সুখ কোথায় খুঁজছেন?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৫:৩৮ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ শনিবার
মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকে তার জীবনের অর্থ খোঁজার চেষ্টা করেছে যে, জীবন কী, জীবন থেকে তার কী চাওয়ার আছে এবং কেন সে বেঁচে থাকবে? একজন সাধারণ মানুষ কী চায়?
সে সুস্থ থাকতে চায়। সুখী হতে চায়। প্রাচুর্য চায়। সাফল্য চায়। কিন্তু পায় না কেন? খুব ছোট্ট একটি কারণে। সেটা হচ্ছে- সুখের সংজ্ঞা, প্রাচুর্যের সংজ্ঞা, সাফল্যের সংজ্ঞায় সে ভুল করে ফেলে।
অর্থাৎ সংজ্ঞাটা কী হবে, কোথায় সুখ খুঁজতে হবে, কোথায় সাফল্য খুঁজতে হবে, কোথায় প্রাচুর্য খুঁজতে হবে এবং কোথায়-কীভাবে তা পাওয়া যাবে, তাতে সে ভুল করে ফেলে।
কথায় বলে, যা চাই তা ভুল করে চাই, যা পাই তা চাই না। এটাই হচ্ছে সাধারণ জীবন। কারণ সে সবসময় ভুল করে চায় এবং যা সে পায় কিছু সময় পরে বুঝতে পারে যে, এটা সে চায় নি। এটা তার চাওয়ার মধ্যে পড়ছে না। এই জায়গায় হচ্ছে সমস্যা।
নাসিরুদ্দীন হোজ্জার একটি মজার গল্প রয়েছে। একবার হোজ্জাকে দেখা গেল- রাস্তার পাশে বাতির নিচে ঘাসের ওপর কী যেন খুঁজছে! সেসময় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল হোজ্জার এক পরিচিত জন। হোজ্জাকে কিছু একটা খোঁজাখুঁজি করতে দেখে সে-ও লেগে গেল খোঁজায়। কিছুক্ষণ পর এল আরেকজন! তারপর আরেকজন। এভাবে একসময় খোঁজাখুঁজির এই চেষ্টায় জুটে গেল রীতিমতো একটা দল!
কিন্তু অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করেও যখন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না, তখন একজন প্রশ্ন করে বসল, আচ্ছা, হোজ্জা! আমরা কী খুঁজছি বল তো?
হোজ্জা বলল, একটা সোনার মোহর! “সোনার মোহর!” সমস্বরে বলে উঠল উপস্থিত সবাই! দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে আবার খুঁজতে লাগল সবাই।
কিন্তু তারপরও যখন পাওয়া যাচ্ছে না, একজনের মনে প্রশ্ন জাগল- আচ্ছা, সোনার মোহর তো কোনো ছোট জিনিস না, এত খোঁজাখুঁজি করেও কেন এটা পাওয়া যাবে না!
সে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা হোজ্জা, বলতো, মোহরটা তুমি ঠিক কোথায় হারিয়েছ?
হোজ্জা বলল, ইয়ে, মানে মোহরটা তো হারিয়েছে ঐ দূরে, পাহাড়ের নিচে অন্ধকারে, যখন আমি সে পথ দিয়ে আসছিলাম!
কী! মোহর হারিয়েছে ঐ পাহাড়ের নিচে! আর তুমি খুঁজছো এখানে!
হোজ্জা বলল, কী করব বল! ওখানে যে নিকষ অন্ধকার! এত অন্ধকারে কি কখনো কিছু খুঁজে পাওয়া যায়! কিন্তু দেখ, এখানে কত আলো! সেজন্যেই না এখানে খুঁজছি!
আসলে আমরা সুখ খুঁজি কোথায়? চাকচিক্যের মধ্যে। সুখ যেখানে রয়েছে সেখানে খুঁজি না। আসলে সুখ পেতে হলে আপনার যাত্রাটা হবে ভেতরের দিকে। কিন্তু আমরা সুখ খুঁজি বাইরে। যে কারণে আমরা সুখী হতে পারি না।
আমরা সুখ খুঁজি বিলাসী পণ্যের মধ্যে। যত ফুটানি, যত অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে পারি, তত মনে করি যে, আমার স্ট্যাটাস বাড়ল। মনে করি যে, অপচয় করতে পারলেই বোধ হয় আমি সুখী হবো।
আজকাল সুখের, প্রাচুর্যের, সাফল্যের বাহ্যিক রূপ কী? বাহ্যিক রূপ হচ্ছে দামি গাড়ি, বিলাসবহুল বাড়ি, হীরার নেকলেস, দামি সেন্ট কিংবা স্মার্ট ফোন।
একটি ঘটনা, অনেক বছর আগের কথা। কোন এক ব্যক্তির সঙ্গে তার ছোটবেলার এক বন্ধুর দেখা হয় অনেক বছর পর। দুজনের কথোপকথনের মধ্যে ছোট বেলার বন্ধুটি হঠাৎ বললেন, আমার তেমন কোনো শখ নাই, শখ শুধু সেন্ট আর আফটার শেভ লোশনের। ওনার টয়লেটে ঢোকার পর দেখা গেল থরে থরে সাজানো সব আফটার শেভ লোশন। যখন তাকে জিজ্ঞস করা হল, কত বছর ধরে এগুলো ব্যবহার করবে তুমি! এক জীবনে কি ব্যবহার করে শেষ করতে পারবে!
তখন সে বলে, ব্যবহার তো একটু আধটু করি। কিন্তু আমার বন্ধুবান্ধবরা যখন আসে তখন তাদের দেখাই। তারা বিস্মিত হয় যে, এত ব্রান্ডের এত আফটার শেভ লোশন আমি কালেক্ট করতে পেরেছি!
তার জীবনে কিন্তু সুখ ছিল না। আফটার শেভ লোশন, সেন্ট বা সুগন্ধি ছিল, গাল দিয়ে চমৎকার সুগন্ধ বের হতো, কিন্তু মনে কোনো সুগন্ধি ছিল না।
আসলে সুখের মূল ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস, আস্থা, ভরসা, কৃতজ্ঞতা, ব্যাপক রিজিক ও ভাগ্যের ওপর সন্তুষ্টি, তৃপ্তি ও আশাবাদিতা। জীবনে যা পাওয়া গেছে তা নিয়ে ইতিবাচক ভাবনা, যা পাওয়া যায়নি তা নিয়ে না ভাবা। সব সময় নিজের চেয়ে কম সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণীকে দেখা, বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, পরিবার ও শ্রেণীকে না দেখা। এভাবে চললে মন বিচলিত ও নিক্ষিপ্ত হওয়ার বদলে সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত হবে। সেজন্যই বলা হয়, ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ।
এমএম/