ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

ফিরে এলো রক্তে রাঙ্গানো ফেব্রুয়ারি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৪৬ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বুধবার

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’- রক্তে রাঙানো সেই ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে। আজ থেকে ধ্বনিত হবে সেই অমর সংগীতের অমিয় বাণী। বাঙালী জাতি সারা মাসজুড়ে ভালোবাসা জানাবে ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের। সেই সঙ্গে শুরু হচ্ছে মাস ব্যাপি একুশে বইমেলা।

ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ। জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ ঘটে এখান থেকেই।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে দুর্বার আন্দোলনে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিকের রক্তের বিনিময়ে বাঙালী জাতি পায় মাতৃভাষার মর্যাদা এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেরণা। তারই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালীর স্বাধীকার আন্দোলন এবং একাত্তরে ৯ মাস পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে জন্ম নেয় দু’টি রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান। ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক পার্থক্য থাকার পরও পূর্ব বাংলা হয় পাকিস্তানের অংশ। কিন্তু, শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণের শিকার হতে থাকে পূর্ব বাংলার মানুষ। মোটা দাগে প্রথম আঘাত আসে ভাষার উপর। ৫৬ শতাংশ বাঙালী বাংলায় কথা বললেও মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের ভাষা উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন তৎকালীন গভর্নর মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তার এই ঘোষণায় ফুঁসে উঠে বাঙালী। দানা বাঁধতে থাকে আন্দোলন। 

১৯৪৭ সালেই গঠিত হয় তমুদ্দিন মজলিস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে সভা করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে জনমত গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বাঙালী সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান। তার এই প্রস্তাবের বিরোধীতা করেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান সহ অবাঙালী সদস্যরা। এর কিছুদিন পরই পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী আবারো গণপরিষদে আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব পাঠায়। তাদের এসব ঘৃণ্য চক্রান্তের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয় ভাষা সংগ্রাম কমিটি। 

১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন পল্টন ময়দানে জনসমাবেশে আবারো ঘোষণা দেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার এই ঘোষণা আন্দোলনের বারুদে অগ্নিসংযোগ করে। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই শ্লোগানে মুখর হয়ে উঠে পূর্ব বাংলা। ৪ঠা ফেব্র“য়ারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পালিত হয় স্বত:স্ফূর্ত ধর্মঘট। শুধু ছাত্ররাই নয়, ভাষার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সহ আপামর জনগন। ২১ শে ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করলে আগের দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। ২১ শে ফেব্রুয়ারি সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে এলে গুলি চালায় পুলিশ। রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, শফিউরের রক্তে রঞ্জিত হয় ঢাকার রাজপথ। ভাষার দাবিতে প্রাণদানের হয় নতুন ইতিহাস। মাতৃভাষার দাবিতে আত্মোৎসর্গের ঘটনা ক্রমেই নজর কাড়ে বিশ্ববাসীর। 

১৯৯৯ সালে দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ। ফেব্রুয়ারি এলেই আবেগাপ্লুত হয় বাঙালী। ভাষা শহীদদের রক্তে যেন আরো লাল হয়ে ফোটে পলাশ-শিমুল। তারপরও, রক্তে লেখা বর্ণমালা সাহস যোগায় বাঙালীকে দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে চলার।

বস্তুত ফেব্রুয়ারি মাস একদিকে শোকাবহ হলেও অন্যদিকে আছে এর গৌরবোজ্জ্বল দিক। কারণ, পৃথিবীর একমাত্র জাতি বাঙালী ভাষার জন্য এ মাসে জীবন দিয়েছিল।

ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর থেকেই শুরু হয় ননা কর্মসূচি। এ মাসের সবচেয়ে বড় কর্মযঞ্জ মাস ব্যাপি বইমেলা। বাংলা একাডেমিতে বিকাল তিনটায় এই মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসএ/