ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৭ ১৪৩১

উত্তম ইবাদত সেবা

একুশে টেলিভিশ

প্রকাশিত : ০২:২১ পিএম, ৩ এপ্রিল ২০২৩ সোমবার

সকল ধর্মের মধ্যে যত উপাসনা আছে, আরাধনা আছে ,যত ইবাদত রয়েছে তার মধ্যে উত্তম ইবাদত হচ্ছে সেবা, সাদকা, সহযোগিতা, দয়া-মায়া। প্রত্যেকটা ভালো কাজেই স্রষ্টা খুশি হন!

আমরা ভালো কাজ করি এই ভেবে যে এই ভালো কাজটা করলে আল্লাহ খুশি হবেন, ভগবান সন্তুষ্ট হবেন, গড প্লিজড হবেন।

আমরা আমাদের স্রষ্টাকে যে নামেই ডাকি, কেউ আল্লাহ নামে ডাকি, কেউ ভগবান নামে, কেউ ঈশ্বর নামে, কেউ গড নামে। আসলে আমরা এক প্রভুকেই ডাকি এক স্রষ্টাকেই ডাকি।

তো আমরা সবাই ভালো কাজ করি বা ইবাদত করি উপাসনা করি আরাধনা করি কী জন্যে? নাম জপ করি, দোয়া-দরুদ পড়ি, জিকির-আযকার করি কী জন্যে করি? যে স্রষ্টা সন্তুষ্ট হবেন আল্লাহ খুশি হবেন।

তো আল্লাহ প্রত্যেকটা ভালো কাজেই খুশি হন। আপনি যদি একটু হাসিমুখে কথা বলেন একজনের সাথে বন্ধুর সাথে, তিনি খুশি হন। সন্তানের সাথে হাসিমুখে কথা বললে তিনি খুশি হন। মা-বাবার সাথে একটু মমতা নিয়ে কথা বললে তিনি খুশি হন। উপাসনা-আরাধনা করলে তিনি খুশি হন। ওজিফা পড়লে তিনি খুশি হন। সূরা আয়াত পড়লেও তিনি খুশি হন।

কিন্তু বেশি খুশি হন কীসে?

ধরুন, আপনি একটা ব্যবসা করতে চাচ্ছেন। যে জিনিসের ব্যবসা করলে লাভ কম হবে সেটাতে বিনিয়োগ করবেন, না যেটাতে লাভ বেশি হবে মুনাফা বেশি হবে সেটাতে বিনিয়োগ করবেন? বলেন। লাভ যেটাতে বেশি হবে সেখানে আপনি বিনিয়োগ করবেন।

তাহলে বুঝতে হবে যে, লাভ যেখানে বেশি হচ্ছে সেখানে বিনিয়োগ করাটা বুদ্ধিমানের! তার বুদ্ধি বেশি। আর যেখানে লাভ কম সেখানে যে বিনিয়োগ করে তার বুদ্ধি বেশি না কম? কম।

আমরা যেহেতু চাই যে, আল্লাহ খুশি হন এমন কাজগুলো করতে, তো কোন কাজ করলে আল্লাহ খুশি হবেন- সেটা যদি আমরা বুঝতে পারি তাহলে আমরা সেই কাজটাই করব।

১. নিঃস্ব, বঞ্চিত ও অবহেলিতদের কল্যাণ করলে:

আবু দাউদ এবং তিরমিজি শরীফে হাদীস, হযরত আবু দারদা (রা) বর্ণীত যে, নবীজী (স) বলেছেন, নিঃস্ব, বঞ্চিত ও অবহেলিতদের কল্যাণ করার মধ্য দিয়ে তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করো।

অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি খুঁজবে কীভাবে? নিঃস্ব, বঞ্চিত ও অবহেলিতদের কল্যাণ করার মধ্য দিয়ে।

