ঢাকা, রবিবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৭ ১৪৩১

যেভাবে দু’আ করলে আল্লাহ বেশি খুশি হন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৫২ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ মঙ্গলবার

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি যত দিন পর্যন্ত আমার কাছে দু'আ করতে থাকবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আমি তত দিন তোমার গুনাহ মাফ করতে থাকব, তুমি যা-ই করে থাকো আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশের উচ্চতা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তবু আমি তোমাকে ক্ষমা করব, আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ 
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪০)

আলোচ্য হাদিসে আল্লাহ তা'আলা তাঁর অসীম দয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। বান্দাকে তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের প্রতি আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, বান্দার গুনাহ যত বেশিই হোক না কেন, আল্লাহ তা আপন দয়ায় ক্ষমা করে দেবেন। যদি সে যথানিয়মে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। মুহাদ্দিসরা দু'আ ও ক্ষমা প্রার্থনার কিছু নিয়ম বর্ণনা করেছেন। যেভাবে দু'আ করলে আল্লাহ বেশি খুশি হন এবং তা দু’আ কবুলে সহায়ক হয়। তা হলো :
১. আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে দু'আ করা। আল্লাহ তা'আলা বলেন, ‘যখন আমার বান্দা আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, নিশ্চয় আমি তাদের নিকটবর্তী। আমি প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করি, যখন সে আমার কাছে প্রার্থনা করে। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করুক। এতে তারা সঠিক পথে চলতে পারবে।’ 
(সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৬)

২. নিষ্ঠার সঙ্গে দু’আ করা। হাদিসের বর্ণনামতে ইখলাস বা নিষ্ঠা দু’আ কবুলের শর্ত।

৩. আল্লাহর প্রশংসাসূচক গুণবাচক নামের সঙ্গে দু’আ করা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। সুতরাং তোমরা তাঁকে সে নামেই ডাকবে।’ 
(সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৮০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়েশা (রা.)-কে এভাবে দু'আ করতে বলেন, ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১১৯৫)। এখানে আল্লাহর ‘ক্ষমাশীল’ গুণ উল্লেখ করে দোয়া করতে বলা হয়েছে।

৪. দু’আর আগে আল্লাহর প্রতি ‘হামদ’ (প্রশংসা) ও রাসুলের প্রতি ‘সলাত’ (দরুদ) পাঠ করা। ফাজালা ইবনে উবাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) বসে ছিলেন। এমন সময় একজন লোক এলো এবং নামাজ আদায় করল। এরপর সে বলল, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার প্রতি দয়া করুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হে নামাজি! তুমি তাড়াহুড়া করলে। নামাজ শেষে যখন তুমি বসবে, তখন তুমি আল্লাহর উপযুক্ত হামদ এবং আমার প্রতি দরুদ পাঠ করবে। অতঃপর তুমি দু’আ করবে।’ 
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৬)

৫. কেবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে দু'আ করা। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বদরের ময়দানে আল্লাহর নবী (সা.)-এর দু'আর বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘অতঃপর তিনি কেবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে স্বীয় প্রভুর কাছে বিনীত হয়ে বললেন ...।’ 
(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৭৬৩)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মহান প্রভু চিরঞ্জীব ও অতি দয়ালু। যখন তাঁর কোনো বান্দা তাঁর প্রতি হাত উঠায়, তখন তিনি খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ 
(সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৩২০)

৬. প্রচণ্ড আশা নিয়ে দু'আ করা। আল্লাহর প্রতি প্রচণ্ড রকম আশা নিয়ে দু'আ করার নির্দেশ দিয়েছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘দু'আ কবুল হওয়ার আশা নিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো। জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ উদাসীন ও অমনোযোগী অন্তরের দু'আ কবুল করেন না।’ 
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৯)

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা ছিল সৎকাজে প্রতিযোগী, তারা আশা ও ভয় নিয়ে আমার প্রার্থনা করত। তারা ছিল আমার প্রতি বিনীত।’ 
(সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৯০)

৭. অশ্রুসিক্ত হয়ে দু'আ করা। আল্লাহ তা'আলা অশ্রুসিক্ত হয়ে দু'আ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর প্রার্থনা করো গোপনে অশ্রুসিক্ত হয়ে।’ 
(সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৫)

৮. একান্তে দু’আ করা। দু'আ ও প্রার্থনার শিষ্টাচার হলো একান্তে দু'আ করা। তা প্রকাশ না করা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের প্রভুর প্রার্থনা করো গোপনে অশ্রুসিক্ত হয়ে।’ 
(সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৫)

 ৯. দৃঢ়তার সঙ্গে দু'আ করা। আল্লাহর প্রতি দাবি ও অধিকার নিয়ে দু'আ করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন না বলে, হে আল্লাহ! আপনি চাইলে আমাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ! আপনি চাইলে আমার প্রতি দয়া করুন। সে যেন দৃঢ়তার সঙ্গে চায়। কেননা কেউ আল্লাহকে বাধ্য করার ক্ষমতা রাখে না।’ 
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩৩৯)

১০. দু’আ কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করা। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের দু’আ কবুল করা হয় যতক্ষণ সে তাড়াহুড়া না করে। যেমন সে বলল, আমি দু’আ করলাম কিন্তু তা কবুল হলো না।’ 
(আল জামি বাইনাস সহিহাইন, হাদিস : ২২৯২)

আল্লাহ মানুষকে তাঁর কাছে চাইতে, দু’আ ও প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। দু’আকে ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের প্রভু বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা : গাফির, আয়াত : ৬০)। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘দু’আই ইবাদত।’ 
(সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪৮১)

মু’মিনের দায়িত্ব হলো, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দু’আ করা। ছোট-বড় সব প্রয়োজনের জন্য দু’আ করা। আল্লাহ প্রার্থনাকারীকে পছন্দ করেন। প্রার্থনা না করলে তিনি রাগ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না তিনি তাঁর ওপর রাগান্বিত হন।’ 
(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭৩)
এসএ/