মির্জাগঞ্জে হতদরিদ্রের চাল পাচ্ছেন চেয়ারম্যানের আত্মীয়রা
মির্জাগঞ্জ : (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১১:৫৭ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২৩ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:১৮ এএম, ১৭ মার্চ ২০২৩ শুক্রবার
বিঘা বিঘা জমি,পাকা পাকা ঘর বাড়ি,লাখ লাখ টাকার সম্পদের মালিক, স্বচ্ছল ব্যবসায়ীসহ বিত্তবানরা পাচ্ছেন মির্জাগঞ্জে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত খাদ্যবন্ধব কর্মসূচির চাল। আছে অন্য উপজেলার বাসিন্দার নামও। এসবই হচ্ছে মির্জাগঞ্জের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায়। এছাড়াও চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের স্বজনদের নামে পরিপূর্ণ করা হয়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা। তালিকায় নাম এক ব্যক্তির, অথচ চাল তুলছেন অন্য ব্যক্তিরা। এ উপজেলার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা দেখলে মনে হবে এখানে অনিয়মই যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে। হতদরিদ্রদের চাল বিতরনে এমনই অভিযোগ উঠেছে উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। প্রকৃত দরিদ্ররা বঞ্চিত হচ্ছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধা থেকে। তবে ওই সকল জনপ্রতিনিধিরা সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে অস্বীকার করছেন ।
অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী মো. মিজানুর রহমান লাভলু তার ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য, প্রতি কার্ড বাবদ তিন থেকে চার হাজার টাকা আদায় করেছেন। আবার টাকা দিয়েও তালিকায় নাম মেলেনি অনেকের। তবে টাকা নেওয়ার বিষয়টা অস্বিকার করেছেন চেয়ারম্যান লাভলু। আমাদের হাতে আসা কর্মসূচির তালিকায় থাকা ওইসব হতদরিদ্রের খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায়, মাধবখালী ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের মো. সুমন রেজা তার নাম রয়েছে হতদরিদ্রের তালিকায়, কিন্তু তিনি থাকেন তার নিজের নির্মাণ করা দোতলা পাকা বাড়িতে। রামপুর গ্রামের বাসিন্দা মোসাঃ নাহিদা সুলতানার নামও রয়েছে এ তালিকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায় নাহিদার স্বামী চাকরিজীবি থাকেন নিজেদের পাকা বাড়িতে। এছাড়াও তালিকায় নাম রয়েছে পার্শ্ববর্তী দুমকী উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মাকসুদার, যার ভোটার আইডি কার্ড সহ সকল ঠিকানাই দুমকীর উপজেলায়।
এদিকে মাধবখালী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. উজ্জল মৃধার স্ত্রী লাকি আক্তার ও তার আপন ভাই সাকিব ইসলামের নামও রয়েছে হতদরিদ্রদের চালের তালিকায়। ইউপি চেয়ারম্যান এর চাচাতো ভাই কাজি আবু জাফরের নাম রয়েছে তালিকায় খোঁজ নিয়ে জানাগেছে তিনি বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক। এ তালিকায় রয়েছে চেয়ারম্যানের বোন নাসিমা আলম ও শাহিনা বেগমের নামও। চেয়ারম্যানের আরেক স্বজন পূর্ব চৈতা গ্রামের বাসিন্দা মো. সোহেল মৃধা নামক এক ব্যবসায়ীর নামও রয়েছে তালিকায়। বাজিতা গ্রামের বাসিন্দা মো.মোসলেম আলী ও সাজ্জাল যার বিপুল পরিমানে জমি-জমাসহ পাকা বাড়ির মালিক এই একই ঘরের বাসিন্দা পিতা পুত্রের নামও রয়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায়। তবে যাদের নাম তালিকায় রয়েছে তারা অনেকেই জানান, তাদের নাম শুধুমাত্র কাগজে কলমে আছে। এদের নামে চাল কারা তোলেন তারা অনেকেই জানেন না।
কার্ডধারী ভুক্তভোগী সাজ্জাল জানান,‘ প্রথম দিকে আমার নামে চাল পেলেও এখন চেয়ারম্যান কিংবা ডিলারের কাছে গেলে আপনার নামে চাল নেই বলে জানান। কারা এ চাল উত্তোলণ করেন তাও জানেন না।
রামপুর গ্রামের বাসিন্দা মোসাঃ নাহিদা সুলতানা বলেন, আমার পাকা ঘর তাতে কি! চালের নামের জন্য চেয়ারম্যানকে ৪ হাজার টাকা দিতে হয়েছে এরপরই চালের নাম পেয়েছি।
এদিকে ওই ইউনিয়নের মনিকা রাণী নামের আরেক হতদরিদ্র জানান, আমি হতদরিদ্র হওয়া সত্তেও এক হাজার টাকা দিয়েও চালের নাম পাইনি, অথচ যারা ৪-৫ হাজার টাকা দিয়েছে তারা বিত্তবান হওয়ার পরও চাল পাচ্ছেন। এই ইউনিয়নে চালের নাম পেতে হলে চেয়ারম্যান মেম্বারদের স্বজন হতে হবে নয়তো মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে হতদরিদ্রের তালিকায় নাম দিতে হবে।
এসকল অভিযোগের বিষয় কথা হয় মাধবখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী মো. মিজানুর রহমান লাভলুর সাথে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন আমার জানা মতে কোন বিত্তবানের নাম তালিকায় নাই। এছাড়া তালিকায় কোনো নাম দেওয়ার বিনিময়ে টাকা পয়সার লেনদেন হয়নি।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ডি এম শাহাদাৎ হোসেন, বলেন আমিও কিছুটা শুনেছি,যেহেতু এদের নামের তালিকা ইতোপূর্বে অনলাইন হয়ে গেছে পরবর্তী সময়ে যখন কর্তনের সুযোগ হবে তখন তালিকা যাচাই করে বিত্তবানদের বাদ দেয়া হবে।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েমা হাসান বলেন,‘ এই চাল হতদরিদ্রের জন্য এখানে বিত্তবানরা চাল পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিত্তবান হওয়া সত্তেও যাদের নাম তালিকায় রয়েছে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে নির্বাচন হয়েছে এক বছর তিন মাস, এই সময়ে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান লাভলু হয়েছেন টাকার কুমির। কাঠালতলী বাসস্ট্যান্ড এর পশ্চিম পাশে দশকাঠা জমির উপরে নির্মান শুরু করেছেন বহুতল ভবন। টি আর খাবিখা কাবিটা সালিস বানিজ্য জবর দখল মাদক ব্যবসা সব সেক্টরই তার নিয়ন্ত্রনে। এসব সেক্টর থেকে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা তিনি আয় করেন। এ নিয়ে খবর প্রকাশ করেন মাদবখালী ইউনিয়ন আওয়ামীগ এর সভাপতি তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ এর সাধারন সম্পদক ও এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাই তার কাছে যেন সব অনিয়মই নিয়মে পরিনত হয়েছে।