ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪,   পৌষ ১২ ১৪৩১

জোড়াতালি দিয়ে চলছে নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতাল

ফরহাদ খান, নড়াইল থেকে

প্রকাশিত : ১০:০৭ এএম, ১২ মার্চ ২০২৩ রবিবার

নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে ডাক্তারের পদ আছে ৪০টি। তার মধ্যে কর্মরত মাত্র ১৪ জন। দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তারের ২৬টি পদ শূন্য থাকায় রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে হিমশিম কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া প্রয়োজনীয় বেড না থাকায় রোগীদের ফ্লোরের বিছানায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পাশে নতুন ভবন নির্মাণ হলেও আজও তা চালু করা সম্ভব হয়নি।

ভবনটি গত বছরের জুনে হস্তান্তরের কথা থাকলেও তা এখনও হস্তান্তর হয়নি। কবে হস্তান্তর হবে তাও অনিশ্চিত।

হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, নড়াইলের আধুনিক সদর হাসপাতালের প্রস্তাবিত বেড সংখ্যা ২৫০টি। বাস্তবে কার্যকর আছে ১০০টি। অথচ প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩৫০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। আবার বহির্বিভাগেও রোগীর চাপ রয়েছে। প্রতিদিন অন্তত এক হাজার রোগীকে চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া হয়।

এদিকে, হাসপাতালটিতে রোগীদের চিকিৎসার জন্য ৪০ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পদ রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ সিনিয়র ডাক্তারের পদ শূন্য। এসব শূন্য পদ পূরণ না করায় রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে।

হাসপাতালে বর্তমানে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, চর্ম, চক্ষু, রেডিওলজিসহ বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসক নেই। যে কারণে রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা দেয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সার্জারি ও গাইনী বিভাগে সিনিয়র কনসালটেন্টের পদও খালি। জুনিয়র মেডিকেল অফিসাররা জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন কাজ। 

হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক, রেডিওলজি বিভাগ কার্যকর থাকলেও জনবল কম থাকায় অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

নড়াইলে প্রায় ৮ লাখ জনসংখ্যা। জেলা শহরে সরকারি হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোনো বেসরকারি হাসপাতাল এবং মেডিকেল কলেজ নেই। প্রাইভেট কিছু ক্লিনিক আছে। সেখানে বেশির ভাগই গর্ভবতী মায়েদের সিজার করা হয়। তবে সেই খরচও বেশি। অনেক ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। বেশির ভাগ ক্লিনিকে অন্য রোগের তেমন কোনো চিকিৎসা করা হয় না।

রোগীদের সেবার জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত কর্মচারীর পদও শূন্য রয়েছে। এ কারণে আউটসোর্সের মাধ্যমে কিছু লোক দিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে। ফলে হাসপাতালটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বাথরুম ও হাসপাতাল ভবনের আশেপাশের পরিবেশ বেশ নোংরা।

হাসপাতালের এক্সরে বিভাগে ডিজিটাল এক্সরে মেশিনটি চালু থাকলেও সিআর মেশিনটি নষ্ট। যার কারণে বিভাগটি চলছে জোড়াতালি দিয়ে। অন্য বিভাগগুলোতেও দৈন্যদশা বিরাজ করছে।

হাসপাতালে ডাক্তারদের আবাসন সমস্যাও প্রকট। যার কারণে ডাক্তাররা এখানে থাকতে চান না। দূর-দূরান্ত থেকে এসে হাসপাতালে ডিউটি করেন, আবার চলে যান।

এদিকে, হাসপাতালের কিছু নার্স ও পরিচ্ছন্নকর্মী রোগীদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের বাজে আচরণে রোগীরা অতিষ্ঠ। রোগীদের খোঁজখবর না নিয়ে নার্স ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের অনেকে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে রোগী এবং স্বজনরা অভিযোগ করেন। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত এ সমস্যা বেশি দেয়া যায়।

অন্যদিকে, লোহাগড়া এবং কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ডাক্তারসহ জনবল সংকট রয়েছে।

এ ব্যাপারে নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক আবদুল গফফার বলেন, সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালটিতে আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা কষ্টকর ছিল। দায়িত্ব গ্রহণের পর হাসপাতালটির কার্যক্রম উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। 

ডাক্তারসহ জনবলের শূন্যপদ পূরণ এবং নতুন ভবনটি চালু করলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সমস্যাগুলো জানানো হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান হলে রোগীরা উপকৃত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এএইচ