ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ৮ ১৪৩১

কুসংস্কার-ধর্মীয় গোঁড়ামিতে অঙ্গ দানে অনীহা (ভিডিও)

শিউলি শবনম, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:০১ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সোমবার

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানে চরম অনীহার পেছনে দায়ী অসচেতনতা, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও কুসংস্কার। তবে দেরিতে হলেও বাড়ছে আগ্রহ। ব্রেন ডেথ রোগীদের মহৎ এই দানের সফলতায় বিশেষজ্ঞ সার্জনসহ অবকাঠামোগত সংকট নিরসনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। 

মস্তিষ্ক অচল হয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন বাঁচার কোনো সম্ভাবনা না থাকা রোগীকে বলা হয় ‘ব্রেন ডেথ’। একজন ব্রেন ডেথ মানুষের অঙ্গ প্রতিস্থাপন বা ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টে জীবন বাঁচে আটজনের।

অঙ্গদানে মানবতার অনন্য ইতিহাস রচনা করে গেছেন মৃত্যুঞ্জয়ী সারাহ ইসলাম। ২০ বছর বয়সী এই তরুণী ক্যাডাভেরিক প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নিজের কিডনি ও কর্নিয়া দিয়ে চারজনকে নতুন জীবন দিয়েছেন। 

মৃত্যুর পরেও মানুষের কল্যাণে এমন অবদান রেখে যেতে পারাকে মানবজীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।  

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বিএম আবদুল্লাহ বলেন, “সারাহ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেল এবং সারাহকে অনুসরণ করবে শুধু আমাদের দেশের নয় সারা পৃথিবীর মানুষ। সে শুধু অঙ্গ নিয়ে বেঁচেই থাকবে না, অবদানও রাখবেন।”

ক্যাডাভেরিক প্রতিস্থাপনে ব্রেন ডেথ রোগীদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানে উদ্বুদ্ধ করতে সংশোধনী এনে ২০১৮ সালে নতুনভাবে প্রণীত হয় মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন। 

আইনটি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই অধিকাংশেরই। রয়েছে কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বও। তবে অন্যের জীবন বাঁচাতে ইসলামসহ কোনো ধর্মে অঙ্গদানের সঙ্গে বিরোধ নেই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।  

কিডনি ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. হারুন উর রশিদ বলেন, “আমরা ৫শ’ ডাক্তার-নার্সদের উপর একটা সার্ভে করেছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত ৬০ থেকে ৭০ ভাগ জানেনই না মৃতব্যক্তির কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা যায়। মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরব থেকে শুরু করে ইরান-টার্কিতে বিশ্বের ৮০ ভাগের উপর মুসলমান, তারা সবাই কিডনি ট্রান্সপ্লান্টকে বৈধতা দিয়েছে ধর্মীয়ভাবে।”

বিএসএমএমইউ ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, “কোরআনে সুরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন, যে একটা মানুষকে হত্যা করলো সে সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করলো। ঠিক পরপরই আল্লাহ বলেন কেউ যদি একটা মানুষকে রক্ষা করলো সে সমগ্রজাতিকে রক্ষা করলো। এই কথার পরে তো আর কিছুই থাকে না। আমার দুটি অঙ্গ দিয়েছে সেখান থেকে একটি দিয়ে দিলে মৃত্যু পথযাত্রী বেঁচে গেল। এটা প্রকারান্তরে আল্লাহকে প্রসন্ন করা হলো।”

সারাহ’র দেখানো পথে এরই মধ্যে অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, প্রো-ভিসিসহ চারজন। চলছে দেশব্যাপী ক্যাডাভার দাতা ও গ্রহীতার তালিকা তৈরির কাজ। 

অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, “যারা ট্রান্সপ্লান্ট করবেন তাদের একটা তালিকা নিয়ে ন্যাশনাল রেজিস্ট্রি করবো। যারা ডোনেট করতে যাচ্ছেন তাদেরকে আমরা এন্ট্রি করবো।”

তবে মহৎ এই উদ্যোগ সফল করতে হাসপাতালগুলো কতোটা প্রস্তুত- রয়েছে সে প্রশ্নও। এজন্য বিশেষজ্ঞ সার্জন, দক্ষ চিকিৎসক, নার্সসহ প্রশিক্ষিত জনবলের সংকট ঘোচানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের। 

অধ্যাপক ড. হারুনর রশিদ বলেন, “সঙ্গে সঙ্গে প্রশিক্ষিত নার্স-ডাক্তার-ফিজিশিয়ান-সার্জন এগুলো ত্বরানিত করতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে হয়তো ডোনার পাবেন, ট্রান্সপ্লান্টের লোক পাবেন কিন্তু সেই ধরনের সার্জন-হসপিটাল পাবেন না।”

ধর্মীয় গুরুদের মাধ্যমেও অঙ্গদানে মানুষকে আগ্রহী করার আহ্বান সংশ্লিষ্টদের।

এএইচ