ঢাকা, সোমবার   ১৪ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২৯ ১৪৩১

শহীদ সেলিম-দেলোয়ার দিবস আজ 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫৬ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ মঙ্গলবার

আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ সেলিম-দেলোয়ার দিবস। ১৯৮৪ সালের এই দিনে স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী গণআন্দোলন চলাকালে পুলিশের ট্রাকের চাপায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুই নেতা এইচ এম ইব্রাহিম সেলিম ও কাজী দেলোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আজ তাঁদের ৩৯তম শাহাদাতবার্ষিকী।

পরে লাশ দুটিকে নিজেরাই তুলে নিয়ে পোস্টমার্টেমে করে পুলিশ। দাফনও করা হয় পুলিশি কঠোর পাহারায়।

নিহত সেলিম ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র; তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিপুর গ্রামে। আর দেলোয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র; বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর পৈকখালী গ্রামে।

ইতিহাসের ভাষ্যমতে, ১৯৮৪ সালের উপজেলা নির্বাচনের ডাক দেয় স্বৈরাচার সরকার। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দল ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৭ দল এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নির্বাচনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে।

ওইদিন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে। মিছিল শুরুর প্রাক্কালে কবি মোহন রায়হান আবৃত্তি করেন- “আমাদের মৃত্যুর জন্যে আজ কোনো পরিতাপ নেই আমাদের জন্মের জন্যে আজ কোনো ভালোবাসা নেই, আমাদের ধ্বংসের জন্যে আজ কোনো প্রতিকার নেই, আমাদের সবকিছু আজ শুধু ছলনার, শুধু আজ ব্যর্থতার ক্লেদ নিয়ে আসে। আজকে এখানে একজন শিক্ষক জন্মাক, আজকে এখানে একজন বুদ্ধিজীবী থাক, আজ নবজন্ম হোক এদেশের লেখক কবির আর তারা অন্ধকারে ঝলসিত আগ্নেয়াস্ত্রের মতন হোক স্পর্ধিত; স্পর্ধিত হোক আজ তারা স্পর্ধিত হোক।”

সেদিন এ দুই ছাত্রনেতা (সেলিম ও দেলোয়ার) ছিলেন মিছিলের পেছন দিকে। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে দিয়ে রোকেয়া হল পেরিয়ে টিএসসি হয়ে, কার্জন হলের দিকে এগোতে থাকে। মিছিলটি কার্জন হল পার হয়ে রাজধানীর গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল এলাকায় পৌঁছানোর পরই বর্তমান ফায়ার ব্রিগেড অফিসের পাশ থেকে পুলিশের সেই ট্রাক অতর্কিতে পেছন থেকে মিছিলের ওপর দিয়ে দ্রুতগতিতে চালিয়ে দেয়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তাঁরা। চিরদিনের মতো পঙ্গু হয়ে যান কয়েকজন।

তাদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখে।

ঘাতক ট্রাক জন্ম দেয় বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নিষ্ঠুরতম হত্যাযজ্ঞের। সেই ঘটনার পর থেকে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমাবেশে আর রাজপথের এরশাদবিরোধী মিছিলে ছাত্ররা স্লোগান দিতে থাকে; ‘সেলিম, দেলোয়ার, তিতাস ; আন্দোলনের লাল পলাশ।’

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক বাণীতে বলেন, “অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ২৮ ফেব্রুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৮৪ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছাত্রলীগ নেতা সেলিম ও দেলোয়ার স্বৈরাচার বিরোধী মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন।’

তিনি শহীদ ছাত্রনেতা সেলিম ও দেলোয়ারসহ গণতন্ত্রের জন্য আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

অন্য এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন-সংগ্রামে সেলিম ও দেলোয়ারসহ যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, তাদের রক্তের ঋণ কখনও শোধ হওয়ার নয়। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সংগ্রাম ও অনেক প্রাণের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অবশেষে স্বৈরশাসকের পতন ঘটে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। আবারও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাংলাদেশের জনগণ ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরে পায়।” 
এসএ/