বাংলা ভাষা নিজভূমেও যেভাবে থাকবে রাজমুকুটে (ভিডিও)
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৫৬ এএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শুক্রবার
রাষ্ট্র ভাষা বাংলা; দাপ্তরিক কর্মকান্ড ও আদালতের ভাষাও তাই হবে বাংলা। সংবিধানের তিন অনুচ্ছেদের আলোকে ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন করা হলেও নেই উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি। খোদ উচ্চ আদালতের রায় ঘোষণায় বাংলার ব্যবহারও শুধুই নিয়মরক্ষার।
একুশে স্পেশালে বাংলাভাষার সর্বত্র ব্যবহার নিয়ে আদিত্য মামুনের দুই পর্বের প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব।
বিশ্ববাসী ১৯১৩ সালে বাংলা ভাষার মহিমা দেখেছে কবিগুরুর নোবেল জয়ের মাধ্যমে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়ে বাংলাভাষাকে নিয়ে গিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ভাষার ব্যবহার তিন ক্ষেত্রে; এগুলো হচ্ছে, রাষ্ট্রভাষা- যে ভাষা রাষ্ট্রের সবকাজে ব্যবহৃত হয়। এরপর- নির্বাহী কার্যক্রমে ব্যবহৃত সরকারের ভাষা। এবং বিচারিক কার্যক্রমে ব্যবহৃত আদালতের ভাষা।
বাংলাভাষা প্রচলন আইনের ১ ধারা বলছে, দেশের সর্বত্র তথা অফিস-আদালত, সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশ যোগাযোগ ব্যতিত সব ক্ষেত্রেই চিঠি-নথিপত্র এবং আদালতের রায়ও হতে হবে বাংলায়।
এরই ধারাবাহিকতায় ৯০’র দশকে প্রয়াত বিচারপতি এআরএম আমিরুল ইসলাম চৌধুরী হাইকোর্টে বাংলায় রায় দেয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু বাংলায় রায় দিতে অনেক বিচারপতির অনীহার কারণে কিছুটা ধীরগতি তৈরি হয়।
এনিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেন, “আমাদের সংবিধানও বাংলা ভাষায় রচিত। দুঃখজনক হলেও সত্য যে- ৭৫’র ট্রাজেডির পর বাংলা ভাষা নিয়ে সেরকম কোন অগ্রগতি আমি দেখি না।”
বাংলায় রায় দিতে ইংরেজি শব্দের বাংলা পরিভাষার সংকট কাটাতে তৈরি করা হয়েছে আইন শব্দকোষ।
এবিএম খায়রুল হক আরও বলেন, “হাইকোর্ট রুলস এ বাংলা ভাষা কথাটা না থাকা সত্যেও আমি বাংলায় রায় দেওয়া আরম্ভ করি। প্রথম দিকে প্রচণ্ড কষ্টই হয়েছিল। কারণ প্রতিশব্দ পাওয়া খুব কঠিন হচ্ছিল। খুঁজেখুঁজে বের করা হতো।”
দেওয়ানি কার্যবিধির ১৩৭ ধারা সংশোধন না করায় উচ্চ আদালতে বাংলার প্রচলন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাছাড়া, ইংরেজিতে লেখা আইনগুলোও বাংলায় অনুবাদ জরুরি।
সাবেক এ প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “একবার রায় দিলাম, সেটার আবার ইংরেজি অনুবাদ হলো তারপর আবার বাংলা অনুবাদ দেখে দিলাম, এতো কিছু না করে প্রথমেই বাংলা ভাষার রায় দিলে এইসব ঝামেলা থাকে না।”
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক অবসরের আগ পর্যন্ত ২শ’ রায় বাংলায় লিখে উত্তরসূরীদের কাছে দৃষ্টান্ত তৈরি করলেও কাজের কাজ হচ্ছে না।
তারপরও আশার কথা হচ্ছে, পিলখানা হত্যা মামলার ১৬ হাজার ৫৫২ পৃষ্ঠার রায় লেখা হয়েছে বাংলায়। ভাষার প্রতি প্রেম আর অমর একুশের চেতনাকে ধারণ করলে বিশ্বের পঞ্চম ভাষা বাংলা নিজভূমেও থাকবে রাজমুকুটে।
এসএ/