নারী ঘটিত বিষয়ে হাবিপ্রবির দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ
হাবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৯:০৬ এএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বুধবার | আপডেট: ০২:৫১ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বুধবার
নারী ঘটিত পূর্বের ঘটনার রেশ ধরে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের ৮-১০ জন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকালে শেখ রাসেল (সম্প্রসারিত) হল ও জিয়া হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯ সালে নারী ঘটিত একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে। তার রেশ ধরে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের ভেতরে ১৯ ব্যাচের ফুড অ্যান্ড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির সামিউল ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের জাহিদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সামিউলকে মারধর করেন জাহিদসহ ৬-৭ জন।
সেসময় পাশে থাকা ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক এবং একজন সহকারী প্রক্টর এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন।
পরে বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন সামিউল। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীনের রুমে ডাকা হয় জাহিদকে। জাহিদ বিষয়টি তার হলের বন্ধুদের জানিয়ে সেখানে যায়।
সমঝোতা চলাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল (সম্প্রসারিত) হলের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে ঢুকে পরে। সেখানে শিক্ষকদের সামনেই হট্টগোল বাধায় তারা। শিক্ষকরা বিশৃঙ্খলা থামানোর চেষ্টা করলে পরিস্থিতি শান্ত না হয়ে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
এসময় ফুড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৭ ব্যাচের শুভ্র এবং আবেদীন আঘাতপ্রাপ্ত হন।
এর আগে জিয়া হলের আকাশ কলাপসিবল গেট লাগিয়ে ফ্যাকাল্টিতে ঢোকায় জাহিদের সঙ্গে থাকা বন্ধুদের শাসালে শেখ রাসেলের ছেলেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হয়ে আসেন বলে অভিযোগ করেন জাহিদ ও তার বন্ধুরা।
তবে, অভিযোগের ব্যাপারে জানতে সেসময় তার (আকাশের) কক্ষে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি এবং ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এরপর উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টিতে। সেখানে জিয়া হলের কিছু শিক্ষার্থী আহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে জিয়া হল থেকে ছেলেরা বের হয়ে আসে। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে শেখ রাসেল (সম্প্রসারিত) হল ও জিয়া হলের শিক্ষার্থীরা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জড়িয়ে পড়েন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উক্ত ঘটনার বিচারের আশ্বাসে আধাঘন্টা পরে উভয়পক্ষ শান্ত হয়।
ঘটনার ব্যাপারে অভিযোগকারী সামিউল বলেন, “১৯ সালে এগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির পর এক মেয়ের সঙ্গে আমার স্বাভাবিক বন্ধুত্ব হয়। তবে তার সঙ্গে মেশা মেয়ের বয়ফ্রেন্ড ভালোভাবে নেয়নি। একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় গেটে দেখা করতে ডাকে। সেখানে তার কথা বলার অ্যাপ্রোচ দেখে সেদিন আমার সঙ্গে থাকা ম্যাথের এক বন্ধু ও ১৮ ব্যাচের একজন বড়ভাই ওকে ডাকতে বলেন। আমি তাদের ডাকি।
এরপর তারা আসলে রাত ৮টায় সেই মেয়ে বাহিরে থাকা নিয়ে প্রশ্ন করেন। তখন মেয়ের বয়ফ্রেন্ড জাহিদ বড়ভাইদের সঙ্গে তর্ক করলে তাকে শাসিয়ে দেন। পরে হলের ভাইরা আমাদের দুজনকে ডেকে বিস্তারিত শুনে ঘটনা মিটমাট করে দেয়। জাহিদ তখন ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়নি। ঐ ঘটনার পর সেই মেয়ের সঙ্গে আমার কোন যোগাযোগ নেই।”
জাহিদ বলেন, “আমি সামিউল ভাইকে দেখে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে গিয়েছিলাম। কথাবার্তার এক পর্যায়ে একটু হাতাহাতি হয়। ওই ভাই সেকেন্ড টাইমার হওয়ায় সিনিয়রিটি খাটাতো এবং বিভিন্ন সময়ে আমার গার্লফ্রেন্ডকে উত্যক্ত করতো।”
সংঘর্ষের ঘটনায় ইটের আঘাতে উভয়পক্ষের ৮-১০ জন আহত হয়েছেন। ক্যাম্পাসে নারী ঘটিত বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে অভিমত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সহকারী প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক ড. শামীম হোসেন জানান, সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ ও হল সুপারবৃন্দসহ দুই হলের ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির মিমাংসা করা হয়েছে।
এসময়ের দুই হলের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীরা এ ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আর জড়িয়ে পড়বে না বলে লিখিত দেয়। তদন্ত সাপেক্ষে অনুষদের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলাকারীদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এএইচ