ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩১

মহাকাশে নভোচারীরা কী খায়, কীভাবে খায়?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩১ এএম, ২৫ মার্চ ২০২৩ শনিবার

মহাকাশে নভোচারীরা কী খান, মাধ্যাকর্ষণের অভাবে ভেসে বেড়ানো খাবার কীভাবে মুখে তোলেন, মহাকাশে নভোচারীরা কেমন জীবন কাটান, এসব নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলছেন বহু সাধারণ মানুষ।

আমেরিকার নভোচারীরা বর্তমানে মহাকাশ অভিযানের জন্য যে পোশাক পরেন, ১৯৮১ সালের পর নতুন করে পুরোপুরি তার ডিজাইন আর বদল করা হয়নি।

এখন নতুন স্পেসস্যুটের যে ডিজাইন দেওয়া হয়েছে, তা নারী নভোচারীদেরও পরতে সুবিধা হবে বলে বলা হচ্ছে। এই পোশাক যদি ছাড়পত্র পেয়ে যায়, তাহলে আর্টেমিস থ্রি মহাকাশ মিশনে নভোচারীরা যাবেন এই পোশাক পরেই।

পাঁচ দশক পর আর্টেমিস থ্রি আবার মানুষ নিয়ে যাবে চাঁদে।

কিন্তু ওই খাওয়াদাওয়ার বিষয়গুলো? সেগুলো কীভাবে হবে? বিবিসির ফুড চেইন রেডিও অনুষ্ঠান এ নিয়ে কথা বলেছিল নাসার অবসরপ্রাপ্ত নভোচারী নিকোল স্টটের সঙ্গে। কী বলছেন তিনি?

“সারাক্ষণ পিৎজার কথা ভাবতাম,” স্বীকার করলেন নিকোল স্টট। তার দীর্ঘ মহাকাশ কেরিয়ারে তিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে দুটি আলাদা মিশনে ১০০ দিনের বেশি সময় কাটিয়েছেন। সেসময় তাকে বিশেষভাবে তৈরি খাবার খেতে হয়েছে।

“দেখুন, পিৎজা মানেই ময়দার তৈরি রুটির বেসের ওপরে বেশ ঝুরঝুরে রুটির কিছু অংশ, যা চিবাতে মজা, সেইসাথে ওপরে গলা পনির আর গরম সস!” বললেন তিনি।

কিন্তু মহাকাশে খাবার তৈরি করতে হয় শূন্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা মাথায় রেখে। অর্থাৎ সেখানে রুটি থাকবে না, রুটির গুঁড়ো থাকবে না, থাকলে রুটির গুঁড়ো তো বাতাসে ভেসে বেড়াবে। কাজেই পিৎজা হবে নরম ময়দার বেস দিয়ে।

“প্রাতঃরাশে অবশ্য বিশেষ ভাবে তৈরি ডিম খাওয়া যায়, ছোট সাইজের ডিম ভাজা বা ওমলেটও দেওয়া হয়।”

মহাকাশে নভোচারীরা প্রায়ই স্কুলের বাচ্চাদের মত এ ওর খাবারে ভাগ বসান।

“লাঞ্চে আমাদের দেয়া হত স্যুপ। আর অন্য কিছু খাবার। তবে সব কিছু মোড়া থাকত ময়দার পাতলা রুটি দিয়ে। আর রাতে জাপানি কারি, যা খুবই সুস্বাদু আর আমার খুব পছন্দের।”

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কোন থালা বাটি ব্যবহার করা যায় না, কারণ সেখানে সবই শূন্যে ভেসে বেড়ায়।

নভোচারীরা যেসব খাবার খায়, তা খুবই প্রক্রিয়াজাত এবং খাবারের ওজন কমানোর জন্য খাবার থেকে সব পানি শুষে বের করে নেওয়া হয়। এরপর নভোচারীরা খাবার আগে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী তাতে গরম বা ঠাণ্ডা পানি মিশিয়ে নরম করে নেয়।

সব খাবার প্যাকেট করা থাকে, নভোচারীদের সেই প্যাকেট থালা হিসাবে ব্যবহার করতে হয় আর খাওয়ার জন্য তাদের দেয়া হয় বিশেষ চামচ।

সেই চামচে হাতল থাকে খুব লম্বা। লম্বা হাতল দিয়ে প্যাকেটের ভেতর থেকে ভাত টেনে বের করে কারির ওপর রাখতে হয়। তবে তার জন্য বেশ কসরৎ করতে হয়। ভাতের সাথে কারি মেশাতে গেলে কারির ফোঁটাগুলো ভেসে বেড়ায়,” মিজ স্টট বললেন।

কিন্তু ভেসে বেড়ানো খাবার খাওয়া তো কঠিন। নিকোলা স্টট কীভাবে খাওয়াটা রপ্ত করেছিলেন?

“ভাসমান খাবার খাওয়া কিন্তু বেশ মজার ব্যাপার। আমরা চামচে খাবার নিয়ে একে অপরের দিকে ছুঁড়ে দিতাম কিংবা চামচে করে খাবার শূন্যে ছুঁড়ে দিয়ে তা মুখের ভেতর লুফে নিতাম। বেশ মজাই লাগত।”

মহাকাশ স্টেশনে নভোচারীদের জন্য খাবার পাঠানোর আগে খাবারের ওজন কমানোর জন্য খাবার থেকে পানি বের করে সেগুলো শুকনো করে ফেলা হয়

মহাকাশে নিজের শরীরকে আর্দ্র রাখা খুবই জরুরি। কিন্তু মহাকাশে পানি আসবে কোথা থেকে?

নভোচারীরা পৃথিবী থেকে অবশ্যই কিছু পানি সঙ্গে নিয়ে যান। আর বাকিটা আসে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা পানি থেকে।

মহাকাশযানের জ্বালানি কক্ষ থেকে, বাতাসের আর্দ্রতা থেকে এমনকি প্রস্রাব থেকেও পুনরায় ব্যবহারযোগ্য পানি তৈরি করা হয়।

শুনলে হয়ত নাক সিঁটকাতে ইচ্ছা হবে, কিন্তু নাসা দাবি করছে এই রিসাইকেল করা পানি আমরা পৃথিবীতে যে পানি খাই তার থেকেও অনেক পরিষ্কার।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসবি/