ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

ভালোবাসা অন্ধ হওয়ার গল্প 

মাজহারুল ইসলাম শামীম

প্রকাশিত : ০২:১৩ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সোমবার | আপডেট: ০২:১৪ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সোমবার

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই যেন ভালোবাসার মানুষগুলো তাদের নতুন উদ্যমে ভালোবাসার রূপ দিতে চায়। তাই তো ফেব্রুয়ারি মাসটা যেন ভালোবাসার মাস। আর এই মাসে ভালোবাসার গল্প না শুনলে কি হয়!

ভালোবাসা অন্ধ (Love is Blind) কথাটি আমরা সবাই শুনেছি। কিন্তু এটির ইতিহাস বা উৎপত্তি সম্পর্কে ধারণা খুবই কম জনের জানা। তবে ভালোবাসা সব সময় অন্ধ থাকে না, কখনো কখনো রঙও বদলে ফেলে। কারণে-অকারণে রঙ বদলায় ভালোবাসা। 

যে জীবনানন্দ দাশকে জীবনে একবার দেখেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে যান লাবণ্যপ্রভা। কিন্তু কিছুদিন পরে তিনিও বুঝতে পারলেন তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা কমে যাচ্ছে। 

কিন্তু এরপরও তো ভালোবাসা অন্ধ এটি বাস্তব। কারণ, প্রকৃত ভালোবাসার অনুভূতিগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি হয়। আর এমনই ঘটনা হয়েছিলো প্রাচীন গ্রিসে। প্রাচীন গ্রিসের প্রেমের দেবতা ছিলেন কিউপিড। তিনি ছিলেন মানুষ ও দেবতার অদ্ভুত সংমিশ্রণ, দেখতেও ছিলেন অনেক সুদর্শন। তার পিঠে ছিল দুইটি পাখা, ঠিক যেন পরী। আর এ দুই পাখার কারণেই তিনি এখানে সেখানে উড়ে বেড়াতেন এবং নানা ধরণের দুষ্টুমি করতেন। তার হাতে ছিল সোনালী তীর ও ধনুক। এই তীরের কারণে তিনি প্রেমের দেবতা হয়ে গেলেন।

খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে ল্যাটিন লেখক 'আপুলেইয়াস' এর বিখ্যাত উপন্যাস মেটামরফোসেস অনুযায়ী দেবী আফ্রোদিতির রাজ্যে সাইকি নামে অবিশ্বাস্য এক সুন্দরী নারী ছিলেন। যাকে দেখার জন্য প্রতিনিয়ত মানুষ আসত দূর থেকে। কিন্তু এই সৌন্দর্য নিয়েও সাইকির যে ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হবে তা কে বা জানত।

সাইকির এমন সৌন্দর্য সহ্য করতে না পেরে আফ্রোদিতি রাগান্বিত হয়ে প্রেমের দেবতা কিউপিডকে বললেন, তার হাতে থাকা ভালোবাসার তীরটি মেরে দিতে সাইকিকে। প্রসঙ্গত,  প্রেমের দেবতা কিউপিডের তীরটি এমন এক তীর যার আঘাত কারো শরীরে লাগলে তার  মনে জেগে উঠত প্রেমের ভাব। ঐশ্বরিক ক্ষমতা থাকায় যাকে তাকে তার তীরের আঘাতে প্রেমে ফেলতেন এই দেবতা। এ যেন এক মজার খেলা।

আবার ফিরে যাচ্ছি আগের কথায়, কিউপিডকে তীর মারতে বলা হল এমনভাবে যেন সাইকি কোনো কুৎসিত মানুষের প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু ঘটনাক্রমে সেই তীর প্রেমের দেবতা কিউপিডের পায়ে এসে লেগে গেল হাত ফসকে। এবার দেবতা তো সাইকির প্রেমে পড়ে গেলেন।

তবে কিউপিড যখন দেবতা, সাইকি যখন মানব। তাহলে প্রেম তো কখনো হওয়া সম্ভব নয়। তখন এক সিদ্ধান্ত নিলেন কিউপিড। যখন তীরের কারণে প্রেমে পড়ে গেলেন, এখন আবার তাদের প্রেম চালিয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। সেহেতু তারা সিদ্ধান্ত নিলেন রাতে দেখা করবেন তারা।  যাতে কেউ কাউকে ঠিকমতো দেখতে না পারেন।

কিন্তু মানুষ যে সৃষ্টিগতভাবে নেগেটিভ বিষয়ের প্রতি কৌতূহলী। তা কি শেষ হয় কখনো? কৌতূহলবশত সাইকি একদিন মনে মনে চিন্তা করলেন কিউপিডের চেহারা দেখবেন। রাতে যখন ঘুমাবেন তখন প্রদীপের আলোয় চেহারা দেখবেন। তারই ধারাবাহিকতায় একদিন কিউপিড যখন ঘুমাচ্ছিলেন, সাইকি প্রদীপ দিয়ে কিউপিডের চেহারা দেখছিলেন। সাইকি কিউপিডের অসম্ভব সুন্দর চেহারা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলেন।

কিন্তু হঠাৎ প্রদীপের আলোয় কিউপিডের ঘুম ভেঙে গেল। আর তখন কিউপিড সাইকির হাত থেকে প্রদীপ সরানোর সময় প্রদীপের গরম তেল এসে পড়ে কিউপিডের চোখে। কিউপিড আজীবনের জন্য অন্ধ হয়ে গেলেন।

এখন একদিকে সাইকি প্রদীপ দিয়ে চেহারা দেখাতে রাগ কিউপিডের, অন্যদিকে অন্ধ হলেও এলোপাতাড়ি প্রেমের তীর ছুঁড়তে লাগল; যখন যার কন্ঠ শুনতে পায়। আর এভাবেই উৎপত্তি 'ভালোবাসা অন্ধ' শব্দটির।

লেখক: শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ফেনী সরকারি কলেজ।