বিমার টাকা পেতে খুনের নাটক সরকারি কর্মচারির
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:২৮ পিএম, ২১ জানুয়ারি ২০২৩ শনিবার
শেয়ার মার্কেটে কোটি টাকার ক্ষতি পোষাতে নিজের মৃত্যুর গুজব ছড়ানোর অভিযোগ উঠে ভারতের তেলেঙ্গানার এক সরকারি কর্মচারির বিরুদ্ধে। উদ্দেশ্য ছিল একাধিক বিমার মোট ৭ কোটি টাকা হাতানো। যদিও শেষ পর্যন্ত উদ্দেশ্য সফল হয়নি। উল্টো অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই সরকারি কর্মচারী তেলঙ্গানার রাজ্য সচিবালয়ের সহকারী বিভাগীয় কর্তা (অ্যাসিসট্যান্ট সেকশন অফিসার বা এএসও )। তার নাম প্রকাশ না করলেও কুকর্মের বিশদ ফিরিস্তি দিয়েছেন তদন্তকারীরা।
তারা জানিয়েছেন, শেয়ারবাজারে ৮৫ লাখ রুপি খুইয়ে জীবনবীমার টাকা পাওয়ার ছক কষেছিলেন ওই সরকারি কর্মী। তার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে ধীরে ধীরে সাজিয়েছিলেন নিখুঁত পরিকল্পনা। পরিকল্পিত অপরাধ নিয়ে তৈরি বলিউডের ছবি ‘দৃশ্যম’-এর কথা মনে পড়ে যেতে পারে। এই সরকারি কর্মচারীও খানিকটা একই অধ্যাবসায়ে সাজিয়েছিলেন গোটা ঘটনা।
দেনার দায়ে জর্জরিত ওই এএসও এক বছর ধরে ২৫টি জীবনবীমার পলিসি করান। যার মূল্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি রুপি। সেই বীমা করানোর পর শুরু হয় পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ বীমার টাকা পাওয়ার চেষ্টা।
জীবনবীমার টাকা। সেই টাকা মৃত্যুর পরই পাওয়ার কথা বীমাকারীর। ওই সরকারি কর্তা এর পর খুঁজতে শুরু করেন এমন একজনকে, যার সঙ্গে তার চেহারার মিল রয়েছে। পেয়েও যান।
পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি মেদক জেলারই একটি গ্রামের সীমান্তে একটি খাদের গভীরে পাওয়া যায় পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া একটি মরদেহ। আগুনে জ্বলে যাওয়া একটি গাড়ির চালকের আসনে বসানো ছিল মরদেহটি।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে মৃত ব্যক্তি একজন সরকারি কর্মচারী। হায়দরাবাদে রাজ্যের সচিবালয়ের কর্তা তিনি। বয়স ৪৪।
কিন্তু তদন্ত এগোতেই জানা যায়, যার মৃত্যুর তদন্তে তারা নেমেছেন, তিনি বহাল তবিয়তে বেঁচে আছেন।
পুলিশ জানতে পারে, ঘটনাটি ঘটে গত ৮ জানুয়ারি। ওই সরকারি কর্মচারি তার এক আত্মীয়ের সঙ্গে নিজামাবাদ রেলস্টেশন থেকে এক ব্যক্তিকে কথায় ভুলিয়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে আসেন।
জানা যায়, মধ্যবয়সী ওই ব্যক্তিকে এরপর নিজের মাথার চুল কামিয়ে ফেলতেও বাধ্য করেন তারা। পরিয়ে দেন অফিসারের পোশাক।
তারপর একটি গাড়িতে পেট্রল ঢেলে তাকে তার ভিতরে বসতে নির্দেশ দেন ওই সরকারি কর্তা।
পুলিশের অনুমান, ওই ব্যক্তি তাতে আপত্তি জানালে তাকে খুন করে গাড়িতে বসিয়ে দেওয়া হয়। তার আগে তার পোশাকের ভিতর ঢুকিয়ে দেন নিজের পরিচয়পত্র।
পুলিশ এই ঘটনায় ওই সরকারি কর্মী, তার স্ত্রী এবং দুই আত্মীয়কে গ্রেফতার করেছে।
‘দৃশ্যম’ ছবিতে মূল চরিত্রাভিনেতা অজয় দেবগণের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। সেই খুনে জড়িত ছিলেন তার স্ত্রী এমনকি, দুই কন্যাও। অপরাধ সংক্রান্ত সিনেমাপ্রেমী অজয় নিখুঁত পরিকল্পনায় আইনের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিয়েছেলেন চারজনকেই।
কিন্তু বাস্তবের ‘দৃশ্যম’-এ অবশ্য ভিন্ন দৃশ্য দেখল তেলেঙ্গানা। যেখানে পরিকল্পনা সাজিয়েও শেষ রক্ষা হল না পরিকল্পনাকারীর।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
এমএম/