ঢাকা, শুক্রবার   ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪,   আশ্বিন ৫ ১৪৩১

বসন্ত-ভালোবাসা দিবস রাঙাবে সাভারের গোলাপ গ্রাম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:২০ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সোমবার | আপডেট: ০৮:৩২ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সোমবার

মাঘের শেষে রুক্ষ প্রকৃতিতে রং ছড়িয়ে ফুটে আছে লাল টুকটুকে রক্তিম গোলাপ। প্রকৃতিতে এ যেন স্রষ্টার তুলিতে আঁকা ভালোবাসার রং। আর একদিন পরেই ১৪ ফেব্রুয়ারী বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী এদিন পহেলা ফাল্গুন বসন্তের প্রথম দিন। একই সঙ্গে সারা বিশ্বে ভালোবাসার দিবস হিসেবেও পালিত হবে এই দিনটি। আর এই খুশিতেই সাভারের গোলাপ চাষিদের মুখে ফুটেছে স্ফীত একগাল হাসি।

ঢাকার অদূরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়ন দেশব্যাপী খ্যাতি এখন গোলাপ চাষের জন্য। দাপ্তরিক কাগজপত্রে গোলাপ নামে কোনো গ্রাম নেই কিন্তু এখানকার সাধারণ মানুষের মুখের কথায় ও দোকানের সাইনবোর্ডসহ সবখানে আছে গোলাপ গ্রাম।

এই ইউনিয়নে শ্যামপুর, সাদুল্লাহপুর, মৈস্তাপাড়া, বাগ্নিবাড়ি, বাটুলিয়া, কমলাপুর, আউকপাড়া উচুঁ লাল মাটির এই গ্রামগুলো এক নামে পরিচিত গোলাপ গ্রাম নামে। এই গ্রামে যতদূর চোখ যায় গোলাপের বাগান। এ যেন স্বপ্নের গ্রাম। সাভারের এই গোলাপ গ্রাম পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত। প্রতিদিন সদ্য ফোটা গোলাপের সৌন্দর্য ও গন্ধ নিতে চলে আসে হাজারো সৌন্দর্য পিপাসু।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, শহিদ দিবস ও স্বাধীনতা দিবস ঘিরে এসময় ফুল বিক্রি বাড়ে কয়েকগুণ। সরকারি হিসাব মতে বিরুলিয়ার গ্রামগুলোয় ৩৫০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। আর এই ফুল চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে প্রায় দেড় হাজার চাষি। গোলাপ বিক্রির জন্য মৈস্তাপাড়া ও শ্যামপুর বড় দুটি পাইকারি বাজার রয়েছে এখানে।

এছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এসে সরাসরি গোলাপ গ্রাম থেকে তাজা ফুল সংগ্রহ করে। এই দুটি বাজারে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে ১১টা পযর্ন্ত চলে ফুল বেচাকেনা। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাইকাররা এই ফুল নিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে ফুল বিক্রি করেন। 

তিন বিঘা জমিতে গোলাপ চাষি কৃষক ফরিদ একুশে টেলিভিশনকে বলেন, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত করোনা আর ২০২২ সালে ছত্রাক রোগের আক্রমণের কারণে বিগত বছরগুলোতে যে লোকসান গুণতে হয়েছে আমাদের তা এবারের বেচা কেনাতে পুষিয়ে নিতে পারব। আমাদের গোলাপ গ্রামে প্রায় ১৫'শ ফুল চাষি রয়েছে, ফুল আগের তুলনায় বেশি উৎপাদন হয়েছে। তাই এবার কৃষকের মুখে হাসি।

স্থানীয় ফুল বিক্রেতা শফিকুল বলেন, প্রতিদিন যে পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত হয় এই গোলাপ গ্রাম, ঢাকাসহ আশপাশের ভ্রমণ পিপাসু লোকের আগমন ঘটে তা থেকেই প্রচুর ফুল বিক্রি হয়, ফুলের চাহিদাও আছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দর্শনার্থীরা যারা এখানে ঘুরতে আসে তাদের কাছে খুচরা মূল্যে ফুল বিক্রি করে থাকি।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাষিরা মূলত সারা বছর কয়েকটি বিশেষ দিবসের অপেক্ষায় থাকি– পহেলা ফাল্গুন, ২১শে ফেব্রুয়ারি, ভাষা দিবস, ভালোবাসা দিবস ও ২৬ মার্চ এই দিনগুলো। আর এই সময়ে বাগান ভর্তি ফুল থাকায় এবার বিগত বছরের লোকসান কাটিয়ে তুলতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

এদিকে ঢাকা মিরপুর থেকে বেড়াতে আসা চুমকি বলেন, সরাসরি বাগানে এসে ফুল কেনার মজাই আলাদা। তবে আগের তুলনায় ফুলের দাম অনেক চড়া। একটি ফুল ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, তারপরেও খুব ভালো লাগছে যে সরাসরি বাগানে এসে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরেছি।

অস্থায়ী ফুলের দোকানদার মাসুদ বলেন, আমি মাত্র ১ বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছি, তাতে এবার আমার যে ফলন হয়েছে আমি বেশি দামে বিক্রি করতে পারায় খুবই খুশি হয়েছি। আর প্রতিদিনই যে কাস্টমার গোলাপ গ্রাম দেখতে আসে তারাই এখান থেকে ফুল সরাসরি ক্রয় করেন। তবে ইদানিং কাঁচা ফুলের বাজারে বিদেশ থেকে আমদানি করা প্লাষ্টিকের ফুল ঢুকে পড়ছে এতে বাজারে কাঁচা ফুলের কদর কিছুটা কমছে এবং যতদিন যাচ্ছে প্লাষ্টিক ফুলের বাজার ততই বড় হচ্ছে। তাই তিনি সরকারের কাছে এই প্লাষ্টিকের ফুল আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার আহবান জানান।

সাভার উপজেলা কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, এবছর বিগত বছরের তুলনায় কৃষক গোলাপের দাম পাচ্ছে, আমরা কৃষি অফিস সঠিক সময়ে তদারকি করেছি, ছত্রাক রোগের আক্রমণ হয়নি যার কারণে কৃষকের ফলন বৃদ্ধি পয়েছে। 

কেআই//