জনসংখ্যায় চীনকে টেক্কা দিচ্ছে ভারত
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৪২ এএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:৪৯ এএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ বৃহস্পতিবার
চীন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। এরপরই রয়েছে ভারত। এশিয়ার এ দুটি দেশের প্রতিটির জনসংখ্যা ১৪০ কোটির বেশি। তবে তালিকার শীর্ষে চীন হয়তো বেশিদিন থাকবে না। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরের এপ্রিলের মাঝামাঝি জনসংখ্যার দিক দিয়ে চীনকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ভারত।
সম্প্রতি দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে চীনে তুলনামূলকভাবে খুব কম মানুষের জন্ম হয়েছে, মাত্র ১ কোটি ৬০ লাখ । ওই বছর দেশটিতে যে সংখ্যক মানুষ মারা গেছে, জন্মহার তার চেয়ে কিছুটা বেশি। চীনে জন্মহার কমে যাওয়ার কারণেই এমনটা হয়েছে।
এদিকে, ব্লুমবার্গের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালের শেষে ১৪১ কোটি ৭০ লাখে পৌঁছেছে ভারতের জনসংখ্যা। সেখানে চীনের জনসংখ্যা ১৪১ কোটি ৫০ লাখ। অর্থাৎ গত বছরেই ভারতের জনসংখ্যা ২০ লাখ বেশি হয়েছে। আগামীতে এ ব্যবধান আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে ম্যাকরোট্রেন্ডস নামের একটি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ভারতের জনসংখ্যা ১৪১ কোটি ৮০ লাখ হয়েছে, যা চীনের থেকে ৩০ লাখ বেশি।
চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো স্ট্যাটিস্টিকসের তথ্য বলছে, চীনে গত বছর জনসংখ্যা কমেছে ৮ লাখ ৫০ হাজার। সেখানে একই সময়ে জন্ম হয়েছে ৯৫ লাখ শিশুর, ১৯৫০ সালের পর যা সবচেয়ে কম। এছাড়া ২০২২ সালে করোনার পাশাপাশি অন্যান্য কারণে মৃত্যু হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ মানুষের।
ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর থেকে চীনের জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে। ভারতেও গত কয়েক দশকে জন্মহার কমেছে। দেখা গেছে, ১৯৫০ সালে একজন ভারতীয় নারী গড়ে ৫ দশমিক ৭ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, এখন তারা গড়ে দুটি সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন।
১৯৮৩ সালে চীনে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১ দশমিক ১ শতাংশ। এর আগে ১৯৭৩ সালে এই হার ছিল ২ শতাংশ। অর্থাৎ, মাত্র ১০ বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অর্ধেক কমেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবাধিকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে চীন সরকার এই লক্ষ্য অর্জন করেছে। দেশটি তার নাগরিকদের দেরিতে বিয়ে করতে এবং একটি সন্তানের জন্ম দিতে বাধ্য করেছে।
অন্যদিকে, ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার গত শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের বেশিরভাগ সময় তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল, প্রায় ২ শতাংশ। লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সের জনসংখ্যাবিদ টিম ডাইসন বিশ্বাস করেন, এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এখনও বেশি।
কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে মৃত্যুর হার কমেছে, বেড়েছে গড় বয়স ও আয়। একই সঙ্গে আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছে নগরবাসী। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার মোকাবেলায় ভারত সরকার ১৯৫২ সালে একটি পরিবার পরিকল্পনা প্রকল্প চালু করে।
এরপর তারা ১৯৭৬ সালে জাতীয় জনসংখ্যা নীতি বাস্তবায়ন করে। এমন এক সময়ে যখন ভারত সবেমাত্র জনসংখ্যা নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে, তখন চীন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত ছিল। ১৯৭৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
সে সময় ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় অভিযোগ ওঠে। পরিবার পরিকল্পনা প্রকল্পের আওতায় দেশের লাখ লাখ দরিদ্র মানুষকে বাধ্য করা হয়েছে এবং সন্তান ধারণের ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সে সময় ভারতবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছিল।
টিম ডাইসনের মতে, যদি জরুরি অবস্থা ঘোষণা না করা হতো এবং রাজনীতিবিদরা যদি আরও সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতেন, তাহলে ভারতের জন্মহার আরও দ্রুত কমে যেত। ভারত শুরু থেকেই জাতিসংঘের সদস্য। তবে দেশটি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হওয়ার জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে।
চীনসহ বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি সদস্য দেশ রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হলে ভারতের দাবি আরও জোরালো হবে। এই বিশেষজ্ঞদের একজন হলেন জন উইলমোথ। তিনি জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগের জনসংখ্যা বিভাগের পরিচালক।
জন উইলমোথ বলেন, 'আমি মনে করি, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হওয়ায় ভারতের কিছু দাবি থাকতে পারে।' ২৫ বছরের কম বয়সী বিশ্বের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন ভারতে বাস করেন। ভারতের মোট জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের নিচে।
আর দুই-তৃতীয়াংশ ভারতীয় গত শতাব্দীর নব্বই দশকের গোড়ার দিকে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় ভারত অর্থনীতির দিক থেকে অনেক উন্নতি করে।
অর্থনীতিবিদ শ্রুতি রাজাগোপালন মনে করেন, এই তরুণরা ভারতের জন্য আশীর্বাদ। তিনি জানান, এই তরুণ প্রজন্ম ভারতের বৃহত্তম ভোক্তা বিভাগ গঠন করবে। এছাড়া তারা দেশের বৃহত্তম কর্মক্ষম জনসংখ্যাতে পরিণত হবে।
এদিকে মহামারিতে ভারতে বহু মানুষের মৃত্যু হলেও জন্মহারের কারণে জনসংখ্যা বেড়েছে। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, ২০২২ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির অর্ধেকের কারণ হবে এশিয়া ও আফ্রিকার ৮টি দেশ। সেগুলো হল কঙ্গো, মিশর, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, তানজানিয়া, ফিলিপাইন ও ভারত।
চীনের বিরাট জনসংখ্যা দেশটির অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। এমনকি বিশ্ব অর্থনীতিতে তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এ অবস্থায় ছয় দশকে প্রথমবারের মতো চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার বিষয়টি ভাবাচ্ছে অনেককে। অন্যদিকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত ভারতে জনসংখ্যার বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে তার কী প্রভাব পড়তে পারে, সেটিও নজরে রাখছেন বিশ্লেষকরা।
এনএস//