যেভাবে এলো ইন্টারনেট
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:১৯ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বৃহস্পতিবার
বর্তমান যুগে ‘ইন্টারনেট’ শব্দটি শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজ কর্মে ইন্টারনেটের সম্পৃক্ততা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তবে প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও ইন্টারনেট কীভাবে আবিষ্কার হল; সেই ইতিহাস আমাদের অনেকেরই অজানা।
আলোচনার শুরুতেই জেনে নেওয়া যাক ইন্টারনেট কি?
ইন্টারনেট হলো মূলত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা অগণিত কম্পিউটার ও ডিভাইস সমূহের মধ্যে আন্তঃসংযুক্ত একটি নেটওয়ার্ক। অর্থাৎ সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত, পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার ও ডিভাইস নেটওয়ার্কের সমষ্টি হলো ইন্টারনেট। ইন্টারনেট সকল ধরনের জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত একটি নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা।
যেভাবে কাজ করে ইন্টারনেট
ইন্টারনেট হলো বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত আন্তঃসংযুক্ত ডিভাইসগুলোর মধ্যকার বিভিন্ন ধরনের ডাটা ও মিডিয়া আদান-প্রদানের একটি মাধ্যম। প্যাকেট রাউটিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইন্টারনেট কাজ করে, যা ইন্টারনেট প্রটোকল (আইপি) ও ট্রান্সপোর্ট কন্ট্রোল প্রটোকল (টিসিপি) এর মাধ্যমে সংযুক্ত। টিসিপি ও আইপি একইসাথে এটি নিশ্চিত করে যাতে বিশ্বের যেকোনো কেন্দ্র থেকেই যেকোনো ডিভাইসে ইন্টারনেট নিরবিচ্ছিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়।
যেভাবে এলো ইন্টারনেট
ইন্টারনেট এমন একটি প্রযুক্তি যা প্রকৃতপক্ষে কোন একক ব্যক্তির কৃতিত্বে আবিষ্কার হয়নি। এটি রাতারাতিও আবিষ্কার হয়নি, বরং দীর্ঘ সময়ের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও গবেষকদের নিরলস পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে ইন্টারনেট বর্তমান অবস্থায় এসেছে।
মূলত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ইন্টারনেটের মতো প্রযুক্তির উদ্ভব ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বব্যাপী স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৫৭ সালের ৪ই অক্টোবর সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের প্রথম স্যাটেলাইট আবিষ্কার করে; যার নাম ছিল স্পুটনিক (Sputnik)। এটি আবিষ্কারের ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হয়ে যায়, যা আমেরিকার প্রতিরক্ষা বিভাগ নিজেদের জন্য হুমকি মনে করে। ফলে তারা এমন এক প্রযুক্তি তৈরীর জন্য গবেষণা শুরু করে, যা দিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে গোপনে তথ্য আদান প্রদান করতে সক্ষম হবে এবং সোভিয়েত আগ্রাসন মোকাবেলা করতে পারবে। এমন ভাবনা থেকেই তারা রকেট ও কম্পিউটার প্রযুক্তি উন্নতির দিকে নজর দেয়। এক সময় তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গোপনে তথ্য প্রেরণের চাহিদা অনুভব করে।
আমেরিকার ডিফেন্স অ্যাডভান্স রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি এক কম্পিউটার থেকে অন্য আরেকটি কম্পিউটারে তথ্য প্রেরণ করতে সক্ষম হয়; আর এই তথ্য প্রেরণের নেটওয়ার্কের নামকরণ করা হয় আরপা নেটওয়ার্ক বা আরপানেট(ARPANET) হিসেবে। ১৯৬৯ সালে এই আরপানেটের মাধ্যমে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে প্রথম একটি মেসেজ প্রেরণ করা হয়েছিল। আবার ১৯৬৯ সালেই তিন মিলিটারি কন্টাকটর একত্রে রাউটিং ডিভাইসের প্রাথমিক কাঠামো ইন্টারফেস মেসেজ প্রসেসর বা আইএমপি (IMP) তৈরি করেন, যার ফলে ডাটা ট্রান্সমিশন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক বিপ্লব পরিলক্ষিত হয়।
সত্তরের দশকে এসে ভিন্ট সার্ফ নামক এক কিংবদন্তি ট্রান্সমিশন কন্ট্রোল প্রোটোকল (TCP) আবিষ্কার করেন; যা ইন্টারনেট প্রটোকল (IP) নামে অধিক পরিচিত। এই আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকলের মাধ্যমে একসাথে অনেকগুলো কম্পিউটারকে আরপানেটের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়। তারপর আশির দশকে ডোমেইন আবিস্কারের ফলে ওয়েবসাইটের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং সার্ফের প্রটোকল ওয়ার্ল্ড ওয়াইড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেটে রূপান্তরিত হয়।
এই সময়ে বিশ্বের সকল কম্পিউটারকে একই নেটওয়ার্কে নিয়ে আসা সম্ভব হয় এবং বেশ দ্রুত বেগেই ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়তে শুরু করে। কারণ শুধু আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল অ্যাড্রেস মাধ্যমে অন্য কম্পিউটারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা বেশ কঠিন ছিল, কারণ আইপি অ্যাড্রেস বেশ জটিল সংখ্যা দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে; কিন্তু যখন ডোমেইন আবিষ্কার হয়ে যায়, তখন তা মনে রাখা ও সাইটে প্রবেশ করা অনেক সহজ হয়ে ওঠে।
১৯৯১ সালে ইন্টারনেট জগতে আবার ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এই সময়ে সুইজারল্যান্ডের এক কম্পিউটার প্রোগ্রামার টিম বার্নার্স লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব আবিষ্কার করেন। আর এই কারণেই টিম বার্নার্স লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। ১৯৯৩ সালে ন্যাশনাল সেন্টার ফর সুপারকামিং অ্যাপ্লিকেশনস (NCSA) তৈরি করে মোসাইক (Mosaic) ওয়েব ব্রাউজার। এই ব্রাউজারের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ছবি ও লেখাকে একই পেজে দেখানো সম্ভব হয়। তারপর থেকেই ইন্টারনেট প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। আর এভাবেই আরপানেটের সঙ্গে ক্রমাগত বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ের সংযুক্ততার মাধ্যমে ইন্টারনেট প্রযুক্তি বর্তমান অবস্থানে আসতে সক্ষম হয়েছে।
সূত্র: ইন্টারনেট
এমএম/