ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১

সেচের পানি না পেয়ে আদিবাসী কৃষকের আত্মহত্যার চেষ্টা

রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০২:২৬ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০২৩ মঙ্গলবার

হাসপাতালে আদিবাসী কৃষক মুকুল সরণকে দেখতে যান জেলা প্রশাসক

হাসপাতালে আদিবাসী কৃষক মুকুল সরণকে দেখতে যান জেলা প্রশাসক

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বোরো ধান খেতে সেচের পানি না পেয়ে আবারও এক আদিবাসী কৃষক কিটনাশক পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। 

খবর পেয়ে সোমবার রাতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ হাসপাতালে যান। তিনি কৃষক মুকুল সরণের সঙ্গে কথা বলেন এবং চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। 

জেলা প্রশাসক বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুকুল সরণের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেন এ ঘটনা ঘটলো তা জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটির প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সেচ সেবা নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

এর আগে রোববার দুপুরে কিটনাশক খেলে উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামের আদিবাসী কৃষক মুকুল সরেনকে (৩৫) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি হাসপাতালের ১৪ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার লিভার ওয়াস করা হয়েছে। চিকিৎসা চলছে, তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত। 

মুকুল সরেন জানান, সেচের পানির জন্য তিনি এক সপ্তাহ ধরে ঘুরছেন। কিন্তু নলকূপ অপারেটর হাসেম আলী বাবু তার জমিতে পানি দিচ্ছিলেন না। রোববার দুপুরে তিনি আবার পানির জন্য যান। তখন বাবু তাকে এক বোতল কিটনাশক দেন এবং সেটা বাবুর জমিতেই দিয়ে আসতে বলেন। 

এ সময় মুকুল বলেন, পানি না দিলে তিনি এই বিষ খাবেন। তারপরও তার জমিতে পানি দেয়া হয়নি। তখন তিনি ওই কিটনাশক পান করেন। পরে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। 

মুকুলের বিষপানের বিষয়ে জানতে চাইলে নলকূপের অপারেটর হাসেম আলী বাবু বলেন, “কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হয়েছে। তখন কেউ পানির জন্য আসেননি। এখন সবাই এক সঙ্গে আসছেন। সবাইকে তো এক সঙ্গে পানি দিতে পারবো না।”

দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, ‘মুকুল তার জমিতে পানি পাচ্ছেন না বলে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছিলেন। একবার এক ইউপি সদস্যকে তার জমি দেখতে পাঠানো হয়। তিনি দেখে এসে বলেছিলেন যে, জমিতে কয়েকদিন পরে পানি দিলেও চলবে।’

বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, ‘গত বছরের ঘটনার পর ওই গভীর নলকূপের অপারেটরকে বাদ দেয়া হয়। আবার কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটল, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, গভীর নলকূপ থেকে পানি না পেয়ে গত বছর বিষপান করে দুই কৃষক আত্মহত্যা করলে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে তৎকালীন গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচণার মামলা করা হয়। এরপর সাখাওয়াত গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন, এখন তিনি জামিনে। ওই ঘটনার পর সাখাওয়াতকে বাদ দিয়ে নতুন করে হাসেম আলীকে অপারেটর পদে নিয়োগ দেয় বিএমডিএ।

এএইচ