দালালনির্ভর অসংখ্য হাসপাতাল, নেই যন্ত্রপাতি-ডাক্তার (ভিডিও)
রাসেল খান, একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০১:০৪ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বৃহস্পতিবার
দালালদের ওপর ভরসা করে রাজধানীতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হাসপাতাল। নেই যন্ত্রপাতি, না আছে পর্যাপ্ত ডাক্তার। স্বাস্থ্য অধিদফতর মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও তা আসলে লোকদেখানো। রোগীদের কাছে কসাইখানা নামে পরিচিত এসব হাসপাতাল।
চিকিৎসার অব্যবস্থাপনা নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন বাগবিতণ্ডা হচ্ছে প্রায়শই। কথা মতো সেবা না মেলায় হচ্ছে হট্টগোল।
দালালদের ওপর ভরসা করে শুধু শ্যামলী আর মোহম্মদপুরেই গড়ে ওঠেছে ৫৬টি হাসপাতাল। ভূক্তভোগীদের অভিযোগ, ক্লিনিকপল্লী নামে খ্যাত শুধু শ্যামলীতেই রয়েছে ৩৬টি ভুয়া প্রতিষ্ঠান।
মাত্র একটি ভবনেই রয়েছে ৮টি হাসপাতাল। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, তাহলে কিভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমতি মিললো?
মোহাম্মদপুর বাবর রোডের ন্যাশনাল কেয়ার হাসপাতাল। একমাত্র ছেলে অসুস্থ হলে সুচিকিৎসার জন্য শিশু হাসপাতালে নিতে চান বাবা ফরিদ উদ্দিন। অ্যাম্বুলেন্স চালক উন্নত চিকিৎসার কথা বলে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় কেয়ার হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় অন্য হাসপাতালে নিতে গেলে পড়েন আরও বিপদে।
ফরিদ উদ্দিন বলেন, “সকাল থেকে ঘুরতেছি বাচ্চাকে রিলিজ করে দিচ্ছে না। ওনারা বলেন, এখানে চিকিৎসা করান, অন্য কোথাও এর চিকিৎসা নাই।”
অভিযোগ, সেখানকার নার্স, ওয়ার্ডবয় আর পরিচালকেরা রোগীদের কাছে পরিচয় দেন ডাক্তার হিসেবে। নার্সদের ডাক্তার হওয়ার পদ্ধতি জানতে গেলে চড়াও হন একুশের ওপর। দেখাতে ব্যর্থ হন অধিদপ্তরের সনদ।
একুশের অনুসন্ধানী দলের নজর এবার একই রোডের মেডি ফেয়ার হাসপাতালে। প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স একজনের নামে, চালায় অন্যরা। আইসিইও ও এনআইসিও’র মালিক একজন আর সার্জারি বিভাগের মালিক অন্য দুইজন।
ক্রিসেন্ট হাসপাতালে অভিযান চলেছে ৬ বার, সিলগালাও হয়েছে। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি।
পুরোন ঢাকার মেডিপ্যাথ হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। রোগী ভর্তি আছে বেশ ক’জন। অথচ একজন চিকিৎসকও নেই। আছে ল্যাব, নেই টেকনোলোজিস্ট। মেডিকেল রিপোর্ট যিনি তৈরি করেন তিনি আসেন অনকলে।
এসব হাসপাতালের রোগী হত্যা আর অপচিকিৎসা নিয়ে খবর প্রচার হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। অনিয়ম অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় বেশ ক’বার বন্ধ হয়েছে রেমিডি কেয়ার, ক্রিসেন্ট, ক্রিটিকাল কেয়ার, ঢাকা জেনারেলসহ আরও কিছু হাসপাতাল আর ক্লিনিক। কিন্তু মালিকদের কালো টাকার নিচে চাপা পড়ে যায় রোগীর আর্তনাদ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডাঃ শেখ দাউদ আদনান বলেন, “অনুমতিহীন প্রতিষ্ঠান দেশের খুবই বিপদজনক। আমরা বার বার বলেছি, আপনি যখন একটা স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে যাবেন তার নিবন্ধন আছে কিনা সেটা অবশ্য দেখবেন।”
সেবার নামে দালালনির্ভর ক্লিনিক আর হাসপাতাল চিরতরে বন্ধের দাবি ভূক্তভোগীদের।
এএইচ