ইসরায়েলের ইতিহাসে ‘বৃহত্তম’ বিক্ষোভ সমাবেশ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:২৮ পিএম, ১২ মার্চ ২০২৩ রবিবার
ইসরায়েলে বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের সরকারি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে। আয়োজকরা বলছেন, দেশটির ইতিহাসে এতো বড় প্রতিবাদ বিক্ষোভ এর আগে কখনো হয়নি।
সরকারের এই পরিকল্পনার প্রতিবাদে সারা দেশে টানা দশ সপ্তাহ ধরে এধরনের বিক্ষোভ সমাবেশ চলছে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, তাদের পরিকল্পনা অনুসারে বিচার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হলে সরকারের বিভিন্ন শাখার মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
পরিকল্পনায় আদালতের ক্ষমতা খর্ব করার কথা বলা হয়েছে। বিরোধীরা বলছে এর ফলে দেশটির গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়বে।
শনিবারের এই সমাবেশে বিরোধী নেতা ইয়াইর লাপিদ বলেছেন ইসরায়েলের ইতিহাসে এটি “গভীরতম সঙ্কট”।
পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি হত্যা
অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে তাদের সৈন্যরা অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরের কাছে রবিবার তিনজন সশস্ত্র ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে।
তারা বলছে বন্দুকধারীরা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি ফাঁড়িতে হামলা করেছিল।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা এখনও এই ঘটনার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেন নি। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের উত্তেজনা ও সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘বৃহত্তম বিক্ষোভ’
সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ইসরায়েলে শনিবার যে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ হয়েছে তার আয়োজনকারীরা বলছেন প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ দেশজুড়ে রাস্তায় নেমে এসেছে।
ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎস এই প্রতিবাদ সমাবেশকে “দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ” বলে উল্লেখ করেছে।
দুই লাখের মতো মানুষ জড়ো হন তেল আভিবে। তাদের অনেকের হাতেই ছিল ইসরায়েলের জাতীয় পতাকা।
একজন বিক্ষোভকারী তামির গাইটসাবরি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন: “এটা বিচার ব্যবস্থার সংস্কার নয়। এটা হবে এক ধরনের বিপ্লব যার ফলে ইসরায়েলে সম্পূর্ণ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি আমার সন্তানদের জন্য চাই ইসরায়েলে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকুক।”
তেল আবিবের পুলিশ প্রধান আমিচাই এশেদ যখন সমাবেশের ভেতর দিয়ে হেঁটে যান তখন বিক্ষোভকারীরা হর্ষ-ধনি দিয়ে ওঠে। নেতানিয়াহুর সরকার এর আগে এই ডিস্ট্রিক্ট কমান্ডারকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেলের বাধার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।
বিরোধীরা কী বলছে
উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফায় এই প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে ৫০ হাজারের মতো মানুষ।
দক্ষিণের শহর বির শেভায় আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বিরোধী নেতা লাপিদ সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে ইসরায়েল এখন নজিরবিহীন এক সঙ্কটের মুখে পড়েছে।
“আমাদেরকে সন্ত্রাসবাদ আঘাত করছে, আমাদের অর্থনীতি ধসে পড়ছে, দেশ থেকে অর্থ চলে যাচ্ছে। সৌদি আরবের সঙ্গে নতুন এক চুক্তি সই করেছে ইরান। কিন্তু এই সরকার একমাত্র দেশটির গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার দিকে জোর দিচ্ছে,” বলেন তিনি।
বিরোধীরা বলছে বিচার ব্যবস্থায় প্রস্তাবিত সংস্কার সাধিত হলে নির্বাচিত সরকার বিচারক নিয়োগে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে এবং নির্বাহী বিভাগের ওপর সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়বে।
এই পরিকল্পনাকে ঘিরে ইসরায়েলি সমাজে গভীর বিভক্তি তৈরি হয়েছে। এবিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ভিত্তি হিসেবে পরিচিত রিজার্ভ সৈন্যবাহিনীর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে যারা এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইতালি যেতে চাইলে প্রতিবাদকারীরা রাস্তা বন্ধ করে তার সফরে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পরে তিনি রোমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে সক্ষম হন।
সরকার বলছে রাজনৈতিক বিরোধীরা এধরনের বিক্ষোভে উস্কানি দিচ্ছে।
সমালোচকরা বলছেন সরকারের পরিকল্পিত সংস্কার বিচার বিভাগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করবে যার ফলে কর্তৃত্ববাদী সরকারের সূচনা ঘটতে পারে।
এই অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, গত নির্বাচনে জনগণের ভোটে তার সরকার গঠিত হয়েছে, এবং প্রস্তাবিত সংস্কারের ফলে আদালতের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে। সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসি