মানুষ মাকড়সায় ভয় পায় কেন?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:০৯ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ রবিবার
আটপায়ে ছোট্ট একটা প্রাণি মাকড়শা। কিছু প্রজাতি বাদ দিলে প্রায় সব মাকড়শাই নিরীহ এবং ভিতু প্রকৃতির প্রাণি। তাহলে তাদের দেখলেই কেন শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত নেমে যায় আমাদের? কেন মানুষ মাকড়শাকে ভয় পায়? সেই প্রশ্নের উত্তর থাকছে আজকের লেখায়।
অ্যারাকনোফোবিয়া বা মাকড়শার ভয়। এই ভয়ে ভুগে থাকেন পৃথিবীর প্রতি দশজন মানুষের মধ্যে একজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভয়টা শুধু মাকড়শা নিয়েই নয়, পোকামাকড় ও এর কাছাকাছি প্রাণী, যেমন– সাপ, বাদুড় ইত্যাদি সবকিছু ঘিরেই এমন ভয় কাজ করে মানুষের মধ্যে। আর আমাদের মধ্যে যারা উপরের তালিকার যেকোনো একটি প্রাণীকে ভয় পান, তারা অন্যান্য পোকা, সরীসৃপ ইত্যাদি দেখেও ভয় পান।
মাকড়শাকে ভয় পাওয়া আর মাকড়শার জালকে ভয় পাওয়া, দুটো একই ফোবিয়ার মধ্যে পড়ে। কারণ অ্যারাকনোফোবিয়ার ভুক্তভোগী শুধু জাল দেখেই মাকড়শা আশেপাশে থাকতে পারে, এই ভেবে ভয় পায়।
‘অ্যারাকনে’ আর ‘ফোবোস’ নামের দুটো গ্রিক শব্দকে জুড়ে এই ভয়ের জন্ম। কালের পরিক্রমায় নানারকম ক্ষতিকর প্রাণীর প্রতি সহজাতভাবেই ভয় তৈরি হয়েছে মানুষের মধ্যে। এই যেমন সাপ, যা আগেও বিষাক্ত ছিল, এখনও তা-ই। কিন্তু বিষ নেই এমন একটা সাপকেও আশেপাশে দেখলে আপনার শরীর ভয়ে কেঁপে উঠবে। এমন কেন? কারণ, আপনি জানেন, আপনার শরীরের ডিএনএ জানে যে সাপ বিষাক্ত। অনেকটা সহজাত প্রতিক্রিয়া চলে আসে তাই আপনার মধ্যে।
একই ঘটনা ঘটে মাকড়শার বেলায়ও। মাকড়শা থেকে বিষ, বিষ থেকে অসুস্থতা- এই চিন্তা থেকেই শুরু হয় অ্যারাকনোফোবিয়া। অনেকটা প্রাকৃতিকভাবেই। কাজেই, মাকড়শাকে ভয় পাওয়ার জন্য আপনাকে মাকড়শার কামড় খেতে হবে এমনটা কিন্তু না। মাকড়শা যে ভয়ের, সেটা আপনার মাথায় এমনিতেই গেঁথে রেখেছে প্রকৃতি। সেখান থেকেই আপনি হয়ে যাচ্ছে অ্যারাকনোফোবিয়ার ভুক্তভোগী।
এই থিওরিকে সামনে ধরেই জার্মানিতে একটি গবেষণা চালানো হয়। শিশুদের মাছ, ফুল, সাপ, মাকড়শা ইত্যাদি দেখানো হয়। আর তাতে দেখা যায় যে, মাকড়শা আর সাপের বেলাতেই বাচ্চাদের চোখের মণির আকৃতি বদলাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে তারা। এই ভয় কিন্তু মাকড়শাকে আগে থেকে না দেখেই ওদের মধ্যে তৈরি হয়েছে।
অবশ্য, ভয় ছাড়াও বিরক্তি আর অস্বস্তিও হতে পারে অ্যারাকনোফোবিয়ার কারণ। আপনি শুধু মাকড়শাকে ভয় পেয়ে ওই জায়গা থেকে সরে যান বা মাকড়শাটাকে তাড়িয়ে দেন? এই ভীতির কবলে পড়ে অনেকে নিজের বাসাও ছাড়তে বাধ্য হন কখনো কখনো। মজার ব্যাপার হলো, আজ এই সময়ে এসে ব্যাপারটাকে শুধু একটা ভীতি মনে হলেও এই ভয়ই কিন্তু একটা সময় মানবজাতিকে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। বর্তমানে অনেক মাকড়শার মধ্যেই মানুষকে আক্রান্ত করার মতো বিষাক্ত তরল থাকলেও সেটা মানুষের শরীরে প্রবেশ করানোর মতো ধারালো আর লম্বা হুল থাকে না। পৃথিবীর ৬৩,০০০ প্রজাতির মাকড়শার মধ্যেও শুধু ২ শতাংশই মানুষের জন্য বিষাক্ত।
আর হ্যাঁ, এসব বাদেও আপনার পরিবেশটাও আপনার মধ্যে অ্যারাকনোফোবিয়া তৈরি করতে পারে। বাবা-মা, চারপাশের মানুষ যেটাকে ভয় পাচ্ছে, সেটাকে আপনি কেন ভয় পাবেন না? নিজে নিজেই তাই আগে থেকে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও মানুষ হয়ে পড়তে পারেন এই আদিম ফোবিয়ার ভুক্তভোগী!
সূত্র: ইন্টারনেট
এমএম/