এবং অবহেলিত বঞ্চিত তাদের কল্যাণ করা তাদের সেবা করা যে মর্যাদা নবীজী (স) দিয়েছেন সেটা যদি আমরা জানি তাহলে আমাদের আরও ভালো লাগবে।

২. সেবামূলক কাজে আন্তরিকভাবে অংশগ্রহণ করলে:

আমাদের হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণীর ৩১৪ নম্বর হাদীস যে, ‘সেবামূলক কাজে আন্তরিকভাবে অংশগ্রহণকারীর মর্যাদা হচ্ছে আল্লাহর পথে জেহাদকারী ব্যক্তির সমান। কাজ থেকে ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত এ মর্যাদা বহাল থাকে’।

বোখারী এবং মুসলিম শরীফের আরেকটি হাদীস হচ্ছে, হযরত আবু হুরায়রা বর্ণিত, “বিধবা ও এতিম অসহায় মানুষের কল্যাণে নিরলস পরিশ্রমকারীর মর্যাদা আল্লাহর পথে জেহাদরত মুজাহিদের মতো। তার মর্যাদা সারারাত অবিরাম নামাজ আদায়কারী এবং সারাদিন রোজা পালনকারীর সমতুল্য।

অসহায় মানে হচ্ছে একজন প্রবীণ যিনি নিজে চলাফেরা করতে পারেন না তিনি অসহায়। একজন অসুস্থ যিনি নিজে কিছু করতে পারেন না তিনি অসহায়। এদের জন্যে যিনি কাজ করছেন তার মর্যাদা হচ্ছে সারাদিন রোজা রাখা একজন মানুষ যদি সারাদিন রোজা রেখে সারারাত ইবাদত করতেন নামাজ পড়তেন তাহলে যে সওয়াব পেতেন এই সওয়াবের সমান।

৩. অসুস্থ মানুষের সেবা করলে এবং ক্ষুধার্তকে খাবার দিলে:

মুসলিম শরীফের এই হাদীসে মহাবিচার দিবসের কথা বলা হয়েছে যে, মহাবিচার দিবসে মহামহিম আল্লাহ অনুযোগ করবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম। তুমি আমাকে দেখতে যাও নি।’

অভিযুক্ত তখন আরজ করবে, ‘প্রভু হে! তুমি তো মহাবিশ্বের প্রতিপালক। (তুমি কীভাবে অসুস্থ হতে পারো?) আমি কোথায় তোমাকে দেখতে যাব?’

আল্লাহ বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, অমুক অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাও নি। তুমি কি জানতে না যে, তাকে দেখতে গেলে সেখানেই আমাকে পেতে?’

আল্লাহ বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম। তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে খাবার দাও নি।’

অভিযুক্ত তখন আরজ করবে, ‘হে মহান অন্নদাতা! তুমি যেখানে সবার অন্নের ব্যবস্থা করো, সেখানে আমি কীভাবে তোমাকে খাওয়াব?’

আল্লাহ বলবেন, ‘অমুক তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল কিন্তু তুমি তাকে খাবার দাও নি। তুমি কি জানতে না যে, তখন যদি তুমি তাকে খাবার দিতে, তাহলে তার পুরস্কার আমার কাছ থেকে পেতে?’

আল্লাহ বলবেন, ‘হে আদমসন্তান! আমি তৃষ্ণার্ত ছিলাম। তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে পানি দাও নি।’ অভিযুক্ত তখন আরজ করবে, ‘হে মহান তৃষ্ণা নিবারণকারী! তুমি যেখানে মহাবিশ্বের সবার তৃষ্ণা নিবারণ করো, সেখানে আমি তোমাকে কীভাবে পানি পান করাব?’ আল্লাহ বলবেন, ‘অমুক তৃষ্ণার্ত তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, কিন্তু তুমি তাকে পানি পান করাও নি।

তুমি কি জানতে না যে, তখন তুমি তাকে পানি পান করালে এখন আমার কাছ থেকে এর পুরস্কার পেতে?”

