ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

ইউরোপেও কমছে জনসংখ্যা, জন্মহার বাড়ানোর তাগিদ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১৫ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ বুধবার

দক্ষিণ এশিয়ার চীন-জাপানের মতোই জনসংখ্যা কমছে ইউরোপের দেশগুলোতেও। করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাবে ইউরোপে জন্মহার ১৪ শতাংশ কমার তথ্য উঠে এসেছে এক গবেষণায়। হিউম্যান প্রোডাকশন জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় ইউরোপে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে জন্মহার অনেক কম দেখা যাচ্ছে।

ওই গবেষণার বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, যেসব দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সঙ্কটাপূর্ণ ছিল, সেখানে জন্মহারের এই পতন আরও বেশি।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথম সংক্রমণ শুরু হলে পরে তা ইউরোপের দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। সংক্রমণ রোধে ২০২০ সালে ৯ থেকে ১০ মাস দীর্ঘ লকডাউনে যায় ইউরোপের অনেক দেশ। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দেখা যায়, লিথুয়ানিয়া ও রোমানিয়ায় জন্মহার কমেছে ২৮ ও ২৩ শতাংশ। অন্যদিকে সুইডেনে জন্মহার ছিল স্বাভাবিক, সংক্রমণ রোধে সে সময় লকডাউন ছিল না দেশটিতে।

গবেষকরা বলছেন, জন্মহার কমে যাওয়ার এই চিত্র ‘জনসংখ্যার ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে; বিশেষত পশ্চিম ইউরোপে, যেখানে বয়স্ক জনসংখ্যা রয়েছে।

লসান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের মিডওয়াইফ সোনোগ্রাফার গবেষক ডাক্তার লিও পোমার বলেন, লকডাউন যত দীর্ঘ হয়েছে গর্ভধারণও ততটা কমেছে। এমনকি মহামারীতে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়নি এমন দেশেও এমনটি ঘটেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক দূরত্ব, ভাইরাস সম্পর্কে ভীতি এবং সামাজিক ও আর্থিক সঙ্কট সম্ভবত দম্পতিদের সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্তে পরোক্ষ কারণ হিসাবে কাজ করেছে।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে আগের দুই বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ জন্মহার কমেছে। স্কটল্যান্ড ও ফ্রান্সে ১৪ শতাংশ এবং স্পেনে ২৩ শতাংশ কমেছে।

অন্যদিকে ২০২১ সালের মার্চে জন্মহার মহামারীর আগের অবস্থায় ফিরেছিল। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, জন্মহারের এই প্রত্যাবর্তন দুই মাসের আগের ক্ষতিপূরণ হিসাবে এসেছে বলে মনে হয় না।

এহেন অবস্থায় পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন দেশ অধিক হারে অভিবাসী গ্রহণ করে পরিস্থিতি সামাল দিলেও পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নেই তেমন কোনো উদ্যোগ। সমস্যা সমাধানে অভিবাসন ও জন্মহার বৃদ্ধি করতে পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর।

সম্প্রতি ইউরোপীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো তাদের জনসংখ্যা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। নতুন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউরোপে ১৯৬০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গড় জনসংখ্যা বেড়েছে ৩০ লাখ, কিন্তু ২০০৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তা নেমে এসেছে মাত্র ৭ লাখে। 

জনসংখ্যার হারের এই নিম্নগতির জন্য শঙ্কিত ইইউর নীতিনির্ধারকরা। অধিক অভিবাসী গ্রহণ ও জন্মহার বৃদ্ধি জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

কয়েক বছর ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে বিদেশিদের আবাসিক পারমিট সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিদেশিদের আবাসিক পারমিট বৃদ্ধি পেলেও তা শুধু পশ্চিম ইউরোপের কিছু দেশেই সীমাবদ্ধ থাকছে। উল্টোদিকে পূর্ব ইউরোপের বুলগেরিয়া ও রোমানিয়ার মতো দেশগুলোর প্রতি অভিবাসনপ্রত্যাশীদের তেমন আগ্রহ না থাকায় ওই অঞ্চলে জনসংখ্যা কমছে দ্রুতগতিতে। 

এমন পরিস্থিতিতে অভিবাসন আইন সহজীকরণ, বেতন কাঠামোর সমন্বয় ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করলে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে জনসংখ্যা সংকট দেখা দেবে বলে মনে করছে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশের অধিক ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের নাগরিক। আগামী কয়েক দশকের মধ্যে তা ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। অর্থনীতি ও উৎপাদন ঠিক রাখতে কর্মক্ষম জনসংখ্যা বৃদ্ধি তথা জন্মহার বাড়ানোর ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

এনএস//