ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

আরাভের প্রথম স্ত্রী মেহেরপুরের কেয়া পুলিশ হত্যা মামলার আসামি

মেহেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:৫৮ পিএম, ২১ মার্চ ২০২৩ মঙ্গলবার

দুবাইয়ের বিতর্কিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী পুলিশ হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভের প্রথম স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া। কেয়া মেহেরপুর গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের আবুল কালাম আজাদ ও মনোয়ারা খাতুন দম্পতির মেয়ে।

সম্প্রতি আরাভের দুবাইয়ে স্বর্ণের শোরুম উদ্বোধনের পর থেকে তার স্বজনসহ সহযোগিদের খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে প্রশাসন। তারই ধারাবাহীকতায় গাংনী পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আরাভের প্রথম স্ত্রী কেয়ার খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানতে পারে সেও  পুলিশ কর্মকর্তা খুনের মামলার আসামি।

গাংনী থানার এসআই জিল্লুর রহমান জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে কেয়া নামের ওই মেয়ের সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলা হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে আরাভের প্রথম স্ত্রী কেয়াও পুলিশ কর্মকর্তা খুনের মামলার আসামি। তবে তিনি আদালত থেকে জামিনপ্রাপ্ত হয়ে বাইরে আছেন। মামলার আসামি হবার পর আরাভ কেয়াকে ডিভোর্স দেয়। 

সম্প্রতি কেয়া সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের শাহিন নামের একজনকে বিয়ে করে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন কেয়ার বাবা আবুল কালাম আজাদ।

আবুল কালাম আজাদ জানান, কেয়ার মা তার খালাতো বোন। নিজ বাড়ির পাশেই তার খালার বাড়ি।  ১৯৯৬ সালে মনোয়ারার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। এরপর থেকেই তাদের সংসার জীবন ভালোই চলছিল। কিন্তু ২০০০ সালে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে একটি মামলায় জেল হয় তার। তখন কেয়ার বয়স মাত্র ৩ বছর। মাঝে মাঝে মেয়েকে নিয়ে তাকে জেলা খানায় দেখতে যেতেন তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। কিন্তু দীর্ঘদিন জেলে থাকার কারণে তাদের সংসারে ফাটল ধরে। ২০১১ সালে জেল থেকে বের হয়ে আসেন আবুল কালাম। এসে শুনতে পান তার স্ত্রী তাকে তালাক দিয়েছে। 

তারপর থেকে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও পারেননি তিনি।

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, স্ত্রী মনোয়ারা খাতুন বিয়ে করেন মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের এক হোমিও চিকিৎসককে। পরে তারা ঢাকায় চলে যান। ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করে কেয়া। তার মা তাকে বাবার অমতে ভর্তি করে দেন ঢাকার একটি ম্যাটস কলেজে। সেখানে চিকিৎসাবিদ্যায় ডিপ্লোমা করতেন কেয়া। ঢাকায় ভর্তি হবার কিছুদিন পরই শুনতে পান তার মেয়ে সম্পর্কে জড়িয়েছেন আপন (বর্তমান আরাভ খান) নামের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর সঙ্গে। 

পরে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় তার সথে। ২০১৪ ও ১৫ সালে স্বামীকে নিয়ে দুইবার গাড়াডোব গ্রামে তার খালার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। তখন বিলাসবহুল জীবন যাপন করতো তারা। 

এরপরই কিছুদিন যেতে না যেতেই খবর আসে কেয়া একটি পুলিশ হত্যা মামলার আসামি। পরে জেলেও যেতে হয় কেয়াকে। এ সময় আপন তালাক দেয় কেয়াকে। দীর্ঘ কয়েক বছর হাজত বাস করার পর ২০২২ সালে জামিনে মুক্তি পায় সে। পরে সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের শাহিন নামের এক যুবককে বিয়ে করে। তারপর সে স্বামীর সঙ্গে মালয়েশিয়ায় চলে যায়।

গাঁড়াডোব গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা সরোয়ার হোসেন টোকন বলেন, কেয়া ও তার স্বামী অনেক আগে দুবার গ্রামে এসেছিল।  তারপর থেকে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে মাঝে মধ্যে কেয়াকে ডিবি পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা এসে খোঁজ খবর নিতো। এখন দেখছি কেয়া ও আরাভকে নিয়ে গ্রামের মানুষ খবর দেখার জন্য টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে চোখ রাখছে। খবর নিচ্ছে। 

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মামলাটি ব্যাপক আলোচনায় আসার পর কয়েকদিন আগে ডিএমপি পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে সুরাইয়া আক্তার কেয়ার খোঁজখবর নিতে একটি চিঠি দিয়েছে। খোঁজখবর নেওয়ার কাজ অব্যাহত আছে। তার সম্পর্কে অনেকেই ভিন্ন ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, দুবাই আছে আবার কেউ বলছেন মালয়েশিয়া। আমরা চেষ্টা করছি তার সঠিক অবস্থান জানার।

এএইচ