ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

মসলিনের বাণিজ্যিক উৎপাদনের প্রস্তুতি (ভিডিও)

মুহাম্মদ নুরন নবী, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৪২ পিএম, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বুধবার

বেশ অনেকদিন ধরে অনেক প্রতিষ্ঠান ঢাকাই মসলিন পুনরুদ্ধারের দাবি করলেও সেগুলোকে ভিত্তিহীন বলছে তাঁত বোর্ড। আর নিজেদের দীর্ঘ গবেষণা ও প্রচেষ্টায় পুনরুদ্ধার প্রকৃত মসলিনকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে বোর্ড।

বুনন শিল্পে, একশ’ থেকে দেড়শ’ কাউন্টের হাতের স্পিনিংয়ে সূতা বানানো হরহামেশাই হয়। কিন্তু মসলিন কাপড়ে ফুটি কার্পাস তুলায় এটা সাড়ে তিনশ’র অধিক। আর কুড়ি বছরের নীচে যাদের মোলায়েম হাত- তারাই তৈরিতে দক্ষ এ সূতা। বিশেষ তাপমাত্রাতেই শুধু কাজ করতে পারেন কারিগররা।

এমন অনেক পদ্ধতি ও শর্তপূরণ হলে তবেই আসল মসলিন বলা যাবে। যেখানে সফল তাঁত বোর্ড। 

কারিগররা জানান, বেশি শীত হলে ছিড়ে যায়, বেশি রোদ হলেও ছিড়ে। গরমে ঘেমে গেলে হাতে তুলা আসে না। 

কিন্তু, এটাও তো ঠিক এর আগে অনেকেই মসলিন আবিষ্কারের দাবি করে এসেছে। প্রশ্ন হলো, সেগুলো তাহলে কি? বিশেষ করে, ২০১৬ সালে জাতীয় জাদুঘরে জমজমাট প্রদর্শনী করে মসলিন দেখিয়েছিল দৃক। 

অনেক কিছুর মিল থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি কম গুরুত্ব দেয়, ফুটি কার্পাসের সঙ্গে মসলিনের সাদৃশ্য থাকার বিষয়টি। বরং সাধারণ সূতা মিশিয়ে তারা বানিয়ে ছিল হাইব্রিড মসলিন।

দৃক মসলিন প্রকল্পের প্রধান তাঁতী আল আমিন বলেন, “ওটার কাছাকাছি শুরু করেছি, দেখা যাক আরও কি করা যায়। এটি মিলবে না কারণ আগের যে ফুটি কাপার্স থেকে তুলা হতো এটা এখন বিলুপ্ত। এখন যদি আমি বলি ওইটাই তাহলে ঠিক হবে না।”

সেখানে তাঁত বোর্ডের গবেষণালব্দ মসলিনের জিনোম সিকুয়েন্সে এটি শতভাগ মিলে যাবার প্রমাণ মিলেছে। এমনকি, আংটির ভেতর দিয়ে প্রবেশ করানো এবং ম্যাচ বক্সে পুরে ফেলা যায় অনায়াসেই।  

মসলিন সূতা কাপড় তৈরির প্রযুক্তি পুনরুদ্ধার প্রকল্প পরিচালক আইয়ুব আলী বলেন, “১৮৪৭ সালে সর্বশেষ লন্ডনে যে প্রদর্শনী হয়েছিল সেখানের তথ্য হচ্ছে ম্যাচবাক্সের ভেতরে রাখা ছিল। আমরা যদি এর অর্ধেকও ধরি তাহলে আমাদের তৈরি শাড়িও ওই ম্যাচবাক্সে ধরবে।”

গবেষকদের সাফ বক্তব্য, আগে মসলিন কাপড় নিয়ে জনগণকে অনেকেই ধোঁকা দিয়েছে। 

তাঁত বোর্ডের মুসলিন পুনরুদ্ধার প্রকল্পের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন বলেন, “পরীক্ষা থেকে বোঝা গিয়েছিল কাপাশিয়ার তুলা থেকেই হয়তো ওটা তৈরি। মসলিন কাপড়ের আঁশের মধ্যে থাকা তরু প্লাস্টের যে ডিএনএ সেটা কাপাশিয়ার তুলার সাথে মিলে। থ্রিওয়ে টেস্টে এটা মোটামুটি নিশ্চিত হলাম।”

মসলিন পুনরুদ্ধার গবেষণা দলের সদস্য অধ্যাপক ড. শাহ আলীমুজ্জামান বলেন, “আমাদেরটা শতভাগ খাঁটি এটা বলতে পারি। যেহেতু আমি নিজের হাতে দেখেছি, নিজে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। সুতরাং এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই।”

প্রকৃত সত্য মেনে নিয়ে মসলিনের আবিষ্কারের বির্তকিত দাবি বন্ধ করার পরামর্শ গবেষকদের। 

ফুটিকা কার্পাস হিসেবে যেটা আমরা চিনি, এই গাছটি ছিল মসলিনের তোলার মূল উৎস। যেহেতু এটি প্রায় বিলুপ্ত, তাই অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে এটি খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। পরে এটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ভিক্টরিয়া আলবার্ট মিউজিয়াম এবং জাতীয় যাদুঘরে থাকা একটি পাঁগড়ির নমুনার তরু প্লাস থেকে জিরোম সিকুয়েন্স করা হয়। সেটির মধ্যে শতভাগ সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। 

সেই হিসেবে এটা বলাই যায় যে এটি শতভাগ আসল মসলিন। এটাকে নিয়ে বাংলাদেশ আবারও গর্ব করতেই পারে।

এএইচ