ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

বাড়ির পাশের কলের চিনিও পাচ্ছে না চুয়াডাঙ্গাবাসী

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:৫৪ এএম, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ মঙ্গলবার

বাজারে চিনির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই সংকটের প্রভাব পড়েছে দেশের অন্যতম চিনিকল কেরু অ্যান্ড কোম্পানি যে শহরে অবস্থিত, সেই দর্শনায়ও। আখের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সেখানে চিনির উৎপাদন কমে গেছে। এ কারণে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও বাজারে গিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার মানুষ কয়েক মাস ধরে এই চিনিকলের চিনি কিনতে পারছেন না।

চিনিকল সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে নির্ধারিত সময়ের আগেই এই চিনিকলে মাড়াই কার্যক্রম শেষ হয়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এবার চিনি আহরণের হার নেমে গেছে ৫ শতাংশের নিচে । ফলে কোনোভাবেই চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না। 

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত চাহিদা অনুযায়ী আখের যোগান না পাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান ২৩ ডিসেম্বর কেরু চিনিকলে মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করেন। চলতি মাড়াই মৌসুমের ৫৩ কার্যদিবসে ৬২ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ৮৮৪ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর চিনি আহরণের হার ধরা হয়েছিল ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ।

কেরুর মহাব্যবস্থাপক (কারখানা) সুমন কুমার সাহা জানান, ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৪ কার্যদিবসে ৩৮ হাজার ৪১০ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ১ হাজার ৮৩১ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়েছে। চিনি আহরণের হার ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ। 

আখের অভাবে ৩ ফেব্রুয়ারি মাড়াই মৌসুম শেষ হয়েছে। অথচ চাহিদা অনুযায়ী আখ সরবরাহ পাওয়া গেলে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আখ মাড়াই হওয়ার কথা। 

চিনিকল কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২০-২১ মাড়াই মৌসুমে ৯৪ দিনে ১ লাখ ১১ হাজার ৮৬০ দশমিক ৭৮০ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৫ হাজার ৮৮৩ মেট্রিক টন চিনি পাওয়া যায়। ওই মৌসুমে চিনি আহরণের হার ছিল ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০২১-২২ মৌসুমে আখ মাড়াই অর্ধেকেরও নিচে নেমে যায়। এ মৌসুমে ৫৩ হাজার ৬৯২ দশমিক ৮৮৫ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৩ হাজার ২৩ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আজিজুর রহমান দর্শনা পৌর শহরের বাসিন্দা। তিনি জানান, ‘তিন-চার মাস ধরে বাজারে কেরুর চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই রিফাইনারি মিলের চিনি কিনছেন। বাড়ির পাশে চিনিকল, অথচ সেই চিনিকলের চিনির স্বাদ থেকে চুয়াডাঙ্গার মানুষ বঞ্চিত, এ কথা কাউকেই বোঝানো যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কেরু কোম্পানি চত্তরে একটি সেল সেন্টারের এবং সেখানে ভোক্তাদের জন্য চিনি, ভিনেগার ও স্যানিটাইজার বিক্রি করা হোক।’

দর্শনা বাজারের চিনি বিক্রেতা নজরুল ইসলাম জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের চিনি দীর্ঘদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। বেসরকারি চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সরবরাহ করা চিনি বিক্রি করছেন। বৃহস্পতিবার সর্বশেষ প্রতি কেজি ১০৮ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। বাজারে চাহিদা থাকলেও সরবরাহ নেই।

দর্শনায় বর্তমানে বিএসএফআইসি তালিকাভুক্ত ছয়জন পরিবেশক আছেন। তাদের মধ্যে শাহজাহান আলী বলেন, কেরু থেকে সর্বশেষ ৬ মাস আগে ৫০০ কেজি চিনি উত্তোলন করেছিলেন। এরপর ডিসেম্বর মাসে কেরুর বদলে নাটোর চিনিকল থেকে ২৫০ কেজি করে চিনি বরাদ্দ দেওয়া হয়।

ডিসেম্বরে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি থেকে চিনি উত্তোলন না করার কারণ জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, বিএসএফআইসি থেকে বরাদ্দ না দেওয়ায় তিনি কেরু কোম্পানি থেকে চিনি উত্তোলন করতে পারেননি। সংকটের কারণে সেখান থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে কেরুর উপব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) বদরুল আলম বলেন, উৎপাদন কমে যাওয়ায় স্থানীয় পরিবেশকদের কয়েক মাস ধরে চিনি সরবরাহ করা হচ্ছে না। উৎপাদিত চিনি সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসারসহ সরকারি দপ্তরের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের রেশন হিসেবে প্রতিমাসে পাঁচ মেট্রিক টন বিক্রি করা হয়।

এ বিষয়ে কেরুর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন  জানান, এবার খরার কারণে আখের আশানুরূপ ফলন হয়নি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন আখ সংগ্রহ করা হয়েছে। ক্ষেতে বর্তমানে যে পরিমাণ আখ আছে, তা দিয়ে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। 

তিনি আরও বলেন, ভেড়ামারা থেকে ৮ হাজার মেট্রিকটন আখ পাওয়ার পরিবর্তে মাত্র ৩ হাজার মেট্রিক আখ পেয়েছি। তাই সময়ের আগেই চিনিকল বন্ধ করতে হয়েছে।

এএইচ