ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

পরিত্যক্ত টায়ার-পলিথিন-প্লাস্টিক থেকে আসছে কালি ও তেল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:০২ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:৩৪ এএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বৃহস্পতিবার

পরিত্যক্ত টায়ার, পলিথিন ও প্লাস্টিক পচনশীল না হওয়ায় এগুলো পরিবেশের জন্য বেশ হুমকির কারণ। তবে আশার কথা হচ্ছে, এসব অপচনশীল বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তা থেকে তৈরি করা হচ্ছে জ্বালানি, গ্যাস ও ফটোকপি মেশিনের কালি। পরিত্যক্ত টায়ার থেকেও কালি এবং তেল উৎপাদনে উদ্যোগী হয়েছেন অনেকে।

এসব জ্বালানি তেল ব্যবহার করে ইতিমধ্যে মোটরসাইকেল চালানো হয়েছে এবং ছাপাখানায় কালি ব্যবহার করে সুফলও পাওয়া গেছে।

পরিবেশবান্ধব এ কাজে উদ্যোগী হয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এসব প্রকল্পে কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে।

এরকমই একজন উদ্যোক্তা জানালেন- মাত্র আট হাজার টাকা খরচ করে তিনি কাজ শুরু করেন। প্রথম প্রথম সামান্য সমস্যা হলেও তা শুধরে নিয়ে সাফল্যের মুখ দেখছেন।

তিনি বলেন, “নোংরা ও পরিত্যক্ত পলিথিন, পুরাতন টায়ার-টিউব, প্লাস্টিকের বোতল এবং রাবার বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে তা কেটে টুকরো করে ড্রামে রাখি। এরপর ড্রামের নিচে খড়ি দিয়ে জ্বাল দেই।”

এরপর ড্রাম থেকে নির্গত গ্যাস স্টিলের পাইপ দিয়ে এসে প্লাস্টিকের বোতলে জমা হয়। পলিথিন থেকে পেট্রোল জাতীয় পদার্থ, ডিজেল, অকটেন, কেরোসিন এবং গ্যাস উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

এ উদ্যোক্তার মত দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব অপচনশীল আবর্জনা, পলিথিন, প্লাস্টিক ও টায়ার ব্যবহার করে কালি ও তেল উৎপাদন করছে অনেক  প্রতিষ্ঠান। যেখানে কাজ করে শ্রমিকরাও লাভবান হচ্ছেন। 

অন্য এক উদ্যোক্ত বলেন, “নোংরা ও পরিত্যাক্ত পলিথিন ১০ টাকা কেজি করে টোকাইদের কাছ থেকে কিনে নেন। এরপর বিশেষ প্রক্রিয়ায় পলিথিনগুলো টিনের ড্রামে ভরে প্রায় আধাঘণ্টা ড্রামের নিচে খড়ি দিয়ে জ্বাল দেন। এরপর ড্রাম থেকে নির্গত গ্যাস স্টিলের পাইপ দিয়ে এসে প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে রাখা পানিতে ঠাণ্ড হয়ে প্রেট্রোল এবং ডিজেল ছোট কন্টেইনারে জমা হচ্ছে।” ৭ কেজি পলিথিন থেকে প্রায় ৫ লিটার পেট্রোল জাতীয় পদার্থ, আধা লিটার ডিজেল বের করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি।

৫৫ বছর বয়সী এক উদ্যোক্তা জানান, পরিত্যক্ত ও নোংরা পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল তৈরি করা হচ্ছে এমন একটি ভিডিও তিনি ইউটিউবে দেখেছেন। মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় তেলের একটি বড় টিনের ড্রাম (ব্যারেল), একটি মাঝারি প্লাস্টিকের ড্রাম, ছোট দুইটি কন্টেইনার, প্রায় ১৫ ফুট স্টিলের চিকন পাইপ ও কয়েক হাত প্লাস্টিকের ফিতা কিনে জ্বালানি তেল তৈরি শুরু করেন তিনি।

পলিথিনকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাজে লাগিয়ে তা থেকে তৈরি করেছেন পেট্রোল, ডিজেল, গ্যাস এবং ফটোকপি মেশিনের কালি।

দূষণ প্রতিরোধ ও ক্রমবর্ধমান তরল জ্বালানির চাহিদা মেটাতে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি ও ভারতে প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে (প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে) তৈরি হচ্ছে ডিজেল ও কেরোসিন। 

পলিথিনের বর্জ্য, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাছাড়া পলিথিন পচনশীল নয়, তাই মাটি হারাচ্ছে তার উর্বরতা শক্তি। পলিথিনের কারণে খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে, নদী তার নাব্যতা হারাচ্ছে। এর প্রভাবে বন ও জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। তাই পলিথিন পুড়িয়ে তেল ও কালিতে রূপান্তরের বিষয়টি নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সুবিধার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান আবার পাইরোলিসিস প্রক্রিয়ায় অল্প খরচে পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি তেল উৎপাদন মেশিন বিক্রি করছে। যা আধুনিক ও চাহিদা সম্পন্ন।

শিল্পটি নিয়ে বাংলাদেশ টায়ার রিসাইক্লিন এসোসিয়েশন (বিটিআরএ বিডি) এর আহ্বায়ক শেখ আতিয়ার রহমান দীপু বলেন, “এ সম্ভাবনার শিল্পে রাষ্ট্রের সহযোগিতা প্রয়োজন। এখান থেকে তেল উৎপাদন হবে। আবার ব্যাপক কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।”

শিল্পটি যদি সরকারি সহযোগিতা পায় তবে গোটা দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। কারণ প্রতিদিন বিদেশ থেকে ডিজেল ও ফার্নেস ওয়েল আমদানিতে সরকারের অনেক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। তাছাড়া ডিজেল ও ফার্নেস ওয়েলে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশেই যদি টায়ার থেকে তেল উৎপাদনের এই শিল্পকে বিকশিত করা যায়, তাহলে একদিকে যেমন সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে না, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। 

এসএ/