ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:০৪ এএম, ১৬ জানুয়ারি ২০২৩ সোমবার
বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। এ রোগের রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণ মানুষ থেকে অনেক কম থাকে। তাই বিভিন্ন ধরনের জীবাণু খুব সহজেই তাদের আক্রান্ত করে। একবার ইনফেকশন হলে তা সহজে সারতে চায় না।
ডায়াবেটিসের ক্ষতিকর প্রভাব মাথা থেকে পা পর্যন্ত সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর পড়ে। বেশি আক্রান্ত হয় চোখ, দাঁত, হৃদযন্ত্র ও কিডনি। এছাড়া যৌন সমস্যা দেখাও দেয়। পর্যায়ক্রমে শরীরের সমস্ত স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। প্রথমে ব্যথা, পরে অবশ, আস্তে আস্তে ঘা, শেষে পা কেটে ফেলতে হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অবস্থায় গর্ভধারণ করলে মা এবং শিশু উভয়ই সাংঘাতিকভাবে আক্রান্ত হতে পারে।
যেসব ঝুঁকি বেশি—
পায়ে ইনফেকশন
ডায়াবেটিস রোগীদের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো তাদের পায়ের ক্ষত, যা ডায়াবেটিক ফুট নামে পরিচিত। সময়মতো শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা না করালে যা অনেক বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
ডায়াবেটিক রোগীদের পায়ের সংবেদনশীলতা কম থাকে। তাই পায়ের তলায় আঘাত পেলে টের পাওয়া যায় না এবং ছোট ছোট ঘা হয়ে তা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। এ ছাড়া ডায়াবেটিক রোগীদের পায়ে রক্ত চলাচল কম থাকায় এগুলো সহজে শুকাতে চায় না। গুরুতর অবস্থায় গিয়ে পৌঁছালে পা কেটে ফেলতে হতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ে সচরাচর ছোটখাটো ক্ষত হতে দেখা যায়, যা অনেক সময় আলসারে রূপ নেয়। এ ক্ষত পুরো পায়ে ছড়িয়ে গিয়ে রোগীর সেপসিস হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ছোটখাটো ক্ষত থেকে সেপসিস পর্যন্ত সব কটি অবস্থাই ডায়াবেটিক ফুটের অন্তর্গত।
সাধারণত পায়ের প্রেশার পয়েন্টগুলোতে এটা বেশি হতে দেখা যায়। অর্থাৎ দাঁড়ানো অবস্থায় পায়ের যে অংশগুলোতে শরীরের চাপ বেশি পড়ে, সেখানে এটি বেশি হয়।
কারও কারও ক্ষেত্রে খুব দ্রুত এ ক্ষত আলসারে রূপ নেয় ও সারা পায়ে ছড়িয়ে পড়ে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এটি ধীরে ধীরে ছড়ায়।
চোখের সমস্যা
ডায়াবেটিস একসাথে দুই চোখকেই আক্রান্ত করে। চোখ আক্রান্ত হওয়াকে আমরা ডায়াবেটিক আই ডিজিজ বা ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি বলি। রেটিনা হচ্ছে চোখের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ। এটি একবারে নষ্ট হয় না। আস্তে আস্তে নষ্ট হয়। ধীরে ধীরে তা অন্ধত্ব পর্যন্ত নিয়ে যায়। রেটিনা নষ্ট হলে চোখের কার্যকারিতা থাকেই না। এছাড়া ছানি পড়ে, চোখে বেশি বেশি ইনফেকশন হয়।
মুখে ক্ষত
মুখের বেলায়, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে দাঁতের অসুখ বেশি হয়। যাকে ডেন্টাল ক্যারিজ বলা হয়। দাঁত ক্ষয়ে যাওয়া। দাঁতের গোড়ার চারদিকে ইনফেকশন হয়ে যায়। ক্রামন্বয়ে একটার পর একটা দাঁত নষ্ট হতে থাকে। দাঁত ফেলে দিতে হয়। তাছাড়া মুখে অনেক ইনফেকশন হয়।
হার্টের সমস্যা
হার্ট সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের হার্টের অসুখ দুই থেকে তিন গুন বেশি। এমনকি যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদেরও হয়। প্রচলিত অর্থে যাকে আমরা হার্ট অ্যাটাক বলি, সেই হার্ট অ্যাটাক এবং হার্টের ব্যথা ডায়বেটিক রোগীদের অনেক বেশি। নিয়ন্ত্রণে রাখলে বেশি হয় না।
কিডনির অসুখ
ডায়বেটিসের কারণে কিডনিতে বড় ধরনের অসুখ হয়। এটাকে ন্যাবোপ্যাথি বলা হয়। ডায়াবেটিক রোগীদের দুটা কিডনিই একই সাথে আক্রান্ত হয়। ধীরে ধীরে একসময় কর্মক্ষমতা থাকেই না। এ অবস্থাকে আমরা বলি চূড়ান্তভাবে কিডনি অকার্যকর হয়ে যাওয়া। তখন কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয় বা ডায়ালাইসিস করতে হয়। তা না হলে বেঁচে থাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। চূড়ান্তভাবে কিডনি ফেইলার হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে কিডনি রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
নার্ভের সমস্যা
আরেক ধরনের জটিলতা আছে। এটাকে বলা হয় নিউরোপ্যাথি (নার্ভের সমস্যা)। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস পর্যায়ক্রমে শরীরের সমস্ত স্নায়ু সিস্টেমকে আক্রান্ত করে। প্রথমে ব্যথা, পরে অবশ, আস্তে আস্তে ঘা, শেষে পা কেটে ফেলতে হয়। এ ধরনের রোগীর সংখ্যা অনেক।
ডায়াবেটিসের প্রথম অবস্থায় তেমন কোনো উপসর্গ না থাকায় কেউ ডাক্তারের কাছে যায় না। সে কারণে প্রথমে রোগ ধরা পড়ে না। প্রথম দিকে জানতে পারলে খুবই ভালো হয়। সেজন্য জনসচেতনার বিকল্প নেই। জনসচেতনতা শুধু যে চিকিৎসকরা করতে পারবেন, তা নয়। মিডিয়া ও জনগণের সাথে যারা জড়িত তারাও যদি জনগণকে পরীক্ষার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেন, তাহলে মানুষ আগ্রহের সাথে পরীক্ষা করবে। এটার পরীক্ষা করা সহজ। অধিকাংশ কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকে পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। অনেকে হয়তো জানেন না।
ডায়াবেটিস যদিও জেনেটিক এবং আপনার জীবন যাপনের স্টাইলের ওপর নির্ভরশীল তারপরেও আপনি চেষ্টা করলে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারেন।
সেজন্যে আপনাকে খাবার গ্রহণের বিষয়ে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হবে এবং আপনাকে হতে হবে অত্যন্ত সক্রিয় একজন মানুষ।
এসএ/