সীতাকুণ্ড যেন এক মরণ ফাঁদ (ভিডিও)
হাসান ফেরদৌস, চট্টগ্রাম থেকে
প্রকাশিত : ১২:৫৬ পিএম, ২৭ মার্চ ২০২৩ সোমবার
অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, তদারকি সংস্থার গাফেলতির কারণে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড যেন এক মরণ ফাঁদ। ঘটছে অগ্নিকাণ্ড বিস্ফোরণসহ নানা দুর্ঘটনা, ঝরছে প্রাণ। এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে শিল্প এলাকাখ্যাত সীতাকুণ্ড। গত বছর ৪ জুন বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নি বিষ্ফোরণে নিহত হয় ৫১ জন। ঠিক এর আটমাস পর সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে মারা যায় ৭ জন। এছাড়া গেল দু’দশকে শুধুমাত্র সীতাকুণ্ডের জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মারা গেছে ২৫৫ জন। আহত হয়েছে কয়েকশ’।
স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ডসহ ছোট-বড় ৪৮০ থেকে ৫শ’টি শিল্প কলকারখানা রয়েছে। এর মধ্যে কন্টেইনার ইয়ার্ড, সিমেন্ট, রড, ওষুধ, গার্মেন্টস শিল্প, অক্সিজেন প্ল্যান্টসহ ছোট-বড় বিভিন্ন কারখানা রয়েছে। সাগর উপকূলে গড়ে তোলা হয় ভয়াবহ বিপদজনক ১৮০টি জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প।
স্থানীয়রা জানান, সেফটি যদি থাকতো এরকম ঘটনা ঘটতো না। চিন্তা করা দরকার, জনবহুল এলাকার কত দূর বাইরে গিয়ে ইন্ডাস্ট্রি করা যেতে পারে।
আইন মেনে কারখানা স্থাপন না করায় সীতাকুণ্ড এখন ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
সীতাকুণ্ডের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠক প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “সঠিক পরিকল্পনা অভাবে যত্রতত্র শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠার কারণে একটার পর একটা দুর্ঘটনা হচেছ সীতাকুণ্ডে।”
শ্রম আইন অনুসরণ না করে ঠিকাদারী ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ, সরকারি তদারকি সংস্থার গাফিলতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। এজন্য টাস্কফোর্স গঠনেরও দাবি তাদের।
চট্টগ্রাম সিপিবি যুগ্ম সম্পাদক নুরচ্ছাফা ভুইয়া বলেন, “টাস্কফোর্স গঠনের মধ্য দিয়ে এখানকার বিদ্যমান অবস্থা পরিবর্তন করা বাঞ্চনীয় বলে মনে করছি।”
চট্টগ্রাম ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মো: মসিউদদৌলা বলেন, “
নিয়মিত তদারকি না করলে আরও বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন অভিজ্ঞজনরা। এদিকে, দুর্ঘটনা বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণসহ তদারকি কার্যক্রম জোরদার করার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।
সীতাকুণ্ড সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলম বলেন, “আমরা প্ল্যানিং করছি নতুন করে কোনো প্রতিষ্ঠান যাতে যত্রতত্র গড়ে উঠতে না পারে। আর যে প্রতিষ্ঠানগুলো হয়েছে এগুলোর সেফটি কিভাবে নিশ্চিত করা যায়।”
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, “অগ্নি নির্বাপনের জন্য মালিকপক্ষ যদি নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে তাহলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।”
বিভিন্ন শিল্প স্থাপনের বিষয়ে যদি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা না যায় তাহলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এএইচ