নাদালের বিশ্বরেকর্ডে ভাগ নোভাকের, বসলেন শীর্ষেও
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:২৫ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ রবিবার
নোভাক জোকোভিচ
অঘটন হলো না। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে যে ছন্দে শেষ কয়েকটি ম্যাচে খেলেছেন, সেই একই ছন্দ বজায় রেখে ফাইনালে স্টেফানোস সিসিপাসকে হারালেন নোভাক জোকোভিচ। সার্বিয়ার খেলোয়াড় জিতলেন ৬-৩, ৭-৬ (৭-৪), ৭-৬ (৭-৫) গেমে।
এ নিয়ে ১০ম বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতলেন নোভাক জোকোভিচ। ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে ছুঁয়ে ফেললেন রাফায়েল নাদালকে। একই সঙ্গে টেনিসের ক্রম তালিকায় কার্লোস আলকারাজকে সরিয়ে ফিরে পেলেন শীর্ষস্থান।
সিসিপাসের ফোরহ্যান্ডটা কোর্টের বাইরে পড়তেই মাথায় হাত দিয়ে একটা ইঙ্গিত করলেন জোকোভিচ। দর্শকদের সামান্য অভিবাদন জানিয়ে সোজা উঠে গেলেন দর্শক আসনে, যেখানে ছিলেন তার কোচ গোরান ইভানিসেভিচ এবং বাকিরা।
উল্লাস করতে করতেই শুয়ে পড়লেন সেখানেই। জোকোভিচের চোখ ফেটে বেরোচ্ছিল পানি। এর আগে কোনো দিন ট্রফি জেতার পর এতোটা কাঁদতে দেখা যায়নি তাকে।
এই কান্না অবশ্য ৩৫ বছর বয়সে ২২তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার জন্য নয়, এটা প্রায় সবাই বুঝতে পেরেছেন। নিঃসন্দেহে এক বছর আগের ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছিল তার।
অস্ট্রেলিয়ায় এসেও নামতে পারেননি কোর্টে। টানা দুই সপ্তাহ সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াই চলার পর মাথা নীচু করে কার্যত অপরাধীর মতো দেশ ছাড়তে হয়েছিল। অপরাধ ছিল কোভিড প্রতিষেধক নিতে রাজি না হওয়া। এক বছর পর কী অভূতপূর্বই না প্রত্যাবর্তন! রোববারের (২৯ জানুয়ারি) ট্রফি জয় যেন অস্ট্রেলিয়ার পূর্বতন সরকারকেই সপাটে জবাব।
চলতি অস্ট্রেলিয়ার ওপেনে একবারই চার সেটের ম্যাচ খেলতে হয়েছে জোকোভিচকে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্সের খেলোয়াড় এনজো কুয়াকুদের বিপক্ষে। সেই ম্যাচের দ্বিতীয় সেট টাইব্রেকারে হারার পর বাকি দু’টি সেটে প্রতিপক্ষকে দাঁড়াতেই দেননি নোভাক।
তার পর যে চারটি ম্যাচ খেলেছেন, কোনোটিতেই লড়াই করতে পারেননি প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়। সবকটি জয়ই এসেছে স্ট্রেট সেটে। শেষ তিনটি ম্যাচে তো বিপক্ষকে আট গেমের বেশি নিতেই দেননি। এতটাই ভয়ঙ্কর ছিল জোকোভিচের খেলা।
মনে করা হয়েছিল, সিসিপাস সেই যাত্রা থামাতে পারবেন। বিশেষত, গত কয়েক দিন ধরে যে ছন্দে ছিলেন গ্রিসের খেলোয়াড়, তাতে কিছুটা লড়াই অন্তত আশা করা হচ্ছিলো। কিন্তু সেটা দেখা গেল না। ম্যাচের মাঝে বার কয়েক প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন বটে। তবে জোকোভিচের আগ্রাসনের সামনে তা টিকতে পারেনি।
রড লেভার আরেনায় এদিন প্রথম সেটের চতুর্থ গেমেই সিসিপাসকে ব্রেক করেন জোকোভিচ। দুই খেলোয়াড় প্রথম দিকে নিজেদের সার্ভ ধরে রাখার পর চতুর্থ গেমে লম্বা র্যালি দেখা যায়। জোকোভিচ ব্রেক করেন সিসিপাস ডাবল ফল্ট করায়। এর পরে দুই খেলোয়াড়ই নিজেদের সার্ভ ধরে রাখেন। কিন্তু ওই একটি ব্রেকে যে ব্যবধান তৈরি হয়ে যায়, তা আর পূরণ করা যায়নি।
দ্বিতীয় সেটে তাই শুরু থেকেই সিসিপাসের লক্ষ্য ছিল কোনো মতে যাতে ব্রেক না করতে পারেন জোকোভিচ। সেটা করতে গিয়েই দুর্দান্ত কিছু রিটার্ন এবং ফোরহ্যান্ড বের হলো গ্রিস ম্যানের র্যাকেট থেকে।
দীর্ঘদেহী গ্রিক খেলোয়াড়ের সার্ভ এমনিতেই শক্তিশালী। তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায় তার ব্যাকহ্যান্ডকেও। এক হাতে ব্যাকহ্যান্ড দর্শনীয় করে তুলেছিলেন রজার ফেদেরার। পরের দিকে যা দেখা যায় গ্রেগর দিমিত্রভের হাতে। সেই তালিকায় সিসিপাস ঢুকে পড়লে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এতটাই শক্তিশালী ব্যাকহ্যান্ড মারতে পারেন তিনি।
টান টান লড়াই হলো দুই খেলোয়াড়ের মধ্যে। কেউ কাউকে এক চুল যেন ছেড়ে দিলেন না। ফলে দুজনেই নিজেদের সার্ভ ধরে রাখলেন শেষ পর্যন্ত। টাইব্রেকারে বাজি মারলেন জোকোভিচ। সেখানেও শুরুতে লড়াই হয়েছে। ৪-৪ ছিল এক সময়। সিসিপাসের জোড়া ভুলের সুযোগ নিয়ে এগিয়ে যান জোকোভিচ। সেখান থেকে তাকে আর আটকানো যায়নি।
২০১০-এর পর কোনো দিন গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট জেতার পর হারেননি জোকোভিচ। সেই নজির হঠাৎই ভাঙার উপক্রম হয় তৃতীয় সেটের শুরুতে। প্রথম গেমেই জোকোভিচকে ব্রেক করে দেন সিসিপাস। টেনিসপ্রেমীরা তখনই নড়েচড়ে বসলেন।
প্রশ্ন ওঠে, অ্যান্ডি মারে কিছু দিন আগে যে প্রত্যাবর্তন দেখিয়েছিলেন, এবার সিসিপাসের সেটা দেখানোর পালা? তবে আনন্দ স্থায়ী হলো মাত্র কিছুক্ষণ। পরের গেমেই সিসিপাসকে ব্রেক করলেন জোকোভিচ।
খেলা আবার সমান-সমান। তার পর আবার দ্বিতীয় সেটেরই প্রতিফলন। দুজনেই নিজেদের সার্ভ ধরে রাখলেন। টাইব্রেকারে শুরুতেই ৫-০ এগিয়ে গেলেন জোকোভিচ। তার পরেও প্রত্যাবর্তন করলেন সিসিপাস। কেড়ে নিলেন পাঁচটি পয়েন্ট। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। হেরে গেলেন ৭-৫ গেমেই।
এনএস//