হওয়া- এটাই হচ্ছে সাফল্যের জন্যে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি।
এনএস//