ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা
কাজী ইফতেখারুল আলম
প্রকাশিত : ০৮:১৬ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২৩ সোমবার | আপডেট: ১১:৩৮ পিএম, ২ আগস্ট ২০২৩ বুধবার
বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হওয়ার আটদিন পর গত সপ্তাহের বুধবার দুপুরে সেখানে চৌকি বসানোর সুযোগ পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খোলা আকাশের নিচে প্রখর রোদের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশায় শূন্য থেকে আবারও ব্যবসা শুরু করেছেন তারা।
সব কিছু হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আহাজারিতে বঙ্গবাজারের যে দোকানিরা বাতাস ভারী করছেন, আজ তারাই শোককে শক্তিতে পরিণত করে ব্যবসায়ের নব সূচনা করেছেন।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের এক কোটি টাকা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। একই সাথে আগুনে পুড়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনে ২ কোটি টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষণা দেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
বঙ্গবাজারে ঈদের আগেই ব্যবসায়ীরা তাদের ক্ষয়ক্ষতি যাতে কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারেন, সে জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পুরো মাঠজুড়ে বসানো হয়েছে ইট। ওপরে দেয়া হয়েছে বালি। আশেপাশের ধ্বংসস্তূপ ভেঙে পরিষ্কার করা হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বঙ্গবাজারের ৮০% ব্যবসায়ীরা এখনো খোলা মাঠে ব্যবসা শুরু করেননি। তবে ২০% ব্যবসায়ী নতুন স্বপ্ন পূরণের প্রয়াসে ধার-দেনা করেও জীবিকার তাগিদে চৌকি ও সামিয়ানা পেতে ব্যবসা শুরু করেছেন।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী বলেন, ‘রমজান মাসে ভয়াবহ তাবদাহে লোকসান পুষিয়ে নেয়ার জন্য নিজস্ব অর্থায়নে ৫ ফুট দৈর্ঘ্যের জায়গায় চৌকি পেতে ব্যবসায় শুরু করেছি। তবে অগ্নিকাণ্ডের পর ক্রেতাদের তেমন উপস্থিতি নেই।’
উপস্থিত আরেকজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডে লাখ লাখ টাকার পণ্য পুড়ে গেছে। শেষ সম্বলটুকুন নিয়ে আবারও ব্যবসা শুরু করার চেষ্টা করেছি।’
ক্ষতিগ্রস্থ অন্য ব্যবসায়ী বলেন, ‘পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে একবুক আশা নিয়ে আবারও ব্যবসা শুরু করেছি। সকাল থেকে তেমন বিক্রি হয়নি। সন্ধ্যার পর কিছুটা বিক্রি হবে বলে আশা রাখি।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে বঙ্গবাজারের যেসব ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে তারা রাস্তা ও ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন।
গত শনিবার (৮ এপ্রিল) সকাল থেকে প্রায় ৮০০ ব্যবসায়ী তাদের মজুত প্রদর্শন করেছেন। তারা বঙ্গবাজার মার্কেটের দক্ষিণ পাশে ফ্লাইওভারের নিচে তাদের অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন।
গত মঙ্গলবারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের হাত থেকে বাঁচাতে পেরেছেন এমন কাপড় নিয়ে বসেছেন অনেক ব্যবসায়ী। দোকানের আশেপাশে ভিড় থাকলেও বিক্রি বাড়েনি।
উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল ভোর ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় সেনা, নৌ, বিজিবি ও বিমানবাহিনীর দলও। সবার চেষ্টায় বঙ্গবাজারে লাগা ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর। আর পুরোপুরি আগুন নেভে ৭৫ ঘণ্টা পর অর্থাৎ ৭ এপ্রিল সকাল ৯টায়।
বঙ্গবাজারের আগুনের ঘটনায় আনুমানিক দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।
কেআই//