ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১

বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের চার দশক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:০৮ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২৩ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০২:১৩ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২৩ বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের পথচলা শুরু ১৯৮৩ সালে। দীর্ঘ ৪০ বছরে ব্যাংকিংয়ের শরিয়াহভিত্তিক ধারাটি বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দেশের ব্যাংক খাতের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই এখন ইসলামী ধারার ব্যাংকিংয়ের আওতাধীন। পূর্ণাঙ্গ ধারার ১০টি ইসলামী ব্যাংকের পাশাপাশি প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোও যুক্ত হচ্ছে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে। বিশেষায়িত শাখা ও উইন্ডোর মাধ্যমে চালাচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম।

ইসলামী ব্যাংক, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ও ইন্স্যুরেন্সের মতো সেবা বৈশ্বিক আর্থিক খাতে এখন বিশিষ্ট একটি স্থান অর্জন করে নিয়েছে। ঝুঁকি ভাগাভাগি, অন্তর্ভুক্তি ও প্রকৃত সম্পদভিত্তিক লেনদেনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বৈশ্বিক এ প্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও এখন দিনে দিনে আরো শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলছে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত সহায়তাও খাতটির বিকাশে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বর্তমান

২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক ছিল ১০টি। সারা দেশে ১ হাজার ৬৫৯টি শাখার মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে একই সময়ে দেশের পুরো ব্যাংক খাতে শাখা ছিল ১১ হাজার ১৫৩টি।

১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকের পাশাপাশি প্রচলিত ধারার ১১টি ব্যাংকের ২৩টি ইসলামী ব্যাংকিং শাখা কাজ করছে। এছাড়া ১৩টি প্রচলিত ধারার বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৫৩৫টি ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো এখন বাংলাদেশে ইসলামী আর্থিক সেবা দিচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে ইসলামী ব্যাংকিং। প্রচলিত ব্যাংকগুলোর কাছেও তা ধীরে ধীরে আকর্ষণীয় ও লাভজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে মোট আমানত ছিল ৪০৯৯.৪৯ বিলিয়ন টাকা। ২০২১ সালের একই প্রান্তিকে আমানত ছিল ১৬৮.৩৮ বিলিয়ন টাকা।

অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে মোট আমদানি পেমেন্ট হয়েছে ৩৭৮.২৫ বিলিয়ন টাকা, যা আগের ত্রৈমাসিকের ২৮০.৩৮ বিলিয়ন টাকার তুলনায় ৪২.৫৭ শতাংশ বেশি। অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২২-এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকিং দ্বারা মোট রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা হয়েছে ২৫৬.৯১ বিলিয়ন টাকা, যা আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় ৫৪.৬৮ বিলিয়ন বা ২৭.০৪ শতাংশ বেশি। প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের ইসলামী শাখা, উইন্ডোসহ ইসলামী ব্যাংকিংয়ের শাখার সংখ্যা ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষে ২ হাজার ২১৭-তে দাঁড়িয়েছে, ২০২১ সাল শেষে যা ছিল ২ হাজার ৮০টি। গত বছর শেষে এ খাতে মোট কর্মরত শ্রমশক্তি ছিল ৪৯ হাজার ৮৫১। ২০২১ শেষে যা ছিল ৪৪ হাজার ২২৩। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকগুলোর বাজার হিস্যা ক্রমেই বেড়েছে। ২০২২-এর ডিসেম্বর শেষে মোট ব্যাংক আমানতের ২৫ দশমিক ৮১ শতাংশ হিস্যা ছিল ইসলামী ব্যাংকের।

ইসলামী ব্যাংকিংয়ে মোট আমানত

২০২২ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আমানত পৌঁছায় ৪০৯৯.৪৯ বিলিয়ন টাকায়, সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় যা ১১৪.২৬ বিলিয়ন টাকা কম। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে সমগ্র ব্যাংক খাতের ২৫.৮১ শতাংশ হিস্যা ছিল ইসলামী ব্যাংকগুলোর।

এ সময়ে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকের আমানত ছিল ৩৭৯৯.৫১ বিলিয়ন টাকা। প্রচলিত ব্যাংকের উইন্ডোতে ১৬১.১৬ বিলিয়ন ও প্রচলিত ব্যাংকের শাখায় ছিল ১৩৮.৮৩ বিলিয়ন টাকা। ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার ৯২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সব ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের (আইবিবিএল) আমানত ছিল ৩৪.৪৫%। তারপরে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (১১.৫৪%), এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড (১০.৪২%), আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (১০.২৫%), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (৭.৮০%), শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (৫.৫৬%), ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড (৫.২০%), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড (৪.১৭%), ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডোজ (৩.৯৩%), ইসলামী ব্যাংকিং শাখা (৩.৩৯%), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (৩.০০%) ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (০.৩০%)।