তার মানে কী? আল্লাহ কিন্তু কী করবেন? জিজ্ঞেস করবেন না, তুমি অমুক ওজিফা এতবার পড়েছ কিনা?

কোনো নফল ইবাদতের কথা আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন না, এটা তুমি করেছ কি করো নাই! আচ্ছা অমুক সূরা এতবার পড়েছ কি পড়ো নাই। আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন না। কী জিজ্ঞেস করবেন?

মানুষের জন্যে কাজ পূজোরই শামিল- স্বামী বিবেকানন্দ!

আমরা স্বামী বিবেকানন্দের কথা জানি। স্বামীজী প্রায়ই বলতেন যে, জন্মালেই আমরা সবাই মানুষ হয়ে উঠি নাই। মানুষের ঘরে জন্মগ্রহণ করলেই মানুষ হয় না। মানুষ হয়ে উঠতে হয়। মানুষ হওয়ার জন্যে শিক্ষা দরকার। সত্য জ্ঞান দরকার। সত্য জ্ঞান জানলে সে মানুষ হয়।

এবং শিষ্যদের তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, মানুষের জন্যে কাজ পূজোরই শামিল। মানুষের জন্যে কাজ করা এবং পূজো করা একই কথা।

তিনি তার শিষ্যদের আশীর্বাদ দিয়েছিলেন যে, “মানুষের জন্যে কাজ করতে করতে তোরা শেষ হয়ে যা”!

এবং বঞ্চিত মানুষের উপকারে কাজ করাকে স্বামী বিবেকানন্দ কত গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন তার প্রমাণ হচ্ছে, ১৮৯৮ সালে এখন থেকে সোয়া শ’ বছর আগে কলকাতায় প্লেগ মহামারি হয়। আতঙ্কে কলকাতা জনশূন্য হয়ে যায়।

স্বামী-জী তার গুরুভাই এবং শিষ্য এদেরকে ডেকে পাঠালেন। বেলুর মঠ তখনও তৈরি হয় নি। মাত্র জমি কেনা হয়েছে।

তিনি সমবেত শিষ্যদের নির্দেশ দিলেন যে, মরণভয় তুচ্ছ করে প্লেগ রোগীর সেবা করতে হবে। এদের ওষুধ দিতে চিকিৎসা দিতে যদি মঠের জমি বিক্রি করতে হয়, তাও আমি বিক্রি করব।

‘প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হবো এরপর সমাজসেবা’- ভুল দৃষ্টিভঙ্গি!

আসলে আমরা অনেকে আছি যে আগে কল্পনা করি যে, প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হবো। তারপরে সমাজের জন্যে আমরা কাজ করব। আসলে এরা কখনো সমাজের জন্যে কাজ করতে পারে না।

যারা মনে করে যে, প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়ে সমাজের জন্যে কাজ করবে তারা নিজের জন্যে কাজ করেই শেষ করতে পারে না। তাদের প্রচুর অর্থ অর্থের ক্ষুধা কখনো পূরণ হয় না। তারা আসলে আরও বুভুক্ষু। তারা কখনো পারে না।

কাজ করতে হয় যা আছে তা দিয়ে…

আসলে কাজ করতে হয় যা আছে তা দিয়ে। যা আছে তা নিয়ে যখন একজন মানুষ কাজ করে তখন আল্লাহর রহমত তার ওপরে নাজিল হয়। এবং প্রভু তার ওপরে দয়া করেন এবং কাজগুলো সুন্দর হয়।

মাদার তেরেসা ও এক বিধবা!

