হঠাৎ এত শীত কেন?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:২০ এএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ বৃহস্পতিবার
প্রত্যেক বছরই নিয়ম করে শীত পড়ে। পারদও নামে ভালো মতোই। কিন্তু শীতের দাপট চলতি বছর একটু বেশিই মনে হচ্ছে। পৌষের শেষদিকে উত্তরের জনপদে বয়ে গেছে শৈত্যপ্রবাহ। সিলেট অঞ্চলের শ্রীমঙ্গলেও যা অব্যাহত ছিল। এতে জনজীবনে নেমে আসে স্থবিরতা। যে স্থবিরতা দেখা গিয়েছে রাজধানী ঢাকাতেও। সাধারণত ‘ঢাকায় তেমন শীত পড়ে না’ এ কথা এবার আর কাজে আসেনি। হঠাৎ করেই তীব্র শীতে কেঁপেছে ঢাকা।
শীতের এমন উল্টো চিত্র কেন, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
তাদের মতে, এমন আচরণের অন্যতম কারণ গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানালেন, শীতকালে সূর্যরশ্মি তীর্যকভাবে পড়ে। আবার সূর্যরশ্মি সব জায়গায় সমানভাবে পড়ে না। তার ফলে বিভিন্ন জায়গায় তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে। তাছাড়া তাপমাত্রা কমার পিছনে দূষণ একটা বড় কারণ হতে পারে। অন্যান্য জায়গার তুলনায় ঢাকার বাতাসে দূষিত কণার পরিমাণ বেশি লক্ষ্য করা গেছে। যে কারণে সূর্যরশ্মি এখানে পড়তে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এজন্যই চলতি বছর ঢাকার তাপমাত্রা কম।
আবহাওয়াবিদরা জানান, সাধারণত বছরের শেষ অর্থাৎ ১৫ ডিসেম্বর থেকে বছরের শুরু অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শৈত্যপ্রবাহের একটা সম্ভাবনা থাকে। আবহাওয়ার আঞ্চলিক প্রভাবের কারণে বিভিন্ন জায়গায় তাপমাত্রার হেরফের ঘটে থাকে। তবে, তাপমাত্রায় এই হঠাৎ পতনের পিছনে মূলত দূষণকেই দায়ী করছেন আবহবিদেরা।
তাঁদের বক্তব্য, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে অনেক এলাকায় অনেক অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটছে। কোথাও অতিরিক্ত ঠান্ডা আবার কোথাও অতিরিক্ত গরম অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রার এই ওঠানামার অন্যতম কারণ এই বিশ্ব উষ্ণায়ন।
তবে, আবহবিদেরা এটাও বলছেন, চলতিবছরে তাপমাত্রার যে পরিবর্তন দেখা গিয়েছে তাতে অস্বাভাবিক কিছু দেখা যাচ্ছে না। এটা স্বাভাবিক। অতীতে এমনটা হয়েছে। কোনও কোনও বছর প্রাকৃতিক নানা কারণে শীত বাধাপ্রাপ্ত হয়। এবার এখন আকাশ পরিষ্কার থাকায় ভাল শীত পড়েছে।
হঠাৎ করে তাপমাত্রা এতটা কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক বলেন, “ভারতের দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ ও বিহার অঞ্চলে একটা কুয়াশা অঞ্চল ছিল। সেটি ধীরে ধীরে বেড়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। সাধারণত সেই কুয়াশা অঞ্চল দেশের মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত এসে থাকে। কিন্তু এবার এই কুয়াশা অঞ্চল ৩ জানুয়ারি দেশের মধ্যাঞ্চল ছাড়িয়ে ঢাকা পর্যন্ত এসেছিল। ৪ জানুয়ারি সেই কুয়াশা অঞ্চল ঢাকা হয়ে বরিশাল ও চট্টগ্রাম পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। এজন্যই শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক বেশি শীত অনুভূত হয়। তবে যদি কুয়াশা কমে যায় তাহলে ওইভাবে শীত থাকবে না।”
আবহাওয়া অফিস আরও বলছে, হিমালয় থেকে ধেয়ে আসা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের কারণে আবহাওয়ার এমন রূপ দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে শীত পৌষের শুরুতে অনুভূত হওয়ার কথা ছিল সেটি শেষে এবং মাঘের প্রথমদিকে অনুভূত হচ্ছে।”
এসএ/