গোল্ড রিফাইনারিতে ১০ বছরের কর অবকাশ চান ব্যবসায়ীরা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:০৮ পিএম, ৫ এপ্রিল ২০২৩ বুধবার
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে জুয়েলারি পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব এবং দেশের স্বর্ণশিল্প বিকাশে গোল্ড রিফাইনারি উদ্যোক্তাদের জন্য ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা চেয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।
জুয়েলারি শিল্পের পণ্য ও যন্ত্রপাতি আমদানিতে বর্তমানে বিদ্যমান শুল্ক রয়েছে ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ। এটি অনেক বেশি, এতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ থেকে কমিয়ে ব্যবসাবান্ধব করার প্রস্তাব করেছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে বাজুস কার্যালয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আয়োজিত এক প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাজুস সভাপতি ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর, সংগঠনের সহসভাপতি মো. রিপনুল হাসান, সহসম্পাদক সমিত ঘোষ অপু, স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের সদস্যসচিব পবন কুমার আগরওয়াল প্রমুখ।
বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেলের সঞ্চালনায় এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাজুস সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে দেশের স্বর্ণ শিল্প বিকাশে গোল্ড রিফাইনারি উদ্যোক্তাদের জন্য ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা চান ব্যবসায়রিা। পাশাপাশি এই শিল্পে নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণে কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ব্যবসাবান্ধব করার প্রস্তাব করেন তারা।
অপরিশোধিত আকরিক স্বর্ণ আমদানিতে আরোপিত সম্পূরক শুল্ক (সিডি) ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শর্তসাপেক্ষে ১ শতাংশ, আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের শুল্কহার ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে বাজুস।
লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববাজারে সোনার চাহিদা চার হাজার ৭৪০ টন। এর মধ্যে সোনার অলংকারের চাহিদা দুই হাজার ১৮৯.৮ টন। বাংলাদেশে সোনার বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৪০ টন। বৈধভাবে সোনার চাহিদা পূরণে বড় বাধা কাঁচামালের উচ্চমূল্য, অতিরিক্ত উৎপাদন ব্যয়, শিল্প সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতির উচ্চ আমদানি শুল্ক। দক্ষিণ এশিয়ার
দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সর্বপ্রথম সোনা পরিশোধনাগার স্থাপন করতে যাচ্ছে।
আর কিছুদিন পর বিশ্ববাজারে রপ্তানি হবে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ সংবলিত সোনার বার। স্বর্ণশিল্পকে এগিয়ে নিতে যা আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে বড় ভূমিকা রাখবে। কিন্তু পরিশোধনাগারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি শুল্ককর ৩০-৬০ শতাংশ। অন্য দেশের তুলনায় যা অনেক বেশি।
এ কারণে প্রাথমিক উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ৫ শতাংশ উচ্চ ভ্যাটহার ও অতিরিক্ত উৎপাদন খরচের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বাংলাদেশে দামের পার্থক্য হচ্ছে। ক্রেতা হারাচ্ছেন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্ষুদ্র জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা।
এই নেতিবাচক প্রভাবের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতিনির্ধারকদের দায়ী করেছেন সোনা ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, অবাস্তব নীতি প্রণয়ন, শুল্ক নির্ধারণে একগুঁয়েমি, ভ্যাট ও আয়কর নিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি এবং আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমস কর্তৃক ব্যবসারীদের ভোগান্তির কারণে সরকার প্রত্যাশিত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করতে হলে জুয়েলারি খাতে আরোপিত আয়কর ও ভ্যাটহার কমানো এবং আর্থিক প্রণোদনা দিতে হবে। এতে সরকারের যেমন বৈদেশিক আয় আসবে, বাড়বে রাজস্ব আয়ও।
আগামী জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ১২টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে বাজুস। সেগুলো হলো-
বর্তমানে জুয়েলারি ব্যবসার ক্ষেত্রে সোনা, সোনার অলংকার, রুপা বা রুপার অলংকার বিক্রির ক্ষেত্রে আরোপিত ভ্যাটহার ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা। ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) যত দ্রুত সম্ভব নিবন্ধন করা সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে বিতরণ করা। বর্তমানে অপরিশোধিত আকরিক স্বর্ণের ক্ষেত্রে আরোপিত সিডি ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আমদানি শুল্ক শর্তসাপেক্ষে ১ শতাংশ নির্ধারণ করা।
আংশিক পরিশোধিত স্বর্ণের ক্ষেত্রে সিডি ১০ শতাংশের পরিবর্তে আইআরসিধারী এবং ভ্যাট কমপ্লায়েন্ট শিল্পের জন্য শুল্কহার ৫ শতাংশ করা। হীরা শিল্পের বিকাশে কাটিং ও প্রক্রিয়াকরণে প্রয়োজনীয় আমদানি করা রাফ ডায়মন্ডে সহনশীল শুল্কহার নির্ধারণ করা।
বৈধ পথে মসৃণ হীরা আমদানিতে উৎসাহিত করতে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানকে ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করা শর্তে প্রস্তাবিত শুল্কহার নির্ধারণ করা। আয়কর আইনে ৪৬-(বিধি) (২) ধারার অধীনে গোল্ড রিফাইনারি বা সোনা পরিশোধনাগার শিল্পে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ দেওয়া।
সোনার অলংকার প্রস্তুত করার জন্য আমদানি করা কাঁচামাল ও মেশিনারিজের ক্ষেত্রে সকল প্রকার শুল্ককর অব্যাহতি দেওয়াসহ ১০ বছরের কর অবকাশ দেওয়া। বৈধভাবে স্বর্ণের বার, স্বর্ণালংকার, স্বর্ণের কয়েন রপ্তানি উৎসাহিত করতে অন্তত ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করা শর্তে, রপ্তানিকারকদের ৫০ শতাংশ হারে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া।
স্বর্ণশিল্পের বিকাশে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে এইচএস কোডভিত্তিক ‘অস্বাভাবিক শুল্কহার’ কমিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে শুল্কহার সমন্বয় করতে হবে। চোরাচালান প্রতিরোধে কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উদ্ধার করা স্বর্ণের মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশ সংস্থাগুলোর সদস্যদের পুরস্কার হিসেবে দেওয়া।
ব্যাগেজ রুলে স্বর্ণের বার ও অলংকার আনার সুবিধাকে অপব্যবহার করায় ডলার সংকট, চোরাচালান ও মানি লন্ডারিংয়ে কী প্রভাব পড়ছে, তা নিরূপণে বাজুসকে যুক্ত করে যৌথ সমীক্ষা পরিচালনা করার প্রস্তাব।
এএইচ