কৃষি খাতে বিনিয়োগ

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা কৃষি ও গ্রামীণ ঋণ কর্মসূচির বিভিন্ন উপখাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে করা কৃষি খাতে বিনিয়োগ ২০.০৩ বিলিয়ন টাকায় পৌঁছেছে, যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে ৭.২৯ বিলিয়ন টাকা বেশি। তবে গত বছরের একই ত্রৈমাসিকের তুলনায় ০.১৫ বিলিয়ন টাকা কম।

ইসলামী ব্যাংকিংয়ের তারল্য পরিস্থিতি

২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার অতিরিক্ত তারল্য ১২৮.৭১ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের চেয়ে ৪৬.৫৪ বিলিয়ন কম। পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকিং শাখা ও প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোর অতিরিক্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৮২.৩৪ বিলিয়ন, ১৪.৫৮ বিলিয়ন ও ৩১.৮০ বিলিয়ন টাকায়।

ইসলামী ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স, আমদানি ও রফতানি

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্যে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের (২৬.২৯%)। তারপর এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড (২১.০৩%), শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক (১৮.৬১%), প্রথাগত ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং শাখা (১১.২২%), ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো (৫.৯৩%), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (৫.৮৭%), আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (৫.৩১%), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (২.৭৬%), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড (২.৪৮%), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (০.২০%), ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড (০.২৫%) ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক (০.০১%)।

গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে মোট আমদানি পেমেন্ট হয়েছে ৩৭৮.২৫ বিলিয়ন টাকা, ২০২১ সালের একই প্রান্তিকে যা ছিল ৪৮৪.৮০ বিলিয়ন টাকা। আমদানি পেমেন্টে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের শীর্ষ ব্যাংকগুলো যথাক্রমে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (৩১.২২%), শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক (১৪.৫৪%), এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড (১৩.৯৯%), প্রচলিত ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং শাখাগুলো (৯.৬৬%), ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো (৯.০৯%), আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (৭.৯৪%), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (৫.৭৫%), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড (৩.৯১%), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (৩.০৩%), ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড (০.৫৮%), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (০.২৮%) ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক (০.০১%)।

রেমিট্যান্স সংগ্রহ

ইসলামী ব্যাংক খাত বৈদেশিক রেমিট্যান্স সংগ্রহ এবং সারা দেশের সুবিধাভোগীদের মধ্যে বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় মোট রেমিট্যান্স সংগ্রহ হয়েছে ২৫৬.৯১ বিলিয়ন টাকা, যা পূর্ববর্তী প্রান্তিকের চেয়ে ৫৪.৬৮ বিলিয়ন বা ২৭.০৪ শতাংশ বেশি। ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার মধ্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহে চতুর্থ প্রান্তিকে শীর্ষস্থান (৫০.০১%) ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের। তারপরে রয়েছে যথাক্রমে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (৩৪.৩৮%), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (৮.৩৯%), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (১.৭৯%), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (১.৬২%), শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক (১.৩১%), প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং শাখা (০.৬৪%), এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড (০.৫২%), ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো (০.৪৮%), ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড (০.৪২%), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড (০.৪২%) ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক (০.০৩%)।

করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা

 করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) কার্যক্রমের আওতায় ইসলামী ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে। সিএসআর কার্যক্রমের ইসলামী ব্যাংকগুলোর তহবিল উত্সগুলোর মধ্যে রয়েছে জাকাত, ক্ষতিপূরণ চার্জ (খেলাপি বিনিয়োগ ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে শাস্তিমূলক চার্জ) এবং শরিয়াহ অনুমোদিত উপার্জনের অন্যান্য উত্স। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য ও দাতব্য সংস্থার মধ্যে এ তহবিলগুলো ব্যয় করা হয়। ইসলামী ব্যাংকগুলো সুবিধাবঞ্চিত লোকদের সেবা করে, যারা চরম দারিদ্র্যের কারণে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতার বাইরে থাকে। ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে সিএসআর কার্যক্রমে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২.২০ বিলিয়ন টাকা। ২০২১ সালের একই প্রান্তিকে ছিল ১.২৮ বিলিয়ন টাকা।

