বীর বাহু বীরবলের মজার গল্প
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:৩৯ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার
বীরবল নিজে বীরও ছিলেন না, রাজাও ছিলেন না। কিন্তু মোগল সম্রাট আকবর তাঁকে ভালোবেসে বীরবল নাম ও রাজা উপাধি দিয়েছিলেন। বীরবলকে অনেকে রসিক হিসেবে ভেবে থাকেন। কিন্তু তিনি আদৌ ততটা রসিক ধরনের লোক ছিলেন কি না, সেটা নিয়ে দ্বিমত আছে। তবে বীরবলের জন্ম-মৃত্যু ও উপস্থিতি নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই।
ধারণা করা হয়, ১৫৫৬ থেকে ১৫৬২ সালের মধ্যে কোনো একসময় সম্রাট আকবরের সঙ্গে দেখা হয় তাঁর।
আকবরও শুরুতে তাঁকে সভাকবি হিসেবে এনেছিলেন। কিন্তু কিছুকালের মধ্যে বীরবলের রসিকতা, বহুভাষা জ্ঞান ও কূটনৈতিক দক্ষতা দেখে তাঁকে নবরত্নের একজন, মানে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দেন। আকবর তাঁর স্বভাব অনুযায়ী এই রত্নদের ওপর বিরাট ভরসা করতেন। ফলে যুদ্ধবিদ্যায় কোনো রকম দক্ষতা না থাকার পরও বীরবলকে প্রধান করে আফগানিস্তানে বিদ্রোহ দমনে বিশাল এক সৈন্য বাহিনী পাঠিয়েছিলেন সম্রাট। আর সেখানেই যুদ্ধে মারা যান বীরবল।
এই মৃত্যুসংবাদ পেয়ে সম্রাট আকবর দুই দিন পর্যন্ত কোনো খাবার গ্রহণ করেননি। তিনি এক প্রিয়জন হারিয়েছিলেন। আর আমরা হারিয়েছি, আরও কিছু মজার গল্প তৈরি হওয়ার সুযোগ।
বীরবলের গল্প
১
একদিন আগ্রার পাশের জঙ্গলে শিকার করতে বেরিয়ে দলছুট হয়ে যান আকবর। হারিয়ে ফেলেন পথ। এমন সময় পথের মাঝে দেখা হলো কিশোর মহেশ দাসের সঙ্গে। সম্রাট তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কোন পথটি আগ্রার দিকে গেছে?’
প্রশ্নের জবাবে মহেশ বলল, ‘পথ তো কোথাও যায় না। মানুষই পথ মাড়িয়ে যায়।’ এরপর ওই কিশোরটি সঠিক পথের হদিস দিয়ে দেয়। বুদ্ধিমত্তা আর রসবোধের পরিচয় পেয়ে সম্রাট নিজের আঙুল থেকে একটি বাদশাহী আংটি খুলে উপহার দেন মহেশকে। এই মহেশই কিন্তু পরে বীরবল হলেন।
২
বাদশা আকবর সভাসদদের কাছে জানতে চাইলেন, ‘পৃথিবীতে সুন্দর ফুল কী?’ সভাসদদের কারও উত্তর পছন্দ হলো না সম্রাটের। সবার বলা শেষ হয়ে গেলে মহেশ সাহস করে বলে উঠল, ‘কাপাস ফুল জাহাঁপনা।’ উত্তর শুনে সভাসদরা তো হেসে কুটি কুটি। সম্রাট সবাইকে থামতে বলে জানতে চাইলেন, ‘কাপাস ফুল কেন সুন্দর?’ মহেশ বলল, ‘এই ফুলের গুটি থেকে যে তন্তু পাওয়া যায়, তা থেকে সূক্ষ্ম মসৃণ কাপড় তৈরি হয়। মসলিন আর মেয়েদের অতি প্রিয় ওড়না এই তন্তু থেকেই তৈরি হয়। সাদা ময়ূয়ের ছড়ানো পেখমের মতো ওই কাপাস ফুলই মানুষকে আনন্দ দেয় অনেক বেশি।’ উত্তর শুনে বিস্মিত আকবর যুবকের পরিচয় জানাতে চাইলেন। যুবক তখন সম্রাটের দেওয়া আংটিটি দেখিয়ে এখানে আসার কারণটি জানল। আকবর খুশি হয়ে বললেন, ‘ঠিক আছে, তুমি আমার কাছেই থাকবে। তুমি হবে আমার অন্যতম সভাসদ। আর আজ থেকে তোমার নতুন নাম দিলাম বীরবল।
৩
সিকতার জন্য বীরবল যে অত্যন্ত বিখ্যাত, এক পণ্ডিত একথা শুনেছেন। তিনি একদিন সম্রাট আকবরের দরবারে গিয়ে উপস্থিত হলেন। মনের গোপনে লালিত একটা ইচ্ছে রয়েছে তাঁর। সেটা হলো বীরবলকে চ্যালেঞ্জ করা এবং তাঁকে হারিয়ে দেওয়া।
আগন্তুক পণ্ডিত সম্রাটের সমীপে তাঁর আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করলেন। বীরবল স্বচ্ছন্দে গ্রহণ করলেন সেই চ্যালেঞ্জ।
পণ্ডিত বীরবলকে বললেন, আচ্ছা বেশ। আপনার জন্যে দুটো অপশন আছে। আপনি কি ৫০টা সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে চান? নাকি একটা মাত্র কঠিন প্রশ্নের জবাব ?
বীরবল উত্তর দেন, একটি মাত্র কঠিন প্রশ্ন। বেশ তো বলুন, সেই প্রশ্নটি কী?
পণ্ডিতের চোখমুখে চাপা আনন্দের ঝিলিক। তিনি বলেন, আচ্ছা বেশ। বলুন, মুরগি আগে না ডিম আগে এসেছে?
কোনো দ্বিধা না করে বীরবল প্রত্যয়দীপ্ত কণ্ঠে উত্তর দেন, মুরগি এসেছে আগে।
এবার পণ্ডিতের পালটা প্রশ্ন : আপনি সেটা কী করে জানলেন?
বীরবল মুচকি হেসে বলেন, এই একটু আগে আমরা একমত হয়েছি যে, একটি মাত্র প্রশ্ন করা যাবে। সুতরাং প্লিজ দ্বিতীয় কোনো প্রশ্ন নয়। পণ্ডিতকে আর কোনো কথা না বলেই দরবার ত্যাগ করলেন।
এসএ/