মাদার তেরেসার একটা কথা আছে, “তুমি যদি ১০০ জন ক্ষুধার্তকে খাওয়াতে না পারো, অন্তত একজনকে খাওয়াও”।

তো মাদার তেরেসার বই- Where There is Love, There is God. ‘যেখানে মমতা আছে, গড সেখানে থাকেন’।

এই বইয়ে তিনি একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন।

একদিন একজন মানুষ আমাদের আশ্রমে এলো। এসে বলল, মাদার! ‘একটা হিন্দু পরিবার রয়েছে, আট সন্তান তার। তারা এখন অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। তাদের জন্যে কিছু করুন’।

তো মাদার তেরেসা কিছু চাল নিলেন। চাল নিয়ে সেই বাড়িতে গেলেন। সেই বিধবাকে চালগুলো দিলেন। বিধবার চোখ ছলছল করে উঠল। কারণ আসলে ক্ষুধার্ত সন্তান যাদের থাকে সেই সময়ে যদি কেউ খাবার নিয়ে হাজির হয় তখন কৃতজ্ঞতাটা খুব ভেতর থেকে আসে।

মাদার তেরেসা বলছেন যে, “আমি খেয়াল করলাম, চাল পাওয়ার পরেই সে চালটাকে দু’ভাগ করে ফেলল। এক ভাগ রেখে আরেক ভাগ নিয়ে বেরিয়ে গেল। আমার কৌতূহল হলো, অপেক্ষা করলাম যে, ঘটনাটা কী? কিছুক্ষণ পরে সে আবার ফিরে এলো।

জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কোথায় গিয়েছিলে? সে বলল যে, আমার প্রতিবেশী সেও ক্ষুধার্ত, তার ঘরেও খাবার নাই। তাকে চাল দিতে গিয়েছিলাম।

তো মাদার তেরেসা বলছেন, আমি বিস্মিত হলাম। আমাকে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি বিস্মিত করলো যে, সে চাল দিয়েছে এটা নয়! সে জানে যে, তার ঘরে খাবার নাই যে, তারাও ক্ষুধার্ত। এবং জানার পরে তার ভেতরে যে সমবেদনা যে, না আমি যেহেতু পেয়েছি যা পেয়েছি এটাকেই আমি ভাগ করে আমার প্রতিবেশীকে দেই।

এবং এই যে মমতা এই মমতা বিস্মিত করেছে। এবং যাকে তিনি চাল দিয়ে এলেন সেই প্রতিবেশীর পরিবার হিন্দু ছিল না তারা মুসলমান ছিল”।

তো আসলে ক্ষুধার্তের অসহায় বঞ্চিতের কোনো জাত নাই, পাত নাই। যে জাত হোক যে পাত হোক যে ধর্ম হোক যে বর্ণ হোক, যারা ভালো মানুষ যারা সত্যিকারের ইমাম যারা সত্যিকারের স্বামী যারা সত্যিকারের মাদার তারা সবসময় মানুষের সেবা করেছেন। এবং মানুষের সেবা করাটাকেই তারা স্রষ্টার সেবা করা হিসেবে গণ্য করেছেন।

তেরেসার উপলব্ধি এবং হাদীস শরীফের বাণীর সাদৃশ্য!

মাদার তেরেসা তার এই বইয়ের একটা কথা খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ! জীবন শেষে আমরা কতগুলো ডিপ্লোমা অর্জন করেছি কতগুলো ডিগ্রি অর্জন করেছি কত অর্থ কামাই করেছি কত পেশাগত কাজ করেছি কত ব্যবসায়িক কাজ করেছি- এটা দিয়ে বিচার করা হবে না।

আপনি দেখেন আমরা প্রথম যে হাদিসের কথা উল্লেখ করেছিলাম, হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণীর ৩০৮ নম্বর হাদীস। মহাবিচার দিবসে আল্লাহ অনুযোগ করবেন, হে আদম সন্তান আমি অসুস্থ ছিলাম, এই হাদীসের যে শিক্ষা আর মাদার তেরেসার যে অনুভূতি, মিল আছে না নাই? হ্যাঁ? একই শিক্ষা।

মহাবিচার দিবস এবং আল্লাহর প্রশ্ন!

