মার্চে বড় জাহাজ ভিড়বে কৃত্রিম গভীর সমুদ্র বন্দরে (ভিডিও)
রফিকুল বাহার, চট্টগ্রাম থেকে
প্রকাশিত : ১২:০৩ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ বুধবার
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলা কক্সবাজারের মহেশখারীর মাতারবাড়ি সমুদ্র উপকূলে তৈরি হতে যাচ্ছে প্রথম কৃত্রিম গভীর সমুদ্র বন্দর। চার বছর পর এর নির্মাণ কাজ শেষ হলে এটি হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বন্দর ব্যবস্থাপনার আঞ্চলিক কেন্দ্রস্থল।
এক হাজার একর ভূমির উপর আনুমানিক ১৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের মাটি খনন করে ১৮ মিটার গভীর বেসিন তৈরি করে কৃত্রিম এই বন্দর বানানো হচ্ছে। এখানে ভিড়বে বিশাল আকৃতির জাহাজ। বিশাল আকৃতির জাহাজ এখন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে নোঙর করে ছোট জাহাজে পণ্য খালাস শেষে গন্তব্যে পৌঁছানো হয়। এতে সময় ও খরচ দুটোই বেশি লাগে।
এই প্রকল্পে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদী ১২ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকার ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি জাইকা। বাংলাদেশ সরকার ২ হাজার ৬৭১ কোটি এবং চট্টগ্রাম বন্দর ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম বলেন, “বাংলাদেশ সরকার যেমন সিরিয়াস তেমনি ডোনার কান্ট্রিও একই ধরনের সিরিয়াসলি কাজ করছে।”
সিঙ্গাপুর-শ্রীলঙ্কা-মালয়েশিয়ার প্রধান বন্দরগুলো থেকে ৮ হাজার ২০০ কন্টেইনার কিংবা ৭০ হাজার মেট্রিক টন পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার মুখেই পড়বে মাতারবাড়ি। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে দুই ঘণ্টা আগেই বড় বড় জাহাজ পৌঁছে যাবে মাতারবাড়িতে। আন্তর্জাতিক পণ্য বাজারে ‘কম সময়-কম দামে’ প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে এই ধরনের বন্দরের প্রয়োজন ও চাহিদা অনেক আগেই তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা।
চট্টগ্রাম বন্দর সংসদীয় আসনের এমপি এম এ লতিফ বলেন, “সেভেন সিস্টার থেকে শুরু করে চায়না-মিয়ানমারসহ অনেক দেশে মাল ট্রানজিট হবে।”
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “সরকার যতগুলো মেগাপ্রকল্প নিয়েছে তার মধ্যে এটা অপরিহার্য ছিল। এটি দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখবে।”
চট্টগ্রাম বন্দর কর্মকর্তারা বলেন, এ সমুদ্র বন্দর থেকে নৌপথের পাশপাশি সড়কপথেও যোগাযোগ থাকবে। এরপর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন এখানে যুক্ত হবে। সবকিছু মিলে এই বন্দর বাংলাদেশের সক্ষমতার ব্র্যান্ডিং করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এখান থেকে সরাসরি বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে বড় বড় জাহাজ চলাচল করতে পারবে।
চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, “বন্দরটাকে যদি রিজিওনাল হাব হিসেবে গড়ে তুলতে পারি তাহলে সারাবিশ্বে আমরা পরিচিতি লাভ করতে পারবো।”
লোক চলাচল থেকে অনেক দূরে উপকূলীয় এলাকায় বিশাল এই কর্মযজ্ঞ চলছে নিরবেই। এবন্দর চালু হওয়ার আগেই আগামী মার্চে কয়লাবাহী বড় জাহাজ ভেড়ানো হবে। জুলাই-আগস্টে এখান থেকে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
উন্নত বিশ্বের অত্যাধুনিক গভীর সমুদ্র বন্দরের গল্প শুনতাম। আর এখন বিদেশিদেরকে আমাদের বানানো মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রের গল্প শুনাবো।
এএইচ