সার্বভৌম বিনিয়োগ সুকুক

সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৮০ বিলিয়ন টাকা সংগ্রহে সরকারের পক্ষ থেকে ২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রথম সার্বভৌম বিনিয়োগ সুকুক জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রকল্পের সামগ্রিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮.৫১ বিলিয়ন টাকা, যার মধ্যে ৮.৫১ বিলিয়ন টাকা দেবে সরকার। সুকুকের জন্য যথাক্রমে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোক্তা ও বিশেষ উদ্দেশ্য বাহন (এসপিভি) ভূমিকা পালন করছে। প্রথম পর্যায়ে ২৮ ডিসেম্বর ২০২০-এ অনুষ্ঠিত নিলামের মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর জন্য ৪০ বিলিয়ন টাকা সংগ্রহ করেছে সরকার। নিলামের সময় বিনিয়োগকারীরা ১৫১.৫৩ বিলিয়ন টাকার বিড জমা দিয়েছে। ইস্যুটি প্রায় চারবার ওভার সাবস্ক্রাইব হয়েছে। দ্বিতীয় নিলামটি ৯ জুন ২০২১-এ ৪০ বিলিয়ন টাকা মূল্যের অবশিষ্ট তহবিল সংগ্রহের জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা আট গুণ ওভার সাবস্ক্রাইব হয়েছিল। ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ইস্যুকৃত সুকুকের মোট পরিমাণ ছিল ১৮০ বিলিয়ন টাকা।

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশ সহায়ক নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হলে দেশের ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার মতো ইসলামী পুঁজিবাজার, বীমা (তাকাফুল) এবং ক্ষুদ্র ঋণ খাতও পদ্ধতিগতভাবে বিকশিত হতে পারবে। ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার অগ্রগতি বজায় রাখতে এ-সংক্রান্ত সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা মোট ব্যাংক খাতের আমানতের ২৫ শতাংশের বেশি এবং বিনিয়োগের ২৯ শতাংশের বেশি শেয়ারের প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম বাড়লেও পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকগুলোর গ্রামীণ শাখার সংখ্যা চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি। এসব প্রতিষ্ঠানের এখন গ্রামীণ এলাকায় কার্যক্রমের প্রচার ও প্রসারের দিকে আরো বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত। এছাড়া কৃষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসার মতো সামাজিক ভূমিকা রাখা খাতে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিনিয়োগ আরো বাড়ানো প্রয়োজন। মুদারাবা ও মুশারাকার মতো আদর্শ ইসলামী পদ্ধতিতে ইসলামী ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ এখনো ন্যূনতম পর্যায়ে রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুদারাবা ও মুশারাকার অধীনে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় সঠিক দিকনির্দেশনা ও নীতিমাল তৈরিতে ইসলামী ব্যাংকগুলোকে আরো মনোযোগী হতে হবে। ইসলামী ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র অর্থ প্রকল্পগুলোয় গ্রাহকদের জন্য বিনিয়োগের নতুন খাত খুঁজে বের করতে পারে। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা ও সরকারি সংস্থাগুলোর আর্থিক চাহিদা পূরণের মতো অনেক সেবা ইসলামী ব্যাংকগুলোকে বিকাশের জন্য একটি বড় সুবিধা দেবে। অতিরিক্ত তারল্যকে কাজে লাগানোর জন্য ইসলামী ব্যাংকগুলোকে মুদ্রাবাজার ও পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট নতুন পণ্য চালু করতে হবে।

যেহেতু ইসলাম রিবা (সুদ) নিষিদ্ধ করেছে, তাই ইসলামী ব্যাংকগুলো বর্তমানে বাজারে বিদ্যমান সুদ বহনকারী সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডগুলোয় বিনিয়োগ করতে পারে না। এ অবস্থায় সুকুকের সাম্প্রতিক প্রবর্তন ও বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এর বিশাল প্রতিক্রিয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে এটি ইসলামী ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনাকে সহজতর করবে, যা সরকারের বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নে সহায়তা করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে ইসলামী পুঁজিবাজারের বিকাশ ঘটাতে পারে।

গবেষণা ও প্রশিক্ষণে বর্ধিত ব্যয়ের মাধ্যমে মানবসম্পদের মান উন্নত করার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকগুলোর কর্মক্ষমতা আরো উন্নত করা যেতে পারে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীর দক্ষতা ও জ্ঞানের উন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা যেতে পারে, যা নতুন ইসলামী আর্থিক উপকরণ ও পদ্ধতি তৈরির ক্ষেত্রে সামনের দিনগুলোয় সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। স্থানীয় ও বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে অংশগ্রহণ বাড়াতে পেশাদারত্বনির্ভর প্রয়াসগুলোকেও আরো জোরদার করা দরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচেষ্টার সঙ্গে সংগতি রেখে গভীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য এবং ক্যাশলেস সমাজের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ইসলামী ব্যাংক, শাখা ও উইন্ডোগুলোকে সব ধরনের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও ডিজিটাল ব্যাংকিংয়েও মনোযোগী হতে হবে।

সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং সংক্রান্ত সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন থেকে সংকলিত