আসলে যুগে যুগে কালে কালে যত ধর্ম এসছে, যত ধর্মীয় পুরুষ এসছেন, মহামতি বুদ্ধ বলেন, শ্রীকৃষ্ণ বলেন, শ্রীরাম বলেন, হযরত ইব্রাহিম বলেন, ঈসা বলেন, যিশু বলেন, মুসা বলেন, নবীজী (স) বলেন যত মুনি ঋষি এসছেন যত অলি বুজুর্গ এসছেন সবার শিক্ষা কিন্তু ঐ এক শিক্ষা।

এবং তারা ঘরে বসে নীরবে জিকির করার চেয়ে ওজিফা পড়ার চেয়ে তারা মানুষের কল্যাণ করাটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং সেটাকেই সওয়াবের কাজ মনে করেছেন।

কারণ তারা জানতেন যে, মহাবিচার দিবসে আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন না যে, এই ওজিফা এতবার পড়েছ কি না! এই সুরা এতবার পড়েছ কি না!

জিজ্ঞেস করবেন যে, অসুস্থ ছিলাম, আমার সেবা করেছ কিনা? ক্ষুধার্ত ছিলাম, আমাকে অন্ন দিয়েছ কিনা? তৃষিত ছিলাম আমাকে পানি দিয়েছ কিনা? বস্ত্রহীন ছিলাম আমাকে বস্ত্র দিয়েছ কিনা?

তো আসলে সমস্ত ধর্মীয় পুরুষরা সবসময় এটাই করেছেন।

দুর্গতের অভাব মোচনে সহযোগিতা করা, ১০ বছর এতেকাফ করার চেয়েও উত্তম।
আমাদের সবচেয়ে বড় হাদীসবেত্তা পাঁচজন। পাঁচজন হাদীসবেত্তার একজন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস। তিনি ইবনে আব্বাস নামেই পরিচিত।

তিনি মসজিদে নববীতে এতেকাফ করছিলেন। রোজার মাসের শেষ ১০ দিন মৌন থেকে মসজিদে থেকে আল্লাহর ইবাদত করার নাম হচ্ছে এতেকাফ।

তো এর মধ্যে এক ব্যক্তি এসে তাকে সালাম করল। ইবনে আব্বাস তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে তো খুব চিন্তিত দেখছি।

সে বলল যে, হ্যাঁ, অমুকের কাছ থেকে আমি ঋণ করেছিলাম। কিন্তু ঋণশোধ করতে পারছি না। ঋণের জন্যে চাপ দিচ্ছে কিন্তু ঋণশোধ করার সাধ্য আমার নাই।

ইবনে আব্বাস তাকে বললেন যে, আমি কি সেই ব্যক্তির সঙ্গে তোমার ব্যাপারে কিছু বলব? কারণ যেহেতু উনি বড় হাদীসবেত্তা, মসজিদে নববীর হাদীসবেত্তা, অ্যা উনি বললে সে হয়তো কিছু সময় কী করল? আচ্ছা তুমি পরে দাও বলবে।

তো এই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি বলল, যদি আপনি ভালো মনে করেন তাহলে বলুন।

ইবনে আব্বাস তখনই জুতা পায়ে দিয়ে মসজিদ থেকে বের হলেন। তার সাথে দেখা করতে যে লোক এলো, সে বলল, আপনি যে এতেকাফে ছিলেন তা কি ভুলে গেছেন?

তিনি বললেন না, ভুলি নি। কিন্তু নবীজীকে (স) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজনে কোথাও যাবে, অর্থাৎ তার দুর্গতি দূর করার জন্যে, তার বিপদ মোচন করার জন্যে কোথাও যাবে তার জন্যে এই কাজটা ১০ বছরের এতেকাফের চেয়ে উত্তম!

