অস্তিত্ব সংকটে চিনি শিল্প, উৎপাদন কমেছে ৭৭ শতাংশ (ভিডিও)
মুশফিকা নাজনীন, একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:১৩ পিএম, ৯ এপ্রিল ২০২৩ রবিবার
অস্তিত্ব সংকটে দেশের চিনি শিল্প। গত ১০ বছরে সরকারি মিলগুলোতে উৎপাদন কমেছে প্রায় ৭৭ শতাংশ। আর এসময়ে ৭৪ ভাগ কমেছে আখের আবাদ। দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও দূরদর্শিতার অভাবকেই দায়ী করছেন চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান। বলছেন, আখের জাত উদ্ভাবনে গবেষণা প্রয়োজন।
দেশে বছরে চিনির চাহিদা প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে চালু থাকা ৯টি সরকারি চিনিকল চলতি মৌসুমে উৎপাদন করেছে মাত্র ২১ হাজার ৩১৩ মেট্রিক টন। এর ফলে বাৎসরিক চিনির চাহিদার ৯৮ ভাগই এখন আমদানির মাধ্যমে পূরণ করছে বেসরকারি খাত।
অন্যদিকে, আখের অভাব ও ব্যাপক লোকসানের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে ৬টি সরকারি চিনিকলে। গত এক দশকে চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের জমিতে আখ চাষ কমেছে প্রায় ৭৪ শতাংশ।
চাষীরা বলছেন, অন্য ফসলের তুলনায় আখ চাষে মুনাফা অনেক কম হয়। এছাড়া মিল কর্তৃপক্ষ সময়মতো আখের মূল্য পরিশোধ করে না। পাওয়া যায় না সরকারি অন্যান্য প্রণোদনাও।
তারা জানান, আখে তেমন একটা লাভ নাই। এবারের যে দাম সে হিসেবে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম দাম হলো আখের।
কারো কারো মতে, চিনিকলের চাইতে গুড় উৎপাদনকারিদের আখ দিলে বেশি দাম পাওয়া যায়। মিলগুলো মণপ্রতি আখের দাম ১৮০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ টাকা করলে চাষ বাড়বে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
চাষিরা জানান, এখন পাচ্ছি ১৮০ টাকা, সামনে এটা বাড়বে বলছে মিল কর্তৃপক্ষ। ২৫০ টাকা রেট যদি দেওয়া হয় তাহলে আমরা চাষে ফিরে যাবো। তখন আমাদের পরতা হবে।
চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন জানায়, দেশে চিনি গবেষণাগার থাকলেও আখের উন্নত বীজ নিয়ে কোনো গবেষণাই হচ্ছে না। ফলে পুরোনো বীজেই দিয়েই কোনোমতে চলছে আখের চাষাবাদ।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান অপু বলেন, “একটা জাত যখন ১০-১৫ বছর ধরে চাষাবাদ হয় তখন তার উৎপাদন কমে আসে। সেই ক্ষেত্রে আখের কোনো নতুন জাত উদ্ভাবন হয়নি, যেটা দ্বারা কৃষকরা লাভবান হবে।”
চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন বলেন, একরপ্রতি আখের উৎপাদন বাড়ানো গেলে চিনি শিল্পকে লাভজনক করা সম্ভব।
মো. আরিফুর রহমান অপু বলেন, “এক একর জমিতে ভারতে হচ্ছে ৮০-১০০ টন, ক্যারিবিয়ান কান্ট্রি ফিজিতে হচ্ছে ১শ’ টনের উপর। আমার দেশের চাষি এক একর জমিতে আখের উৎপাদন পাচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টন। আমাদের চিনি কর্পোরেশন পৃথিবীতে সর্বোচ্চ মূল্যে আখ কিনছে কৃষকের কাছ থেকে। তারপরও কৃষক আখ উৎপাদন করতে চাচ্ছেনা, তার লোকসান হচ্ছে।”
দেশে বছরে গড়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার একর জমিতে আখ চাষ হয়। আর গত অর্থবছরে চিনিকলগুলো লোকসান দিয়েছে ৬২৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
এএইচ