প্রাক-বাজেট সংলাপ: করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকার প্রস্তাব
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৪:০৯ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০২৩ রবিবার
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট যাতে সাধারণ মানুষের ওপরে অতিরিক্ত কোনো বোঝা এবং বৈষম্য বৃদ্ধি না করে সে লক্ষ্যে বর্তমান পরিস্থিতিতে করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা এবং সার, জ্বালানি ও ভোগ্যপণ্যের ওপর ভ্যাট-শুল্ক কমানোর আহ্বান জানিয়েছে ডেমোক্রেটিক বাজেট মুভমেন্ট-ডিবিএম। গতকাল শনিবার ঢাকার মোহাম্মদপুরে আয়োজিত ‘মূল্যস্ফীতি, বৈষম্য ও অপচয় রোধে করণীয়’বিষয়ক এক সংলাপে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনটি এ আহ্বান জানায়।
ডিবিএমের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা বর্তমান পরিস্থিতি উল্লেখ করে বলেন, সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে নেই। করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অভিঘাত সামাল দিতে সাধারণ মানুষ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু আয়ের তুলনায় ব্যয়ের বৃদ্ধি এত বেশি যে তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন চালিয়ে যেতে পারছে না। অন্যদিকে সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রকল্পের অপচয় রোধ করতে না পারায় প্রায় সব প্রকল্পের ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। এমন অবস্থাকে বিবেচনায় নিয়ে ‘অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করে কৃচ্ছ্র সাধনের বাজেট প্রণয়ন করার আহ্বান জানান তিনি।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে উল্লেখ করে সংগঠনটির সহ-সভাপ্রধান আমানুর রহমান বলেন, সরকার জনগণের কাছ থেকেই আয় করবে আবার সে আয় জনগণের কাছে যাতে যথাযথভাবে ফিরে আসে সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। কিন্তু জনগণ যদি বুঝতে পারে তার প্রদত্ত অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হচ্ছে না তা হলে তারা অর্থ প্রদান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, এটাই স্বাভাবিক।
খোন্দকার রেবেকা সানইয়াত, নগর দরিদ্রদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। তিনি বলেন, সরকার নগর দারিদ্র্য দূর করার বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী নয়। কিন্তু সরকার এটা বিবেচনা করে না যে কেন মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসে। মানুষ চায় একটা নিশ্চিত জীবন, যেখানেই এর সুযোগ আছে মানুষ সেখানেই যাবে।
বাজেটে শ্রমজীবীর দাবির বিষয়ে উল্লেখ করে ডিবিএমের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, সরকার সবার জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এ ব্যবস্থায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে বাজেটে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে।
শ্রম, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, জেন্ডারসহ বিভিন্ন থিমেটিক গ্রুপের নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা সংলাপে অংশগ্রহণ করে করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখে উন্নীত করা, আগামী অর্থবছরের মধ্যে কর-জিডিপির অনুপাত বিদ্যমান ৯ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, যা বৈষম্য দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে, প্রাথমিক জ্বালানি আমদানিতে বিদ্যমান ভ্যাট-শুল্ক অর্ধেকে নামিয়ে এনে জ্বালানি-বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা, সারের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বাতিল, বর্তমান বাস্তবতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষককে আরও বীজ-সার-ডিজেল-বিদ্যুতে বর্ধিত সহায়তা প্রদান, অনাবাদি জমি না রেখে তাতে চাষ করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিশেষ করে খাদ্য ও নগদ সহায়তার পরিমাণ (টাকা) দ্বিগুণ ও পরিধি বাড়ানো, জরুরি অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় (যেমন- চাল, আটা, তেল, দুধ ইত্যাদি) দ্রব্যের ওপর থেকে সব ধরনের ভ্যাট, শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার, প্রাথমিকভাবে হতদরিদ্র পরিবারগুলোর সঠিক তালিকা প্রস্তুত করে তাদের রেশন কার্ডের আওতায় নিয়ে আসা, স্বাস্থ্য খাতে ‘আউট অব পকেট’ ব্যয় বর্তমানের ৬৮ শতাংশ থেকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বরাদ্দ করার দাবিসহ সব ধরনের অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় (জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান, অপ্রয়োজনীয় বিদেশযাত্রা ইত্যাদি) বন্ধ করার আহ্বান জানান।
ডিবিএম আয়োজিত এই সংলাপে সাংবাদিক সালাউদ্দিন লাভলু, পিএমএইচের আমানুর রসুল এবং বিলসের ডিরেক্টর নাজমা ইয়াসমিনসহ জেলা পর্যায়ের প্রতিনিধি, পেশাজীবী, সাংবাদিক ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অনলাইন ও অফলাইনে অংশগ্রহণ করেন। ডিবিএম বাজেট প্রক্রিয়ার সব স্তরে জনগণের অংশগ্রহণ নিয়ে কাজ করে।
এমএম/