অর্থাৎ দুর্গত মানুষের দুস্থ মানুষের অভাব মোচন করা, তার দুর্গতি দূর করা, তার সমস্যা দূর করার জন্যে যে কাজটা, এই কাজটা ১০ বছর এতেকাফ করার চেয়েও উত্তম।

এবং এই কথা যখন ইবনে আব্বাস বলছিলেন, তখন তার চোখ ছলছল করে উঠছিল।


নিরন্ন মানুষ অবহেলিত বঞ্চিত মানুষের সেবা করার চেয়ে উত্তম কাজ আর কিছু নাই। এবং স্রষ্টা যখন জিজ্ঞেস করবেন, এটাই জিজ্ঞেস করবেন যে, তুমি কী করেছ? 

বৃদ্ধাশ্রমে তাকে যখন খাইয়ে দেয়া হচ্ছে তাকে যখন গোসল করিয়ে দেয়া হচ্ছে, তার চেহারার মধ্যে কী আনন্দ চেহারার মধ্যে কী তৃপ্তি! এই কাজ যারা করছেন তারা আসলে এতেকাফ করলে যে সওয়াব হতো তার চেয়েও বহুগুণ সওয়াব তারা পাচ্ছেন।

যে কারণে নবীজী (স) বলেছেন যে, যিনি অর্থ দান করছেন যে দাতা যিনি সেই দান সংগ্রহের জন্যে শ্রম দিচ্ছেন সময় ব্যয় করছেন যোগাযোগ করছেন এবং যিনি সেই দানটাকে কাজে লাগাচ্ছেন অর্থাৎ যারা এই দান থেকে উপকৃত হওয়ার তাদের উপকার করছেন, অর্থাৎ বিতরণ করছেন যারা সেবা দিচ্ছেন- সবাই দাতার সমান সওয়াবের অধিকারী হবেন, পুণ্যের অধিকারী হবেন।

অর্থাৎ যখন দান সংগ্রহ দান করব, যখন যাচ্ছি আন্তরিকভাবে যে, আমি এই কাজটা কেন করছি? এই কাজটা করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন, প্রভু সন্তুষ্ট হবেন। আমি কেন দিচ্ছি? আমি দিলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন, আল্লাহ খুশি হবেন।

আমি কেন এই প্রবীণকে গোসল করাচ্ছি? যে গোসল করালে আল্লাহ খুশি হবেন। আমি এই ক্ষুধার্তের জন্যে খাবার রান্না করে কেন দিচ্ছি? যে এই খাবার যদি আমি তাকে খাওয়াই অন্তর থেকে খাওয়াই পরিবেশন করি তাহলে আল্লাহ খুশি হবেন।

অসুস্থের সেবা আমি যদি অন্তর থেকে করি যে এই নিয়ত নিয়ে যে আল্লাহ খুশি হবেন স্রষ্টা খুশি হবেন, একটা শিশুর যত্ন আমি যদি এই নিয়ত নিয়ে দেই যে, আমি এই কাজটা করলে আল্লাহ খুশি হবেন তাহলে আমাদের এই কাজের উসিলায় শুধু পরকালে যে আমরাই পরিত্রাণ পাব তা না।

আমাদের উসিলায় এই কাজের সাথে যারা বিন্দুমাত্র জড়িত রয়েছে কোনো না কোনোভাবে জড়িত রয়েছে, এমনকি আমাদের আত্মীয়স্বজন তাদেরকেও প্রভু ক্ষমা করতে পারেন, আমাদের সবাইকে ক্ষমা করতে পারেন এই কাজের ওসিলায়।

এবং আমরা যাতে যখনই কারও কোনো কাজ করি, যার সেবা করি, যার যত্ন করি, যার উপকার করি, যার কল্যাণ করি দেখানোর জন্যে যেন না করি। সবসময় যেন নিয়ত থাকে যে আমি এই কাজটা করছি কেন? প্রভু সন্তুষ্ট হবেন। প্রভুর সন্তুষ্টির জন্যে আমি এই কাজ করছি। তাহলে আমরাও একইভাবে ইহকাল এবং পরকালে পরিত্রাণ পাব।

এসবি/